আন্দোলননাত্বক কাজের উদ্দেশ্যে প্রশিক্ষিত বাহিনী গড়ে দাবি আদায়ের প্রশিক্ষণ দিল ভারতীয় কিষাণ সংঘ

Souris  Dey

Souris Dey

ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,গঙ্গাসাগর: শাস্ত্রে পঞ্চপিতার কথা বলা হয়েছে। তার অন্যতম হলেন অন্নদাতা পিতা। কিন্তু সেই অন্নদাতা কৃষকদের পেটেই আজ ভাত নেই। ফসলের লাভকারী মূল্য না পেয়ে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হচ্ছেন কৃষকরা। ইতিপূর্বে অনেক আন্দোলন করেছেন তারা। কিন্তু লাভের লাভ কিছুই হয়নি তেমন। তাই ভারতীয় কিষাণ সংঘের পক্ষ থেকে কৃষকদের সংঘবদ্ধ করার জন্য ‘কার্যকর্তা প্রশিক্ষণ বর্গ’-এর আয়োজন করে বিশেষ কৃষক বাহিনী গঠন করা হচ্ছে দাবি আদায় করার জন্য। সেই উদ্দেশ্য নিয়েই দুদিন ধরে গঙ্গাসাগরে ‘বিশ্ব হিন্দু পরিষদ’-এর কার্যালয়-এর ‘মাধব ভবন’-এ দেওয়া হল প্রশিক্ষণ।

বিজ্ঞাপন

এই প্রশিক্ষণ শিবিরে উপস্থিত ছিলেন ভারতীয় কিষাণ সংঘের অখিল ভারতীয় সংগঠন মন্ত্রী দীনেশ কুলকার্নি, অখিল ভারতীয় কার্যকারিণী সদস্য কল্যাণ কুমার মন্ডল, পশ্চিমবঙ্গ প্রান্তের সংগঠন মন্ত্রী অনিল রায়, সাধারণ সম্পাদক আশিস সরকার ও সম্পাদক কার্তিক চন্দ্র বিশ্বাস, প্রান্তের কোষাধ্যক্ষ অষ্টগোপাল পাল এবং প্রান্তের প্রচার প্রমুখ ও ‘ভারতীয় কিষাণ বার্তা’ পত্রিকার সম্পাদক মিলন খামারিয়া আর রাজ্যের অন্যান্য কার্যকর্তাবৃন্দ। পাশাপাশি এই বর্গে পশ্চিমবঙ্গের প্রতিটি জেলার সভাপতি ও সম্পাদক উপস্থিত হয়েছিলেন।

দু’দিনের এই বর্গে, ভারতীয় কিষাণ সংঘের পতাকা উত্তোলন করেন আশিস সরকার। তারপর ভগবান বলরাম ও ভারত মাতার প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন করেন সবাই।শুরুতেই শ্রী মন্ডল বলেন, কৃষকরা হলেন দেশের মানব সম্পদ। তারা অন্নদাতা। কঠিন মাটির বুক চিরে ফসল ফলান তারা। কিন্তু সেই কৃষকরা ফসলের লাভকারী মূল্য পাচ্ছেন না দীর্ঘদিন ধরে। সরকারের কাছে সে তথ্য আছে। কিন্তু রাজনৈতিক দল গুলো কৃষকদের কথা ভাবে না। মাঝে মাঝে ললিপপ দেবার মতো কিছু সুবিধা দেন ভোট এলে। কৃষকরা সরকারি সুবিধাযুক্ত কম দামে সার পাচ্ছেন না। সেচের যথাযথ ব্যবস্থা নেই। চাষের খরচ অনেক বেড়ে গেছে। এই সব কারণে অনেকেই কৃষিকাজ ছেড়ে দিয়ে শহরে চলে যাচ্ছেন। কৃষকরা চাষবাস ছেড়ে দিলে মানুষ খাবে কী? সমাজ ব্যবস্থা ভেঙে যাবে।

