ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,বাঁকুড়া: শিক্ষকদের আসি যাই মাইনে পাই এই মনোভাবের জন্য স্কুলে দ্রুত কমছে পড়ুয়ার সংখ্যা। মঙ্গলবার স্কুলে শিক্ষকেরা দেরিতে পৌঁছাতেই ক্ষোভে ফেটে পড়লেন অভিভাবকেরা। স্কুলের পরিকাঠামো আছে। আছে পড়ুয়া এমনকি পর্যাপ্ত শিক্ষকও। কিন্তু স্কুলে শিক্ষকদের আসাটা তাদের নাকি মন মর্জি! ফলে পড়াশুনার প্রতি ইচ্ছা হারিয়ে স্কুলে আসাই ছেড়ে দিচ্ছে বহু পড়ুয়া। ধীরে ধীরে লাটে উঠছে স্কুলের পঠন পাঠন। আর এই কারণেই আজ শিক্ষকেরা দেরিতে স্কুলে পৌঁছাতেই ক্ষোভে ফেটে পড়লেন এলাকার অভিভাবকেরা। স্কুলে পৌঁছে দেরিতে পৌঁছানোর নানা অজুহাত দেখাতেও শুরু করলেন শিক্ষকরা।

বাঁকুড়া ১ নম্বর ব্লকের ছাতারডিহি প্রাথমিক বিদ্যালয়। একসময় এই স্কুলে সব মিলিয়ে পড়ুয়া ছিল ৫০ থেকে ৬০ জন। লেখাপড়ার মানও ছিল ভালো। কিন্তু স্কুলে থাকা দুই শিক্ষকের আসি যাই মাইনে পাই মনোভাবের জন্য ধীরে ধীরে স্কুলে পঠন পাঠনের মান যেমন নেমেছে, তেমনই ধীরে ধীরে নেমেছে পড়ুয়ার সংখ্যাও। পড়ুয়ার সংখ্যা এখন নামতে নামতে ঠেকেছে মাত্র ২৯ জনে। আজও স্কুলে শিক্ষকেরা এসে পৌঁছান ১১ টা ১৫ মিনিট নাগাদ। দেরিতে শিক্ষকেরা এসে পৌঁছানোয় শিক্ষকদের ঘিরে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন অভিভাবকেরা।
অভিভাবকদের দাবী স্কুলে সাড়ে দশটার মধ্যে শিক্ষকদের পৌঁছানোর কথা থাকলেও প্রায় দিনই শিক্ষকেরা স্কুলে আসেন ইচ্ছেমতো। কোনো কোনো দিন শিক্ষকদের স্কুলে পৌঁছাতে সাড়ে এগারোটা, বারোটাও বেজে যায়। স্কুল ছুটির ক্ষেত্রেও কোনো নিয়ম নীতির তোয়াক্কা করেন না শিক্ষকেরা। কখনো কখনো বেলা ২ টার পর পড়ুয়াদের মিড ডে মিল খাইয়েই ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়। মাঝেমধ্যে দুই শিক্ষক কোনো কারন ছাড়াই নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে স্কুলে আসেন। স্কুলে পড়ুয়াদের দিয়ে জল আনানো সহ অন্যান্য কাজ করার অভিযোগও উঠেছে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে।
আজ দেরিতে স্কুলে পৌঁছানোর ব্যাপারে শিক্ষকেরা তেমন জোরালো সাফাই দিতে না পারলেও অন্যান্য অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তাঁরা। শিক্ষকদের দাবী বিভিন্ন অফিসিয়াল ও ব্যক্তিগত কাজকর্ম থাকার ফলেই কখনো কখনো এমন অবস্থা হয়। প্রধান শিক্ষক সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন,’ রাস্তা ঘাটের যে অবস্থা তাতে স্কুলে নির্দিষ্ট সময়ে পৌঁছানো অনেক সময় সম্ভব হয়না। তাছাড়া স্কুলের কিছু কাজকর্ম থাকে যেগুলো মিটিয়ে আসতে হয়। বাকি অভিভাবকরা যে সমস্ত অভিযোগ আনছেন, এইসব ঠিক না। ’
এক অভিভাবক ভজহরি চট্টোপাধ্যায় অভিযোগ করেছেন, স্কুলের খাতায় ৫০ জন পড়ুয়ার হিসাব লেখা থাকলেও স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা তার অর্ধেকও নেই। তাহলে মিড ডে মিলের চাল কোথায় যাচ্ছে? প্রায়ই স্কুল ছুটির অনেক আগেই শিক্ষকরা স্কুল বন্ধ করে চলে যান। পড়াশোনা একপ্রকার কিছুই হয়না। তাহলে আমাদের ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যৎ কি হবে? কিছু বলতে গেলেই প্রধান শিক্ষক জানিয়ে দেন, যেখানে যা বলার আছে বলুন, কিছুই হবে না।’