ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,প্রয়াগরাজ,উত্তরপ্রদেশ: বিশ্ব জুড়ে নারী নির্যাতনের ঘটনা প্রায়ই খবরের শিরোনাম হতে দেখা যাচ্ছে। আমাদের রাজ্যেও এর ব্যতিক্তম নয়। পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্যে ও অনেক তথাকথিত উন্নত দেশেও নারীরা লাঞ্চিত হচ্ছে। এমন সময় প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেও ভারতের নারীরা কতটা লড়াই করে সমাজকে দিশা দেখিয়েছেন তারই গাথা তুলে ধরল সংস্কার ভারতী। বুধবার অখিল ভারতীয় সংস্থা ‘সংস্কার ভারতী’র পক্ষ থেকে প্রয়াগরাজের মহাকুম্ভে ‘রাষ্ট্র রত্না শোভাযাত্রা’র আয়োজন করা হয়। ভারতবর্ষের বিজয়িনী বীরাঙ্গনা নারীশক্তিদের ঐশ্বরীয় ক্ষমতা প্রদর্শনের সজ্জিতরূপ দেখালো সংস্কার ভারতী।
অবিভক্ত বঙ্গের তিন নারীশক্তির সজ্জিতরূপ প্রদর্শিত হয় এই শোভাযাত্রায় – রানী রাসমণি, রানী ভবশঙ্করী ও ভগিনী নিবেদিতা। প্রয়াগরাজের মহাকুম্ভে ভারত নির্মাণে যোগদানকারিনী মহীয়সী এবং বীরাঙ্গনা নারীশক্তির আদর্শ ও তাঁদের ঐশ্বরিক শক্তির অজানা ইতিহাস সম্বলিত এক বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা আয়োজনের মাধ্যমে আজ সমগ্র বিশ্বের মানুষকে জাগরূক করল সংস্কার ভারতী। অহিল্যাদেবী হোলকরের ৩০০ তম, রানী দুর্গাবতীর ৫০০ তম এবং সন্ত মীরাবাঈ-এর ৫২৫ তম জয়ন্তী উপলক্ষ্যে আয়োজিত হয় এই শোভাযাত্রা।
এই অনুষ্ঠানে ভারতের প্রতিটি প্রান্ত থেকে প্রায় দু’শত মহিলা – রাষ্ট্রীয়, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনীতিক এবং আধ্যাত্মিক ক্ষেত্রে বিখ্যাত মহীয়সী নারীদের শৌর্য, মেধা ও জীবনকথার স্বরূপ প্রদর্শনের মধ্যে দিয়ে তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেন; যা রাষ্ট্রীয়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে নব সমাজ অভ্যুত্থান এবং নব ভারত গঠনের সংকল্পের বার্তায় জাগরূক করবে আপামর দেশবাসীকে। ‘সংস্কার ভারতী পশ্চিমবঙ্গ’ প্রান্তের তত্ত্বাবধানে তিনজন বঙ্গ মাতৃশক্তি ভারতের বিভিন্ন প্রান্তের সাথে এক সারিতে এই শোভাযাত্রায় প্রতিনিধিত্ব করেন। তাদের রূপসজ্জা ছিল মহীয়সী নারীর – লোকমাতা ভগিনী নিবেদিতা, লোকমাতা রানী রাসমণি, বাঙালী বীরাঙ্গনা রাণী ভবশঙ্করী দেবী। এই তিন চরিত্র উপস্থাপন করেন সংস্কার ভারতী পশ্চিমবঙ্গ-এর তিন শিল্পী যথাক্রমে তনুশ্রী মল্লিক, তনুশ্রী দত্ত রায়, রূপালী রায় চৌধুরী।
