বালির টাকায় সারাবছর তৃণমূলের বিভিন্ন কর্মসূচি! গলসি ২ব্লকে ত্রিশঙ্কু তিনটি পঞ্চায়েত

Souris  Dey

Souris Dey

ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক, গলসি: রাজ্যের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে প্রায়ই অভিযোগ তোলা হয় যে রাজ্যের শাসক দলের নিচুতলার কিছু নেতা তোলাবাজি করে দলের বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে। এবার তেমনি কিছু অভিযোগ সামনে এসেছে পূর্ব বর্ধমান জেলার গলসি ২নম্বর ব্লকের বেশ কয়েকটি এলাকা থেকে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একাধিক মানুষ জানিয়েছেন, গলসি ২ নং ব্লকে সারাবছর দলের বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করতে স্থানীয় বালিঘাট গুলি থেকে কিছু নেতা প্রায় ২৫থেকে ৩০লক্ষ টাকা আদায় করে। হিসেবে প্রতি মাসে গড়ে প্রায় ২ থেকে আড়াই লক্ষ টাকা ওই নেতাদের দিতে হয় বলে দাবি এলাকাবাসীর একাংশের।

বিজ্ঞাপন

আর সেই টাকা মেটাতে হয় স্থানীয় অসাধু কিছু বালি মাফিয়া থেকে বৈধ ঘাট মালিক সকলকে। এমন অভিযোগ দামোদর নদ তীরবর্তী অঞ্চলগুলোতে কান পাতলেই শোনা যায়। এই নিয়ে শাসক তৃণমূলের স্থানীয় নেতাদের বিরুদ্ধে ক্ষুদ্ধ এলাকাবাসীদের অধিকাংশই। যার জেরে এবারে পঞ্চায়েত ভোটে তিনটি গ্রাম পঞ্চায়েতে তৃণমূলের ফল খারাপ হয়েছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। সুত্রের খবর, এখন বালিঘাট বন্ধ, তবুও শাসক দলের নেতাদের এখনও দিতে হচ্ছে তোলা। ঘটনা ঘিরে চরম ক্ষুব্ধ বালি ঘাট মালিকদেরও একাংশ বলে জানতে পারা গেছে।

গলসি এলাকায় শাসক দলের ছত্রছায়ায় চলছে বেশ কয়েকটি অবৈধ বালি ঘাট। এইসব বালি খাদানের মালিকরা স্থানীয় শাসক দলের নেতাদের সেটিং করে কারবার চালিয়ে আসছে বলে অভিযোগ। তাদের মধ্যে কেউ কেউ অবৈধভাবে বালির স্টকও করেছেন। এরা বৈধ ঘাট মালিকদের থেকে বালির চালান সংগ্রহ করে অবৈধভাবে এই ব্যবসাকে রমরমিয়ে চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ। আর এই সব কিছুতেই মদত রয়েছে তৃণমূলের স্থানীয় নেতাদের একাংশের বলে অভিযোগ করছে বিজেপির জেলা কমিটির সদস্য জয়দীপ চ্যাটার্জি।

নাম পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, ব্লকে রক্তদান শিবির, মেলা, মিছিল, মিটিংয়ে যা খরচ হয় সেই অর্থের যোগান দেয় এলাকার ঘাট মালিকরাই। এটা সবাই জানে। গলসি হাইস্কুল মাঠে একটি বড় মেলা হয়েছে কয়েক মাস আগে। সেখানে কোলকাতার নামিদামী বহু শিল্পী এসে পাঁচ সাতদিন ধরে অনুষ্ঠান করেছেন। তাতে প্রতিদিন খরচ হয়েছে লক্ষ লক্ষ টাকা। এছাড়াও তেঁতুলমুড়িতে একটি বড় মেলা হয়ছে তার টাকাও যোগান দিয়েছেন ঘাট মালিকরা বলে স্থানীয় এক তৃণমূল কর্মী ( নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ) অভিযোগ করেছেন। তার দাবি সেই টাকার যোগান কারা দিয়েছে, খবর নিলেই সব পরিস্কার হয়ে যাবে।

অভিযোগ, এমনকি ব্লকে রক্তদান শিবির করলেও বালিঘাট থেকে আসে মোটা টাকা। এমনই কথা লোকের মুখে মুখে রটেছে গলসি জুড়ে। বিজেপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আগে কোন অনুষ্ঠান হলে ব্লকের নেতারা মিল, ফ্যাক্টরি ও স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছে চাঁদা তুলতেন। তবে বর্তমানে টাকার সহজ উৎস মিলে যাওয়ায় তেমনটি আর করেন না ব্লক নেতৃত্ব। সেই টাকার হিসাব কয়েকজন নেতাই রাখেন। যদিও কেউই কোন নেতার নাম প্রকাশ্যে আনেননি।

প্রসঙ্গত শাসকদলের ‘ আবদার ‘ মেটাতে গলসি ২ নং ব্লকের ঘাটগুলিকে নিয়ে একটি পরিচালন কমিটি করা হয়েছে। যেখানে দায়িত্ব দেওয়া আছে স্থানীয় তিনজন ঘাট মালিককে। মুলত এরাই মাসোহারার ওই টাকা দিয়ে থাকেন। এই তোলা দেওয়ার হিসাবও রাখেন দরবারপুরের এক ব্যক্তি। অভিযোগ, তিনিও শিকারপুরের কাছে একটি অবৈধ বালি ঘাটের মালিক। উল্লেখ্য, যেখানে রাজ্য নেতৃত্ব বার বার স্বচ্ছতার কথা বলছেন। সেখানে ব্লকের নেতারা সেই কথাকে যে গুরুত্ব দিচ্ছেন না তা কার্যতঃ এই মেলা খেলার আয়োজন দেখেই পরিস্কার। জানা গেছে, ওই সব মেলা বসাতে তেমন কোন বড় উপার্জনের সোর্স ছিলনা তৃণমূল নেতাদের। তাহলে কিভাবে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করছেন স্থানীয় নেতারা সেটাই এখন সবথেকে বড় প্রশ্ন।

জানাগেছে, বর্তমানে গলসিতে আড়াআড়ি ভাগ হয়েছে তৃণমূল। পঞ্চায়েত ভোটে যার প্রভাব পরেছে সরাসরি। ব্লকের গলসি, গোহগ্রাম ও সাঁকো এই তিনটি গ্রাম পঞ্চায়েতে তৃণমূলের হাল বেশ খারাপ। তিনটি পঞ্চায়েতের ফল ত্রিশঙ্কু।  সবচাইতে ভরাডুবি হয়েছে বালিঘাট লাগোয়া গোহগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েতে। আগামী ১০আগস্ট এই পঞ্চায়েত গুলোতেও বোর্ড গঠন হবে। মুলত শাসক দলের দুর্নীতির জন্যই এই এলাকায় তৃণমূলের ভরাডুবি বলে মনে করছেন রাজনৈতিক মহল। শাসক দলের নেতাদের অত্যাচারে দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে ওই সব এলাকার সাধারণ মানুষের বলে স্থানীয়দের একাংশের দাবি। ফলে মুখ ফুটে কোন প্রতিবাদ না করলেও, গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগের মাধ্যমেই এবার তাদের ক্ষোভ স্পষ্ট করেছেন স্থানীয়রা বলেই মত ওয়াকিবহল মহলের।

আরো পড়ুন