ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,হুগলি: বর্ধমান রেল স্টেশনের বাইরে চারচাকা গাড়ির স্ট্যান্ড থেকে গাড়ি ভাড়া করে পুরনো জিটি রোড ধরে হুগলির ব্যান্ডেলের দিকে যাবার পথে খোদ গাড়ির চালককেই গুলি করে খুন করে গাড়ি নিয়ে পালাল চার দুষ্কৃতী। মাথায় ও বুকে গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়েছে বর্ধমানের নারী, খাঁ পুকুর, পূর্ব পাড়ার বাসিন্দা পেশায় গাড়ি চালক উদয়ন বিশ্বাস(৫২) ওরফে বিকাশের। আর মঙ্গলবার সাত সকালে ভয়াবহ এই খুনের ঘটনায় তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বিকাশের মাথায় ও বুকে গুলি লেগেছে। ঘটনার পরই দুষ্কৃতীরা বিকাশ কে রাস্তায় ফেলে দিয়ে স্কর্পিও গাড়িটি নিয়ে চম্পট দেওয়ার চেষ্টা করে। স্থানীয় মানুষ দ্রুত পুলিশ কে খবর দিলে পুলিশ গাড়িটির পিছনে ধাওয়া করে দুষ্কৃতীদের একজনকে ধরে ফেলে। গাড়িটিও উদ্ধার করা হয়েছে। বাকিদের খোঁজে চিরুনি তল্লাশি শুরু করেছে হুগলি পুলিশ। ঘটনাটি ঘটেছে মঙ্গলবার পান্ডুয়া থানার অন্তর্গত হুগলি বর্ধমান বর্ডার সংলগ্ন জিটি রোডের উপর সকাল প্রায় ৭টা ৪৫ মিনিট নাগাদ।
পুলিশ সূত্রে জানা যাচ্ছে, আজ সকাল ৬টা নাগাদ বর্ধমান রেলওয়ে স্টেশনের বাইরে থেকে অজ্ঞাত পরিচয় চার যুবক একটি স্করপিও গাড়ি ভাড়া করে ব্যান্ডেলের দিকে রওনা হয়। বর্ধমানের সীমানা পেরোতেই আচমকা গাড়ির ভিতরে থাকা দুষ্কৃতীরা চালক কে উদ্দেশ্য করে মাথায় ও বুকে গুলি চালায়। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাকে রাস্তায় ফেলে দিয়ে গাড়িটি নিয়ে পালিয়ে যাবার চেষ্টা করে। স্থানীয় লোকজন বিষয়টি বুঝতে পেরে পান্ডুয়া থানায় খবর দিলে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে এসে গুলিবিদ্ধ চালক বিকাশ কে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
অন্যদিকে দুষ্কৃতীদের পিছনে ধাওয়া করে পুলিশ গাড়িটি ধরে ফেলে। চারজন দুষ্কৃতীর মধ্যে তিনজন পালিয়ে গেলেও একজনকে পুলিশ ধরে ফেলে। ইতিমধ্যেই এই খুনের ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। মৃত ব্যক্তির দেহ ময়না তদন্তের জন্য চুঁচুড়া হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, কি কারনে খুন তা তদন্তের পরেই জানা যাবে। যদিও বিভিন্ন সূত্র মারফৎ প্রাথমিকভাবে জানতে পারা গেছে, দুষ্কৃতীরা সকলেই অপরাধ জগতের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি। তাদের সঙ্গেই ছিল আগ্নেয়াস্ত্র। এদিন সকালে বর্ধমান স্টেশনের বাইরে এরা ভোজপুরি ও হিন্দিতে কথা বলে গাড়ির খোঁজ করছিল।
এমনকি এদিন সকালে বর্ধমান স্টেশন এলাকায় এসে তারা শুধু স্করপিও গাড়িরই খোঁজ করেছিল। বর্ধমান স্টেশন এলাকার অনেকেই জানিয়েছেন, যে গাড়িটি দুষ্কৃতীরা ভাড়া নিয়ে গিয়েছিল সেটা প্রায় ১৫বছরের পুরনো। গাড়িটির মালিক গাড়িটি বিক্রি করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। উদয় বিশ্বাস এই গাড়িটি দীর্ঘদিন ধরে চালাচ্ছিলেন। তাই সেটি কিনে নেওয়ার জন্যে পরিকল্পনা করেছিলেন। ফলে দুষ্কৃতীরা এতো পুরনো গাড়ি হাইজ্যাক করার উদ্দ্যেশ্যে উদয় বিশ্বাস কে খুন করেছে সেটা অনেকেই মানতে পারছেন না।
বরং গাড়িতে ওঠার পর ওই চার দুষ্কৃতী এমন কিছু কাজ করে থাকতে পারে, কিংবা তাদের কাছে এমন কিছু সামগ্রী ছিল যেটা দেখে নেওয়ায় এবং আপত্তি জানানোর কারণেই দুষ্কৃতীরা পথের কাঁটা সরানোর জন্য উদয়ন বিশ্বাস কে গুলি করে খুন করে ফেলে দেয় বলেও অনুমান করছেন অনেকে। পাশাপাশি আরও একটা সম্ভাবনার বিষয় উঠে এসেছে উদয়ন বিশ্বাসের পরিচিতদের অনুমান থেকে সেটি হল, দুষ্কৃতীরা বড় কোনো অপরাধ সংগঠিত করার আগে চালক কে গাড়ি থেকে নেমে যেতে বলার পর উদয়ন হয়তো আপত্তি জানিয়েছিল। আর সেই কারণেই এই খুন হতে পারে। যদিও রহস্যজনক এই খুনের ঘটনার সবদিক খতিয়ে দেখতে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। একইসাথে পলাতক দুষ্কৃতীদের খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছে হুগলি পুলিশ।
এদিকে প্রতিদিনের মতো এদিনও সকালে কাজে বেরিয়ে দুই পুত্রের বাবা ও সংসারে একমাত্র রোজগারে স্বামীর মৃত্যুর খবর শুনে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন উদয় বাবুর স্ত্রী তপস্যা বিশ্বাস। তিনি জানিয়েছেন, কি ভাবে কি হয়ে গেল কিছুই বুঝতে পারছিনা। উদয় বিশ্বাসের মৃত্যুর খবরে খাঁ পুকুর, পূর্ব পাড়া এলাকায় চরম শোকের ছায়া নেমে এসেছে।