ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,কলকাতা: কয়েকদিন পরই বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ আসছে। তার আগমন উপলক্ষে ‘ভারতীয় সংস্কৃতি ন্যাস’ আয়োজিত ও ‘সংস্কার ভারতী পশ্চিমবঙ্গ’ নিবেদিত ‘নববর্ষ আবাহন উৎসব’ ও ‘সাংস্কৃতিক দেওয়ালপঞ্জী লোকার্পণ (বঙ্গাব্দ ১৪৩২)’-এর আয়োজিত হয় কলকাতার ন্যাশনাল লাইব্রেরীর ‘শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ভাষা ভবন’ হলে।

শুরুতেই গৌড়াধিপতি মহারাজা শশাঙ্ক প্রবর্তিত বাঙ্গালীর নববর্ষ (বঙ্গাব্দ ১৪৩২) আবাহন উৎসব উপলক্ষে ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’র আয়োজন করা হয়। ধ্বজ, মঙ্গলঘট, মৃদঙ্গ, শঙ্খ, করতাল, মন্দিরা, চামর, গৌড়ীয়নৃত্য ও কীর্তন সহযোগে শোভাযাত্রায় বাঙ্গালীর নববর্ষ উদ্যাপন করা হয়। এই অনুষ্ঠানে ১০৭ জন সমবেত ভাবে সংস্কার ভারতীর ভাব সঙ্গীত ‘সাধয়তী সংস্কার ভারতী’ ও দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের ‘ধন ধান্য পুষ্পে ভরা’ গান দুটি পরিবেশন করেন।
তারপর নববর্ষ আবাহন উৎসবের আনুষ্ঠানিক সূচনা হয় প্রদীপ জ্বালিয়ে। প্রদীপ প্রজ্বলন করেন – ডঃ সরূপ প্রসাদ ঘোষ(অধিকর্তা,MAKAIAS), অধ্যাপক রাধারমণ চক্রবর্তী (চেয়ারম্যান, এক্সিকিউটিভ কাউন্সিল, (MAKAIAS), আশিস গিরি (অধিকর্তা,EZCC), পন্ডিত শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায় (উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত শিল্পী), নীলাঞ্জনা রায় (সম্পাদিকা, কেন্দ্রীয় সমিতি, সংস্কার ভারতী), বিপ্লব রায় (সমাজসেবী), ডঃ জয়ন্ত রায়চৌধুরী (বিশিষ্ট সমাজসেবী) ও সুভাষ ভট্টাচার্য (অছি, ভারতীয় সংস্কৃতি ন্যাস)।
মহারাজা শশাঙ্কের ঐতিহাসিক গুরুত্ব ও বঙ্গাব্দের প্রবর্তক মহারাজা শশাঙ্ক নিয়ে আলোচনা করা হয়। রাধারমন বলেন, মহারাজা শশাঙ্ক সম্পর্কে ইতিহাসে অনেক জায়গায় বলা হয়েছে যে, তিনি বৌদ্ধদের উপর অত্যাচার করেছিলেন – একথা সার্বিক সত্য নয়। আশিস বলেন, শশাঙ্ককে বাঙালি তার ‘আইডল’ হিসাবে দেখতে পারে। আজ থেকে ১৪৩২ বছর আগে মহারাজা শশাঙ্ক বাঙালির জন্য যে আদর্শ স্থাপন করেছিলেন তা অনুসরণ যোগ্য। আমাদের প্রতিবেশী দেশ যেভাবে আরবি সংস্কৃতি মিশ্রিত বাঙালি সত্ত্বাকে দেখাতে চাইছে তা আদতে আমাদের বাঙালি সংস্কৃতি নয়। আমাদের সংস্কৃতি হল মহারাজা শশাঙ্কের দেখানো হিন্দু বাঙালির সংস্কৃতি। আর তাকেই আজ তুলে এনেছে সংস্কার ভারতী। স্বরূপ বলেন, ’বাঙালির ইতিহাসকে বিকৃত করা হয়েছে। সত্য ইতিহাসকে কালের গর্ভ থেকে তুলে এনে বাঙালি হিন্দুর সামনে তুলে ধরছে সংস্কার ভারতী। আকবর বঙ্গাব্দের প্রচলন করেন, এটা সর্বৈব মিথ্যে কথা। মরু দস্যুদের সংস্কৃতি বাঙালি হিন্দুর উপর চাপানো হচ্ছে, এর বিরুদ্ধে আমরা হিন্দু বাঙালিরা প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ গড়ে তুলছি এবং তুলব।’
