ক্রাইম

গলসিতে রাস্তাশ্রী প্রকল্পে রাস্তা তৈরির কাজে তোলাবাজি ও খুনের হুমকির অভিযোগ দায়ের ঠিকাদারের, আলোড়ন

ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,গলসি: রাজ্য সরকারের রাস্তাশ্রী প্রকল্পে রাস্তার কাজ করতে গিয়ে তোলাবাজি ও খুনের হুমকির মুখে পড়লেন ঠিকাদারের অনুমোদিত কর্মীরা। এমনকি দুষ্কৃতীদের দাবি মতো তাদের কাছ থেকে রাস্তা তৈরির জন্য কাঁচা মাল না কেনায় রাস্তার কাজ বন্ধ করে দিয়েছে বলে খোদ ঠিকাদার এবার অভিযোগ জানিয়েছেন জেলা শাসক, পুলিশ সুপার থেকে শুরু করে ডিস্ট্রিক্ট ইঞ্জিনিয়ার, জেলা পরিষদের সভাধিপতি, অতিরিক্ত জেলা শাসক ও লোকাল থানায়। আর এই ঘটনায় রীতিমত আলোড়ন পড়েছে রাজনৈতিক মহলের পাশাপাশি পূর্ব বর্ধমান জেলা প্রশাসনের অন্দরে।

গলসি ২ ব্লকের কুরকুবা পঞ্চায়েতের অধীনে ঈদগাহ তলা থেকে কদমতলা পর্যন্ত এক কিলোমিটার ৯৫০ মিটার রাস্তা তৈরির জন্য গত এপ্রিল মাসের ১৭তারিখ গোপীনাথ ধাম কনস্ট্রাকশন এন্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি জেলা পরিষদ থেকে রাস্তা তৈরির কাজের বরাত পায়। রাস্তার কাজ সম্পূর্ণ করার জন্য নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছিল দু মাসের। সেই অনুযায়ী ওয়ার্ক অর্ডার পাওয়ার দু দিনের মধ্যে কাজ শুরুও করেছিল ঠিকাদার কোম্পানি বলে সংস্থার মালিক অভিজিৎ মুখার্জি জানিয়েছেন।

কিন্তু অভিজিৎ বাবু অভিযোগে জানিয়েছেন, রাস্তার কাজ শুরুর পর থেকেই কতিপয় শামসুল, জাকির ও টোটন নামে তিনজন ব্যক্তি রাস্তার কাজের দায়িত্বে থাকা কর্মীদের কাছে বিভিন্নভাবে টাকা দাবি করতে থাকে। এমনকি কাজের ৮০শতাংশ কাঁচামাল দ্বিগুণ দামে তাদের কছেই কিনতে হবে বলে দাবি করে। শর্ত না মানলে তারা কাজ বন্ধ করে দেবারও হুমকি দেয়। এই অবস্থায় বহু আলোচনার পর স্থানীয় ‘ দাদা ‘ দের কিছু টাকা দিয়ে এক কিলোমিটার রাস্তার প্রাথমিক পর্যায়ের কাজ শেষ করেছি। কয়েকদিন আগে থেকেই শুরু হয়েছে পরবর্তী পর্যায়ের জিএসবির কাজ।

এমতাবস্থায় শামসুল, জাকির, টোটন নামে ওই স্থানীয় অপরাধীরা ৩ লাখ টাকা দাবি করে এবং প্রায় ৮০ শতাংশ সামগ্রী দ্বিগুণ হারে কিনতে বাধ্য করছে। আমরা কাজের মান বজায় রাখতে চাই এবং কোম্পানির সম্মানও বজায় রাখতে চাই। তাই আমরা ভাল মানের উপকরণ অন্য জায়গা থেকে কিনতে গিয়েছিলাম। কিন্তু ওই দুষ্কৃতীরা দ্বিগুণ হারে তাদের কাছ থেকেই উপকরণ কেনার জন্য চাপ দিচ্ছে। বর্তমানে প্রায় ৭ দিন ধরে তারা আমাদের কাজ বন্ধ করে দিয়েছে। ওই ব্যক্তিরা আমাদের কর্মীদের হত্যার হুমকি দিয়েছে, শুধু তাই নয় রাস্তার কাজও বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে এই পরিস্থিতিতে স্বাভাবিক কাজ চালিয়ে যাওয়ার অর্থ প্রাণ হাতে নিয়ে কাজ করা। আমি জেলার সমস্ত পর্যায়ের আধিকারিক কে সমস্যার বিষয়ে লিখিত ভাবে জানিয়েছি। অপরাধীরা দ্রুত গ্রেপ্তার করা না হলে আমরা আমাদের পরবর্তী কাজ শুরু করতে পারবো না। সেক্ষেত্রে কাজ শুরু করার জন্য আমরা পুলিশি নিরাপত্তা দাবি করছি।

যদিও স্থানীয় গ্রামবাসীদের পাশাপশি অভিযুক্ত ব্যক্তিদের পাল্টা অভিযোগ, টাকা নেওয়া বা খুনের হুমকির অভিযোগ মিথ্যা। ঠিকাদার কোম্পানি নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে রাস্তা তৈরি করছিল। এটা নতুন রাস্তা তৈরি হচ্ছে। তাই খারাপ সামগ্রী দিয়ে রাস্তা তৈরি করলে কিছুদিনের মধ্যে এই রাস্তা নষ্ট হয়ে যাবার সম্ভাবনা থাকে। তাই তারা কাজে বাধা দিয়েছে। এই রাস্তার জন্য গ্রামের মানুষই তাদের জমি দিয়েছে প্রশাসন কে। রাস্তার কাজে সঠিক মানের সামগ্রী যাতে ব্যবহার হয় সেই বিষয়ে ঠিকাদার সংস্থার লোকেদের বলা হয়েছিল।

ঠিকাদার কোম্পানির কর্ণধার অভিজিৎ মুখার্জি অবশ্য সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, ‘রাস্তা তৈরির জন্য ব্যবহৃত সামগ্রীর মান যদি খারাপ থাকে সেটা দেখার জন্য প্রশাসনের লোকজন আছে। তারাই ঘটনাস্থলে গিয়ে সরজমিনে তদন্ত করে দেখবেন। গ্রামবাসীদের মধ্যে কয়েকজন কাজ শুরুর প্রথম থেকে নানানরকম সমস্যা তৈরি করছিল। এখন অভিযোগ জানানোর পর নিজেদের গা বাঁচাতে এইসব মিথ্যা অভিযোগ খাঁড়া করছে। ‘

অন্যদিকে গলসি ২ব্লকের তৃণমূলের সভাপতি সুজন মন্ডল এই ঘটনা প্রসঙ্গে বলেন,’ উন্নয়নের কাজে যদি কেউ বাধা সৃষ্টি করে আমাদের দল সেটা কোনসময়ই বরদাস্ত করে না। এইক্ষেত্রেও রাস্তার ঠিকাদার যে অভিযোগ জানিয়েছেন প্রশাসন ও পুলিশ গোটা ঘটনার বিষয় খতিয়ে দেখে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করুক। মানুষের প্রয়োজনে সরকারি কাজ বন্ধ করা যায় না।’ পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের বিদায়ী সভাধিপতি শম্পা ধাড়া বলেন,’ এখনও অভিযোগের কপি হাতে পাইনি। অভিযোগের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। মুখ্যমন্ত্রীর স্বপ্নের প্রকল্পের কাজ বন্ধ হয়ে থাকবে না। খোঁজ নিয়ে দেখছি।