এমতাবস্থায় ফসলের লাভকারী মূল্য পাবার জন্য কৃষকদের সংঘবদ্ধ হতে হবে। চাষের খরচ কমানোর জন্য জৈব পদ্ধতিতে চাষ করতে হবে। কৃষকদের জৈব সার তৈরি করতে হবে। সমাজের মানুষকে কৃষকদের কথা ভাবতে হবে। সরকার ও সমাজের মানুষ না ভাবলে অন্নদাতারা কিন্তু এবার নিজেদের ফসলের ন্যায্য মূল্য নিজেরাই বুঝে নেবে। তাই এই প্রশিক্ষণ শিবির। আন্দোলন এবার চরমভাবে করব আমরা।

কুলকার্নি বলেন, “আমাদের সংগঠন কৃষকদের জন্য, কৃষকদের দ্বারা ও কৃষকদের স্বার্থেই পরিচালিত সংগঠন। আমরা সংগঠনাত্বক, রচনাত্বক ও আন্দোলনাত্বক পদ্ধতিতে কাজ করি। আমরা দেশের মানুষের কথা ভেবে সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক ও শান্ত ভাবে লড়াই করে চলেছি ফসলের লাভকারী মূল্য পেতে। কিন্তু বধির সরকার আমাদের কথা শুনছে না। কৃষকরা শুধু নিজের জন্য নয়, সারা বিশ্বের মানুষের জন্য অন্ন উৎপাদন করেন, তা করোনা কালে আবার প্রমাণ করেছেন তারা। সেই অন্নদাতা কৃষকরা যাতে ফসলের ন্যায্য দাম পান তার জন্য আমাদের সংগঠন কাজ করে চলেছে ও আমরা কৃষকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে কৃষক বাহিনী তৈরি করছি, যাতে তারা লড়াই করে নিজের অধিকার বুঝে নিতে পারেন।”

এই প্রশিক্ষণ বর্গ সম্পর্কে সাধারণ সম্পাদক আশিস সরকার বলেন, “কার্যকর্তারা হল একটি সংগঠনের স্তম্ভ। সেই স্তম্ভ দুর্বল হলে সংগঠন দুর্বল হয়ে যায়। আমরা সেইজন্য কার্যকর্তাদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। তারা আন্দোলনাত্বক কাজ করে নিজেদের দাবি আদায় করতে সক্ষম হবে।” প্রচার প্রমুখ মিলন খামারিয়া বলেন, “ভারতীয় কিষাণ সংঘ-এর কৃষকরা অত্যন্ত প্রশিক্ষিত ও মার্জিত । তারা নিজের অধিকারের জন্য লড়াই করলেও শান্তভাবে দাবি-দাওয়া জানান, তা ২০২২ সালের ১৯ ডিসেম্বর মাসে দিল্লির ‘রামলীলা ময়দান’-এ ১ লক্ষ কৃষক সমবেত হয়ে প্রমাণ করেছেন। আমাদের কৃষক প্রশিক্ষিত বলেই তা সম্ভব হয়েছে। দেশের অন্যান্য কৃষক সংগঠন আন্দোলন ক’রে দেশের সম্পদ নষ্ট করেছে তা দেখেছি আমরা, কিন্তু আমরা তা করিনি। আমাদের ন্যায্য অধিকারের জন্য লড়াই করছি আমরা।”

অষ্টগোপাল বলেন, “MSP নয়, লাভকারী মূল্য চাই আমাদের। কৃষকরা সফলের দাম পাচ্ছেন না আর কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকার বধির হয়ে আছে। আমরা তাদের কানে শুনতে বাধ্য করব। তাই এই প্রশিক্ষণ বর্গ করা হল।” দু’দিনের এই শিবিরের ব্যবস্থাপনায় ছিল ভারতীয় কিষাণ সংঘের দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলা ও প্রান্তের কার্যালয় সচিব প্রসেনজিৎ নাথ।

আরো পড়ুন