ঐতিহাসিকদের মতে, মহারাজা শশাঙ্ক ৫৯৩ থেকে ৬২৫ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে রাজত্ব করেন। তাঁর সিংহাসনে আরোহনের দিন থেকেই গণনা শুরু হয় বাংলা বর্ষপঞ্জি বা বঙ্গাব্দ। পক্ষান্তরে বঙ্গাব্দের প্রবর্তক আকবর – এই দাবি সত্য নয়; বঙ্গাব্দের প্রবর্তক হলেন মহারাজ শশাঙ্ক আর সাল তারিখ গণনা করে বোঝা যায়, এটাই সত্য কথা। গৌড়াধিপতি মহারাজা শশাঙ্কের জীবন অবলম্বনে রচিত নাটক ‘মহারাজা শশাঙ্ক’ মঞ্চস্থ হয় এদিন। এই নাটকটি পশ্চিমবঙ্গের বুকে গত কয়েক দশকে এই প্রথম প্রযোজিত হয়। এটি সংস্কার ভারতী আয়োজিত ‘আবাহান উৎসব’-এর একটি অন্যতম আকর্ষণ। নাটকটি প্রযোজনা করেছেন ‘এবং আমরা’ নাট্যদল, নির্দেশনায় ছিলেন কল্লোল ভট্টাচার্য।
বঙ্গের স্বাধীন রাজা, ‘বঙ্গাব্দ’-এর প্রবর্তক, মহারাজ শশাঙ্কের বীরগাথাকে অবলম্বন করে এই প্রথম তাঁর জীবনের ১২টি অধ্যায়কে নিয়ে চিত্র অঙ্কন করেছেন সংস্কার ভারতীর সুদক্ষ শিল্পীরা। শিল্পী শীর্ষ আচার্য মহারাজা শশাঙ্কের একটি মূর্তি নির্মাণ করেছেন, সেই মূর্তিকে আজ মালা পরিয়ে গ্রহণ করা হয়, যা EZCC তে রাখা হবে বলে জানান আশিস গিরি। মহারাজা শশাঙ্কের ১২ টি চিত্র সম্বলিত একটি সাংস্কৃতিক দেওয়ালপঞ্জীও প্রকাশিত হয় এইদিন। এছাড়াও এই ১২টি চিত্রকে নিয়ে ভারতীয় জাতীয় গ্রন্থাগারে একটি চিত্র প্রদর্শনশালার আয়োজন করা হয়, যা পশ্চিমবঙ্গে এই প্রথম অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এদিনের অনুষ্ঠান প্রসঙ্গে ‘সংস্কার ভারতী পশ্চিমবঙ্গ’-এর কার্যকরী সভাপতি সুভাষ ভট্টাচার্য বলেন, ’আমরা খুব আনন্দিত যে, বাঙালি জাতি সত্ত্বার প্রতীক মহারাজা শশাঙ্ককে নিয়ে এমন একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে পেরেছি। ১৪১২ বঙ্গাব্দ থেকে আমরা প্রতি বছর নতুন নতুন বিষয় নিয়ে দেওয়ালপঞ্জী প্রকাশ করছি। এবার আমরা মহারাজা শশাঙ্ক-এর জীবনের ১২ টি অধ্যায় নিয়ে একটি দেওয়ালপঞ্জী করেছি। বাঙালির সন্তান মহারাজা শশাঙ্ককে আদর্শ হিসাবে মেনে চলুক। গৌড়াধিপতি মহারাজা শশাঙ্ক-এর মতো বীর বাঙালির ঘরে ঘরে জন্ম নিক। জয় মহারাজা শশাঙ্কের জয়; জয় বঙ্গ জয় শশাঙ্ক।’’
সমগ্র অনুষ্ঠানের সঞ্চালনা করেন সুদীপ বসু এবং সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ছিলেন মেহেন্দি চক্রবর্তী, জয়দেব বণিক, অমিতাভ মুখোপাধ্যায়, শুভঙ্কর ভট্টাচার্য, ভরত কুন্ডু, গোপাল কুন্ডু, অমিত দে, রীণা ব্যানার্জি, মহাশ্বেতা চক্রবর্তী ও আরও অনেকে । এই অনুষ্ঠানের পরিকল্পনায় ছিলেন সংস্কার ভারতী পশ্চিমবঙ্গের সাধারণ সম্পাদক তিলক সেনগুপ্ত।