সৌরীশ দে, বর্ধমান: দুর্গা পুজোর আর মাত্র হাতে গোনা কয়েকটা দিন বাকি। অতিমারি করোনার বিধিনিষেধের গেরোয় গত দুবছর দুর্গোৎসব নিয়ে তেমন মাতামাতি করতে পারেননি উৎসবপ্রিয় বাঙালি। এবার সেই পরিস্থিতি প্রায় অতীত। রাজ্যে বিভিন্ন জেলা থেকে কমবেশি করোনা আক্রান্তের খবর পাওয়া গেলেও, আগের সেই তীব্রতা আর নেই। স্বাভাবিকভাবেই আসন্ন দুর্গোৎসবে সাধারণ মানুষ যে সব প্রতিকূলতা অতিক্রম করে আনন্দে গা ভাসাবেন তা বলাইবাহুল্য। ফলে মণ্ডপে মণ্ডপে এবছর যে জনজোয়ার নামবে প্রাথমিকভাবে এমনই মনে করছে পূর্ব বর্ধমান জেলা পুলিশ। আর পুজোর দিনগুলোতে যাতে নিশ্চিন্তে, নির্বিঘ্নে মানুষ রাস্তায় বেরিয়ে ঠাকুর দেখা থেকে শুরু করে আনন্দ উপভোগ করতে পারেন তার আগাম প্রস্তুতি হিসেবে গোটা বর্ধমান শহর কে সিসি ক্যামেরার চাদরে মুড়ে ফেলার উদ্যোগ নিয়েছে জেলা পুলিশ।
জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কল্যাণ সিংহ রায় বলেন, ” শহরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও আঁটোসাঁটো করার জন্য বেশ কয়েকমাস আগে থেকেই শহরের বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে, গুরুত্বপূর্ন জায়গায় জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে ইন্টারনেট প্রটোকল ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা লাগানোর কাজ চলছে। অনেকটাই কাজ হয়েছে। এখনও কিছু কাজ বাকি আছে। খুব শীঘ্রই সেই কাজ শেষ করা হবে। আলাদা কন্ট্রোল রুমের মাধ্যমে এই গোটা ব্যবস্থা কে মনিটরিং করা হবে। পুজোর আগেই এই নতুন মনিটরিং সিস্টেমের উদ্বোধন করা হবে। এর ফলে পুজোর সময় যে কোনো ধরনের উৎশৃঙ্খলতা, নাশকতা, রোড সেফটি প্রভৃতি বিষয়ে আরও তীক্ষ্ণ নজরদারি চালানো যাবে। দুর্গা পুজোর দিনগুলো যাতে সাধারণ মানুষ নিশ্চিন্তে উপভোগ করতে পারেন তার জন্য জেলা পুলিশ সবরকম ব্যবস্থা গ্রহণ করছে।”
বর্ধমান থানা সূত্রে জানা গেছে, ইতিমধ্যে শহরের বিভিন্ন জায়গায় ১৬৯টি সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়ে গেছে। এখনও প্রায় সাড়ে তিনশো ক্যামেরা লাগানোর কাজ চলছে। আগে থেকেই লাগানো রয়েছে এমন কিছু ক্যামেরা নানান কারণে অকেজো হয়ে যাওয়ায় এবং অচল থাকায় সেগুলোকে ঠিকঠাক করে আবার চালু করার কাজও করা হচ্ছে। পাশাপাশি বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল চত্বর কেও সিসি ক্যামেরায় মুড়ে ফেলার কাজ শুরু হয়েছে বলে হসপিটাল সূত্রে জানা গেছে। কোনোভাবেই যাতে শহরের গুরুত্বপূর্ণ কোনো রাস্তা সিসি ক্যামেরার নজরদারির বাইরে না থাকে তার জন্যই দ্রুতগতিতে এই কাজ করছে নির্দিষ্ট এজেন্সি বলে পুলিশ জানিয়েছে।
বর্ধমান দক্ষিণের বিধায়ক খোকন দাস বলেন,” শহরের নিরাপত্তা ব্যবস্থার আরো উন্নতির জন্য আমি আমার বিধায়ক কোটার এলাকা উন্নয়ন তহবিল থেকে জেলা পুলিশ কে ১৫লক্ষ টাকা এবং বর্ধমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কে ১৫লক্ষ টাকা প্রদান দিয়েছি। বর্ধমান পুরসভা কেও এব্যাপারে ফান্ডিং করার জন্য আবেদন জানিয়েছি। আশা করি খুব দ্রুত এই কাজ সম্পূর্ন হয়ে যাবে।” জানা গেছে, জেলা পুলিশের নজরদারিতে থাকা সিসি ক্যামেরা গুলো বাদ দিয়েও বর্ধমান পৌরসভার অধীনে কিছু ক্যামেরা শহরের বেশ কিছু জায়গায় লাগানো রয়েছে। এছাড়াও বিসি রোড, চাঁদনী চক, বড় বাজার, মিঠাপুকুর, সোনা পট্টি, সিং দরজা সহ একাধিক জায়গায় স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে লাগানো হয়েছে বেশ কিছু সিসি ক্যামেরা। ফলে আসন্ন দুর্গা পুজোর আগেই শহরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা যে আরো আঁটোসাঁটো হতে চলেছে সে ব্যাপারে সহমত প্রকাশ করেছেন শহরবাসীরদের অনেকেই।