ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,বর্ধমান: শতাব্দী প্রাচীন একটি শিরীষ গাছ বেআইনিভাবে কেটে ফেলাকে কেন্দ্র করে নাম জড়াল তৃণমূলের স্থানীয় কাউন্সিলরের। এই ঘটনায় মঙ্গলবার সকালে বর্ধমান পুরসভার ২৭নং ওয়ার্ডের বাবুরবাগ পশ্চিমপাড়া এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। স্থানীয় বাসিন্দা তথা তৃণমূলের জয়হিন্দ বাহিনীর নেতা মোক্তার মিঞা বন বিভাগে লিখিত অভিযোগ জমা করেছেন। মোক্তার মিঞা অভিযোগ জানিয়ে বলেন,” গতকাল সকালে হটাৎই আমি দেখতে পাই বাবুরবাগ পশ্চিম পাড়ার প্রায় ২০০বছরের প্রাচীন একটি শিরীষ গাছ কে স্থানীয় কাউন্সিলর শেখ বশির আহমেদ ওরফে বাদশা তার কিছু লোকজন নিয়ে ক্রেন ও জেসিবি মেশিন এনে কেটে ফেলছে। এবং গাছের কাটা ডাল পালা গুলোকে ট্রাক্টরে করে পাচার করে দেওয়া হচ্ছে।
এই ঘটনা দেখার পরই মুখ্য বিভাগীয় বনাধিকারিক নিশা গোস্বামী কে ফোন করে বিষয়টি জানাই। উনি অতিরিক্ত বিভাগীয় বনাধিকরিক সোমনাথ চৌধুরী কে ঘটনার কথা জানতে বলেন। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই বন বিভাগের কর্মী, অফিসারেরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে গাছ কাটা বন্ধ করে দেয়। এই সময় পালিয়ে যায় দুষ্কৃতীরা। গাছের কাটা ডাল পালার কিছু অংশ ফরেস্টের কর্মীরা বাজেয়াপ্ত করে। যদিও তার আগেই বেশ কিছু কাঠ অন্যত্র সরিয়ে ফেলে স্থানীয় দুষ্কৃতীরা।”
মোক্তার মিঞা অভিযোগ করেছেন,” এক বছর আগেও পাড়ার মধ্যে এই পুরনো গাছটি সতেজ অবস্থায় ছিল। সবুজ ডালপালাও ছিল। কিন্তু গত এক বছরের মধ্যে স্থানীয় কিছু দুষ্কৃতী ষড়যন্ত্র করে গাছটির উপরের ছাল চেঁচে বিষ প্রয়োগ করে মেরে দেবার চেষ্টা করেছে। এখন সেই বহু মূল্যবান গাছ কেটে বিক্রি করে দেবার কাজ শুরু করেছে। অভিযোগ, এই গাছ কাটার কোনো অনুমতি বন বিভাগ কাউকে দেয়নি। তারপরেও স্থানীয় কাউন্সিলরের মদতে কিভাবে গাছ কাটা চলছিল তার তদন্ত চেয়ে অভিযোগ জমা করেছি বন দপ্তরে। অতিরিক্ত বিভাগীয় বনাধীকারিক সোমনাথ চৌধুরী আমাদের জানিয়েছেন, ফরেস্টের অনুমতি ছাড়া কেউ কোন গাছ কাটতে পারেন না। তাঁরা অভিযোগের ভিত্তিতে অনুসন্ধান করে ঘটনার বিষয়ে জানবেন। যদি কোন ত্রুটি ধরা পড়ে সেক্ষেত্রে আইন মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
অতিরিক্ত বিভাগীয় বনাধিকারিক সোমনাথ চৌধুরী বলেন,” বাবুরবাগ পশ্চিমপাড়া এলাকায় একটি শিরীষ গাছ কাটার খবর পেয়ে গতকাল আমাদের কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে গাছের কাটা কিছু ডাল বাজেয়াপ্ত করে নিয়ে আসা হয়েছে। যারা গাছ কাটছিল আমাদের কর্মীরা যাওয়ার আগেই পালিয়ে যায়। কিভাবে গাছ কাটার কোনো অনুমতি না নিয়েই এই গাছ কাটা হচ্ছিল তার তদন্ত শুরু করা হয়েছে। এলাকার এক নাগরিক এব্যাপারে একটি অভিযোগ জমা করেছেন। অভিযোগ খতিয়ে দেখে প্রয়োজনে পুলিশ কে অভিযোগ জানানো হবে।”
এদিকে গাছ কাটা কাণ্ডে যার বিরুদ্ধে মূল অভিযোগের তীর সেই শেখ বশির আহমেদ ওরফে বাদশা তার বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ মিথ্যা বলেই জানিয়েছেন। বাদশা বলেন,” গত দুমাস আগে পশ্চিম পাড়ার কিছু বাসিন্দা আমার কাছে এসে আবেদন জানিয়েছিলেন, পাড়ার ভিতর একটি বহু বছরের গাছ যেটি মরে গিয়ে শুকিয়ে গেছে তার ডাল পালার অংশ মাঝেমধ্যেই ঝড় বৃষ্টিতে ভেঙে পড়ছে। যেকোন সময় এলাকার মানুষের বিপদ ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে। ইতিমধ্যে পাড়ারই একটি শিশুর উপর ভাঙা ডাল পড়ে বিপদ ঘটেছে। তাই বর্ধমান পুরসভায়, পূর্ত দপ্তরে এবং ফরেস্টে এই গাছের কিছু অংশ কেটে দেওয়ার জন্য লিখিত আবেদন জানানো হয়েছিল। ফরেস্টের নির্দিষ্ট ফর্ম তুলে সেখানেও আবেদন জানানো হয়েছিল। কিন্তু এই বিপজ্জনক গাছের ডাল কেটে দেওয়ার জন্য কেউই কোন তৎপরতা দেখায়নি। তবে কারা অনুমতি না নিয়েই গাছ কাটার কাজ করছিল সে ব্যাপারে আমার কিছু জানা নেই। সংশ্লিষ্ট দপ্তর এব্যাপারে তদন্ত করে দেখে ব্যবস্থা নিক।”