বর্ধমানে আচমকা টোটো ধর্মঘট, চরম হয়রানির শিকার সাধারণ মানুষ থেকে রুগী, পরীক্ষার্থীরা

Souris  Dey

Souris Dey

ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,বর্ধমান: প্রশাসনিক বৈঠক, বারবার আলোচনা, রুট বিতরণ কে কেন্দ্র করে দুদিন লটারির আয়োজন। সেখানেও সব পক্ষের স্বতস্ফূর্ত অংশগ্রহণ, এরপরেও আচমকা সপ্তাহের প্রথম দিন সোমবার সকাল থেকে গোটা বর্ধমান শহরে কার্যত টোটো ধর্মঘটে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়াল। আগাম কোন প্রচার ছাড়াই এদিন শহরের তেলিপুকুর, শিয়ালডাঙ্গা, পারবিরহাটা, স্টেশন, কলেজমোড়, গোলাপবাগ মোড় সহ একাধিক জায়গায় টোটো চালকরা টোটো কে নিয়ে সম্প্রতি পুরসভার নতুন নিয়মের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু করে।

বিজ্ঞাপন

সমস্ত টোটো চলাচল বন্ধ করে দেয় তারা। সব থেকে বেশি খারাপ পরিস্থিতি তৈরি হয় বর্ধমান রেল স্টেশনের বাইরে। আচমকা প্রায় তিন চারশো টোটো চালক ধর্মঘট ডেকে দেওয়ায় কার্যত যাত্রী পরিবহন ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে শহরে। নানান কারণে বর্ধমান স্টেশনে বিভিন্ন ট্রেনে আসা যাত্রীরা পড়েন বেকায়দায়। এরই মাঝে যাত্রীদের অনেকে অভিযোগ করেন, আন্দোলনকারী টোটো চালকদের বিরোধিতায় স্টেশন থেকে রিক্সাও বেরোতে দেওয়া দেওয়া হয়নি এদিন। ফলে এদিন সকাল থেকেই বর্ধমান উইমেন্স কলেজে পরীক্ষা দিতে আসা বহু ছাত্রী নির্দিষ্ট সময়ে কলেজে পৌঁছনো নিয়ে ঘোর সংকটে পড়েন।

এরই পাশাপাশি বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে আসা বাঁকুড়া, আসানসোল, হুগলির বিভিন্ন জায়গার একাধিক রোগীর পরিবারের সদস্যরা চরম হয়রানির শিকার হয়েছেন। অন্যদিকে, টাউন সার্ভিস বাস বা শহরের দিকে আসা বিভিন্ন রুটের বাসগুলোতে এদিন কার্যত তিল ধরানোর জায়গা ছিলনা। বহু যাত্রীকে একপ্রকার দরজায় ঝুলতে ঝুলতে যেতে দেখা গিয়েছে। উল্লেখ্য সম্প্রতি বর্ধমান শহরের যানজট নিয়ন্ত্রণে বর্ধমান পুরসভা ৩৬০০ টোটো কে অনুমোদন দিয়েছে। পঞ্চায়েতের টোটো কে শহরে ঢোকা বন্ধ ঘোষণা করেছে।

শহরের জনবহুল রাস্তা গুলোকে নিয়ে ৮ টি রুট করে দিনে ৫০০ এবং রাতে ৫০০টোটো চলার নিয়ম জারি করেছে। বাকি টোটো শহরের যে কোনো এলাকায় চলাচল করতে পারবে বলেও জানিয়েছে। এই ব্যবস্থা আগামী ১অক্টোবর থেকে চালু হওয়ার কথা ঘোষণা করেছে পুরসভা। চালুর পর  আগামী এক মাস এই নতুন ব্যবস্থা নিয়ে পর্যবেক্ষণ করা হবে বলেও বলা হয়েছে। আর তার আগেই এদিন টোটো ধর্মঘট সমগ্র ব্যবস্থাকেই প্রশ্নের মুখে ফেলে দিল বলেই জানিয়েছেন শহরবাসীর একাংশ।

টোটো চালকদের পক্ষ থেকে এদিন অভিযোগ আনা হয়েছে, রুট করে টোটো চলাচল তারা মানবেন না। শিফটিং মেনে নেওয়া গেলেও পঞ্চায়েতের টোটো শহরে ঢুকবে না বা শহরের টোটো পঞ্চায়েত এলাকায় যাবে না, এই সিদ্ধান্তও তারা মানবেন না। এদিন বিক্ষোভরত টোটো চালকরা বিধায়ক খোকন দাসের বিরুদ্ধেও স্লোগান দিতে থাকে। পরিস্থিতি সামাল দিতে স্টেশন এলাকায় এসে হাজির হন বর্ধমান থানার আইসি সুখময় চক্রবর্তী। ডিএসপি ট্রাফিক ২ রাকেশ চৌধুরী সহ বিশাল পুলিশ বাহিনী। টোটো চালকদের সঙ্গে আলোচনা করেন আইসি। তাদের দাবি দাওয়া নিয়ে জানতে চান। তবে এতে সমস্যার কোনো সমাধান হয়নি। ধর্মঘট থেকেও সরে আসেনি টোটো চালকরা।

এদিকে এদিন সকাল থেকেই আচমকা টোটো ধর্মঘটের কারণে শহরের এবং শহরে আসা মানুষ কে চরম হয়রানির মধ্যে পড়তে হলেও দুপুরে বর্ধমান পুরসভার চেয়ারম্যান পরেশ সরকার কে ফোনে ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ” আমি এখনও এব্যাপারে কিছু জানিনা, খোঁজ নিয়ে দেখে পড়ে বলবো।” অন্যদিকে বর্ধমান দক্ষিণের বিধায়ক খোকন দাস বিধানসভায় থাকায় তাঁর প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে শহরের যানজট নিয়ন্ত্রণের জন্য টোটোর সংখ্যা বেঁধে দিয়ে শহরের রাস্তায় টোটো চলাচলের জন্য নতুন নিয়ম কার্যকর করার যে উদ্যোগ বর্ধমান পুরসভা এবং বিধায়ক নিয়েছেন, এদিনের ধর্মঘট সেই ব্যবস্থা আদৌ চালু করা যাবে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিল বলেই ওয়াকিবহাল মহলের মত।

আরো পড়ুন