রাস পূর্ণিমা আসলে শালগ্রাম ও তুলসীর বিবাহের দিন

Souris  Dey

Souris Dey

ফোকাস বেঙ্গল ওয়েব ডেস্ক: রাস পূর্ণিমা হলো এমন একটি তিথি যে তিথিতে ভগবান বিষ্ণুর সঙ্গে তুলসী দেবীর বিবাহ হয়ে ছিলো। পুরাণের এই কাহিনীকে ভিত্তি করে আজও রাস পূর্ণিমার দিন বিভিন্ন স্থানে তুলসী বিবাহ অনুষ্ঠিত হয়। বিভিন্ন মন্দির বা বিভিন্ন অঞ্চলে দেখা যায় যে একটি শালগ্রাম বা আমলা শাখার সাথে দেবী তুলসীর বিবাহ সম্পন্ন হয়। পুরান অনুযায়ী আরো বলা হয় যে, তুলসী বিবাহ সম্পন্ন হওয়ার সাথে সাথেই বিবাহের মরশুমের শুরু হয়। এই তুলসী বিবাহর পিছনে রয়েছে একটি পৌরাণিক কাহিনী।

বিজ্ঞাপন

পুরাণ অনুযায়ী বলা হয় যে, একসময় জলন্ধর নামে এক মহা পরাক্রমশালী অসুর ছিলো। তার ওপর এইরূপ বরদান ছিল যে যতকাল তার স্ত্রী সতীত্ব অক্ষুণ্য রাখবে ততকাল তার অমরত্ব। এই জলন্ধর অসুরের স্ত্রী বৃন্দা ছিলেন পরম বিষ্ণু ভক্ত। অসুর জলন্ধর কে বধ করবার জন্য ভগবান তাই ভক্তের উপর মায়া বিস্তার করেন। তিনি জলন্ধরের রূপ নিয়ে বৃন্দার কাছে উপস্থিত হন। আর বৃন্দা ভগবানকে স্বামী জ্ঞানে আলিঙ্গন করেন। আর এরপরই দেবাসুরের যুদ্ধে প্রাণ হারায় জলন্ধর। ভগবান বিষ্ণুর মায়ার কথা জানতে পেরে বিষ্ণুভক্ত বৃন্দা ক্রুদ্ধ হয়ে ভগবান কেই অভিশাপ দেন যে, তার প্রতি করা এই অন্যায়ের জন্য ভগবান বিষ্ণু পাথরে পরিণত হবেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য ভগবান বিষ্ণুর এই রূপটি শালগ্রাম রূপে পরিচিত।

বৃন্দা ভগবান কে অভিশাপ দিলে দেবী লক্ষী তাকে শান্ত হতে অনুরোধ করেন। অভিশাপ ফিরিয়ে নিতে বলেন। বৃন্দা বুঝতে পারেন তিনি ভগবান কে অভিশাপ দিয়ে ফেলেছেন, তাই তিনি নারায়ণের কাছে ক্ষমা চান এবং কাঁদতে কাঁদতে বলেন যে, তাকে জগত সমাজে সকলে‌ই অসতী বলবে। এরপর সে প্রাণ ত্যাগ করতে প্রস্তুত হয়। মঙ্গল বিধানকারী নারায়ন তখন বলেন যে, বৃন্দার চুল থেকে মহাপবিত্র তুলসী বৃক্ষের সৃষ্টি হবে তারপর ভগবানের এই শালগ্রাম রূপের সাথেই তুলসীর বিবাহ হবে। আর তারপর জগতসমাজ তাকে মহাসতী ও দেবী রূপে গণ্য করবে। এমনকি ভগবান বিষ্ণুর শালগ্রাম রূপের পুজো সম্পন্ন হবে না তুলসী ছাড়া। এরপরই দেবী বৃন্দা দেহত্যাগ করেন। তার কেশ থেকে সৃষ্টি হয় তুলসী আর সেই তুলসী বৃক্ষের সাথে শালগ্রাম শিলার বিবাহ সম্পন্ন হয়। এরপর থেকেই ঘরে ঘরে শালগ্রাম শিলার পূজা উপাচারের মধ্যে তুলসী পত্র পূণ্য প্রদানকারী অতি আবশ্যক এক বৃক্ষ রূপে সমাদৃত হতে থাকে। আবার পুরাণ অনুযায়ী কথিত আছে যে, রাস পূর্ণিমার দিন তুলসী রূপে পূজিতা হন দেবী লক্ষ্মী।

কার্তিক মাসের পূর্ণিমাই রাসপূর্ণিমা। প্রচলিত বিশ্বাস অনুসারে, এই দিন বৃন্দাবনের গোপিনী সকাশে রাধার সঙ্গে রাস উৎসবে মেতেছিলেন গোপশ্রেষ্ঠ শ্রীকৃষ্ণ। গোপিনীদের নাচ ও শ্রীকৃষ্ণের সুমধুর বংশীধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠেছিল বৃন্দাবনের পবিত্রভূমি। পরবর্তীকালে শ্রীরাধা ও শ্রীকৃষ্ণের এই মিলন উৎসবকে শ্রীচৈতন্যদেব নাম-সঙ্কীর্তনের মধ্য দিয়ে রাস মহোৎসবে পরিণত করেন। শ্রীকৃষ্ণ বলেছিলেন, কেউ যদি তাঁকে জানতে চায়, তবে তাঁকে অবশ্যই ভক্তির আশ্রয়ে থাকতে হবে। এই দিনে তাই বৈষ্ণব ভক্তরা তাঁদের ঈশ্বরের সঙ্গে মিলিত হওয়ার আকাঙ্ক্ষায় মেতে ওঠেন রাসলীলায়।

রাস পূর্ণিমা শুরু:- পঞ্জিকা মতে, রাস পূর্ণিমা শুরু ২৬ শে নভেম্বর ২০২৩, রবিবার সকাল ১১:২৩ মিনিটে।

রাস পূর্ণিমা সমাপন:- ২৭শে নভেম্বর ২০২৩, সোমবার সকাল ১০:১৫ মিনিটে সমাপ্ত হবে রাস পূর্ণিমা।

তথ্য সহায়তা – ইন্টারনেট

আরো পড়ুন