ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,বর্ধমান: এতদিন ধরে শুধু শোনা যেত বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল চত্বরে দালাল চক্রের কথা। শুধু যে শোনা যেত তাই নয়, রীতিমত বহু রোগীর পরিজনেরা এই দালাল চক্রের খপ্পরে পড়ে টাকা পয়সা খুইয়ে প্রতারিত হয়েছেন বলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ জমা পড়তো। প্রশাসনিক ভাবে একাধিকবার হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে আসা রোগীদের এই দালাল চক্রের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য নানান ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হয়েছে। তবু কিছুদিন সব ঠিকঠাক চলার পর আবার চোরাগোপ্তা এই চক্রের দুষ্কৃতীরা সক্রিয় হয়ে উঠত।
কিন্তু এবার রীতিমত ফাঁদ পেতে হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের কর্মীরা হাতেনাতে পাকড়াও করলেন এক দালাল কে। আর ধরে ফেলার পর দেরী না করে মূর্তিমান চোর কে সরাসরি বর্ধমান থানার পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে ক্যাম্পের পুলিশ কর্মীরা। স্বাভাবিকভাবেই হাসপাতালের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশের এই কাজে রোগীর পরিজনেরা যেমন বাহবা জানিয়েছেন, পাশাপাশি এখনও যে হাসপাতাল চত্বরে দালালরা সক্রিয় রয়েছে সেব্যাপারেও আশঙ্কাও প্রকাশ করেছেন।
এদিকে মেডিক্যাল কলেজের পুলিশ ক্যাম্পের দাবি যা, তা হার মানাবে কোন গোয়েন্দা চিত্রনাট্যকেও। জানা গেছে, মঙ্গলবার সকালে বর্ধমান ১ ব্লকের ভিটা শোনপুর থেকে মেয়েকে আউটডোরে দেখাতে নিয়ে আসেন তুলা ধর। তাঁর মেয়ে সোমার দিনকয়েক থেকেই পেটে যন্ত্রণা হচ্ছিল। আউটডোরে দেখানোর পর চিকিৎসক ইউ এস জি করানোর পরামর্শ দেন। সেই মত
তুলা দেবী হাসপাতালের ছয় নং কাউন্টারে আসেন ইউ এস জি করানোর জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিতে। ছয় নম্বর কাউন্টার থেকে তুলা দেবীকে এক সপ্তাহ পর ইউ এস জি করানোর জন্য তারিখ দেওয়া হয়। কিন্তু, যন্ত্রণায় ছটছট
করা বছর দশেকের মেয়ের ইউ এস জি করাতে কেন দেরি হবে সেই নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তুলা দেবী।
তাঁর দাবি, সেই সময় ওই কাউন্টারের বাইরে
একজন তাঁর কাছে ১০০ টাকা দাবি করেন। অভিযোগ সেই ব্যক্তি নিজেকে হাসপাতালের কর্মী জানিয়ে ওই টাকার বিনিময়ে
মঙ্গলবারই ইউ এস জি করিয়ে দেওয়ার আশ্বাস
দেন তুলা দেবীকে। কিন্তু, তুলাদেবীর কাছে সেই একশ টাকা না থাকায় তিনি হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পে যোগাযোগ করেন। পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ আব্দুল নাসির খান ওই ‘দালাল’কে ধরার জন্য ফাঁদ পাতেন। তিনি নিজের একটি ১০০ টাকার নোটে নাম লিখে কাগজে মুড়িয়ে তুলা দেবীকে দেন। ওই টাকা দালালের কাছে পৌঁছে দেওয়ার কথাও বলেন। এরপরই বিষয়টি নজরে রাখতে শুরু করেন পুলিশ ক্যাম্পের কর্মীরা।
পরিকল্পনা অনুযায়ী তুলা দেবী সেই টাকা নিয়ে ওই দালালের হাতে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বমাল ধরা হয় ওই ব্যক্তিকে। উদ্ধার হয় হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জের নাম লেখা নোট। দেরী না করেই এরপর ওই দালাল কে তুলে দেওয়া হয় বর্ধমান থানার পুলিশের হাতে। জানা গেছে, ধৃত ব্যক্তি নিরাপত্তা রক্ষী সরবরাহকারী সংস্থার কর্মী ছিলেন। তাঁর সঙ্গে ইউ এস জি বিভাগের কোন কর্মী এই দলালা চক্রে যুক্ত কিনা সেই নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন রোগীর পরিজনরা। হাসপাতালের সুপার তাপস ঘোষ বলেন, ‘একটি অভিযোগ এসেছে। পুলিশ তাঁকে আটক করেছে। কোন কর্মী এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত কিনা সেই বিষয়ে জানার জন্য তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। দোষ প্রমাণিত হলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’