ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,বর্ধমান: ফের সাঁতার কাটতে নেমে অনুশীলন করার সময় বর্ধমানের কল্পতরু সুইমিং পুলে অসুস্থ হয়ে মৃত্যু হল স্কুল পড়ুয়া এক যুবকের। নাম মহ: কাইফ মন্ডল(১৯)। বাড়ি পূর্ব বর্ধমানের সরাইটিকর পঞ্চায়েতের অন্তর্গত কৃষ্ণপুর এলাকায়। বৃহস্পতিবার সাত সকালে মর্মান্তিক এই মৃত্যুর ঘটনায় আলোড়ন ছড়িয়েছে শহর জুড়ে। এই ঘটনার পর ফের ১১বছর আগে এই সুইমিং পুলেই এক কলেজ ছাত্র সাঁতারুর অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা উস্কে দিয়েছে। এখনও সেই মৃত্যুর ঘটনার তদন্ত করছে সিবিআই।
প্রসঙ্গত ২০১২ সালের ২সেপ্টেম্বর কল্পতরু সুইমিং পুলে সাঁতার কাটার সময় রমেন সামন্ত নামে দ্বিতীয় বর্ষের এক ছাত্র জলে ডুবে মারা যায়। পরিবারের পক্ষ থেকে রমেন কে মেরে ফেলা হয়েছে বলে বর্ধমান থানায় অভিযোগ জানানো হয়েছিল। পড়ে সেই ঘটনার সিবিআই তদন্তের দাবি জানায় রমেন সামন্তর বাবা দেব কুমার সামন্ত। সেই ঘটনার পর বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল সুইমিং পুল। দীর্ঘ কয়েকবছর বন্ধ থাকার পর আবার খোলে। চালু করা হয় বেশ কিছু নিয়ম কানুন। এডমিশনের আগে প্রত্যেকের চিকিৎসকের দেওয়া ফিট সার্টিফিকেট জমা করা বাধ্যতামূলকও করা হয়। কিন্তু বৃহস্পতিবার মহ: কাইফের মৃত্যুর ঘটনা এই ‘ ফিট ‘ সার্টিফিকেট নিয়েই প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।
চিলড্রেন কালচারাল সেন্টারের যুগ্ম সম্পাদক সৌগত হালদার বলেন,’ খুবই দুঃখজনক ঘটনা। কাইফ মাস খানেক আগেই এই সুইমিং পুলে ভর্তি হয়েছিল। ভর্তির আগে নিয়মানুযায়ী ডাক্তারের দেওয়া ফিট সার্টিফিকেট জমা করেছিল। সব ঠিকঠাকই ছিল। ওর আরো দুজন বন্ধু একই সঙ্গে সকালে সাঁতার কাটতে আসতো। এদিন জলে নেমে রেলিং ধরে অনুশীলন করছিল কাইফ। প্রায় ৪০ জনের উপর সাঁতারু সেই সময় সুইমিং পুলে ছিল। আচমকা কাইফের শরীর শক্ত হয়ে গিয়ে মুখ দিয়ে ফেনা বেড়োতে থাকে। সঙ্গে সঙ্গে তাকে জল থেকে তুলে একটি গাড়ি করে বর্ধমান মেডিক্যালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। কাইফ কে যখন নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল তখনও পালস চলছিল। কিন্তু ইমারজেন্সি তে নিয়ে আসার পর চিকিৎসক কাইফ কে মৃত ঘোষণা করেন। হটাৎ করে এই ঘটনায় আমরা সবাই মর্মাহত। পুলিশ গোটা ঘটনার তদন্ত করছে।’
এদিকে মৃত কাইফ মণ্ডলের পিতা ওবাইদুল হক মন্ডল ছেলেকে মেরে ফেলা হয়েছে বলেই বর্ধমান থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। তিনি বলেন,’ এদিন সকালে অন্যদিনের মতোই সুস্থ শরীরে আলোমগঞ্জের কল্পতরু সুইমিং পুলে সাঁতার কাটতে গিয়েছিল কাইফ। সকাল ৮টা নাগাদ আমায় ফোন করে সুইমিং পুল কর্তৃপক্ষ। জানানো হয় যে কাইফ মন্ডল কে অসুস্থ অবস্থায় বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে। তার কিছুক্ষণের মধ্যে আমি হসপিটালে পৌঁছলে সেখানে সুইমিং পুলের কাউকেই দেখতে পায়নি। ইমার্জেন্সির চিকিৎসকদের কাছে জানতে চাইলে তাঁরা বলেন কাইফ মন্ডল মারা গেছে। ছেলের কাছে গিয়ে দেখি তার গলা ফুলে রয়েছে, হাতের দুদিকে বালি লেগে রয়েছে, পিঠে ছেঁড়ার দাগ। আমি এই ঘটনায় বর্ধমান থানায় কল্পতরু সুইমিং পুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে চরম গাফিলতি ও কাইফ কে মেরে ফেলার অভিযোগ জানিয়েছি। আমি ওদের চরম শাস্তির দাবি জানিয়েছি।’
ডি এস পি ট্রাফিক ২ রাকেশ চৌধুরী বলেন, ‘ কল্পতরু সুইমিং পুলে সাঁতার কাটতে গিয়ে একজন যুবকের মৃত্যুর ঘটনার আমরা তদন্ত শুরু করেছি। কর্তৃপক্ষের সঙ্গে জিজ্ঞাসাবাদের পাশাপাশি মৃত কাইফ মণ্ডলের আই কার্ড সহ সুইমিং পুলের রেজিস্ট্রার খাতা, সাঁতারু দের ফিট সার্টিফিকেট প্রভৃতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। পুলের ব্যবস্থাপনাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। গোটা ঘটনার তদন্ত শুরু করা হয়েছে। ময়না তদন্তের রিপোর্ট হাতে আসার পর পরিষ্কার হবে মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে। ‘