লাঞ্ছিত, উৎপীড়িত, পদে পদে অপমানিত ভারতবর্ষকে নিবেদিতার মতো এত আপন করে ভালোবাসতে পারেনি আর কোনো বিদেশি। ভারতের ধর্ম ও সংস্কৃতি নিয়ে এত গর্ববোধ, ভারতের জাতীয়তাবোধ জাগরণের জন্য এইরকম সর্বস্ব পণ ― আর কোনো বিদেশীর মধ্যে আজ পর্যন্ত দেখা যায় নি। ভারতের প্রথম নারী সমাজ সংস্কারক আন্দোলনের পথিকৃৎ, ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের অন্যতমা নারী চরিত্র ও দক্ষিণেশ্বর কালীবাড়ি প্রতিষ্ঠাত্রী হলেন লোকমাতা রানী রাসমণি। জ্যোতির্ময়ী রানী রাসমণি সাথে পেয়েছিলেন শ্রীরামকৃষ্ণরূপী অনির্বাণ দীপশিখা।
আবার ষোড়শ শতকে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের হাওড়া, হুগলী ও অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলা নিয়ে গঠিত প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় রাজ্য ছিল ভুরশুঁট। মহারাণী ভবশঙ্করী ছিলেন একজন বাঙালি বীর রমণী ও তদানীন্তন ভুরশুঁট বা ভূরিশ্রেষ্ঠ রাজ্যের রানী, যাঁর শৌর্য ও বীরত্বের সামনে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়েছিলেন পাঠান সেনাপতি ওসমান খান। মহারানীর বীরত্বে মুগ্ধ হয়ে সম্রাট আকবর তাঁকে ‘রায়বাঘিনী’ উপাধি দেন। পাঠান, আফগান, মুঘল – বঙ্গের এই মহারানীকে যমের মতো ভয় পেতেন।
এই রানীদেরই রূপসজ্জায় অংশ নেন সংস্কার ভারতী পশ্চিমবঙ্গের তিনজন কার্যকর্তা। এছাড়াও সহযোগী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশের দুই কার্যকর্তা – জয়দেব বনিক ও শীর্ষ আচার্য্য। এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছিলেন ভারত সরকারের ‘সংস্কৃতি ও পর্যটন’ মন্ত্রী গজেন্দ্র সিং শেখাওয়াত। তিনি বলেন, কুম্ভ মেলার এই দিব্য ও পবিত্র স্থানে পুরো বিশ্বের মানুষের দৃষ্টি রয়েছে। বিশ্ববাসী ভারতের সাংস্কৃতিক ও আধ্যাত্মিক আয়োজনের উপর নজর রাখছে। এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে যখন নতুন ইতিহাস রচিত হতে চলেছে, যখন ভারতের আর্থিক ও সাংস্কৃতিক প্রভূত্ব পুরো বিশ্বের নজর কাড়ছে, এমন সময়ে মহাকুম্ভ মেলায় ভারতের দু’শত মহীয়সী নারীদের নিয়ে যে শোভাযাত্রা হল তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিল পুরো বিশ্বকে। ভারত নারীকে শ্রদ্ধা ও সম্মান করে এবং তাদের প্রতিষ্ঠাকে স্বীকৃতি দেয়, তা আরও একবার প্রমাণিত হল।
‘সংস্কার ভারতী পশ্চিমবঙ্গ(দক্ষিণবঙ্গ প্রান্ত)’-এর সাধারণ সম্পাদক তিলক সেনগুপ্ত বলেন, প্রয়াগরাজ মহাকুম্ভে ভারতের নারীশক্তির গৌরব প্রকাশের জন্য সংস্কার ভারতী ‘রাষ্ট্র রত্না শোভাযাত্রা’র আয়োজন করেছে। দেশের দু’শত মহীয়সী বীরাঙ্গনা নারীশক্তির আদর্শগুলি মডেল আকারে উপস্থাপিত হয়েছে। এই শোভাযাত্রায় অবিভক্ত বঙ্গপ্রদেশের তিন মহীয়সী
নারীর সজ্জিত স্বরূপ দেখতে পেল দেশ এবং জানতে পারল তাদের গৌরব গাথা, যা অত্যন্ত গৌরবের।”