চাষবাস

আলুর ক্ষতিপূরণ নিয়ে এবার অশান্তির আশঙ্কায় প্রশাসন, মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপের দাবি চাষীদের

ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক, পূর্ব বর্ধমান: মেমারির রসুলপুরের তিরুপতি হিমঘরে রাখা চাষীদের লক্ষাধিক প্যাকেট আলুর ক্ষতি পূরণ সংক্রান্ত বিষয় এবার আরো ঘোরালো হতে শুরু করলো।
চারদিন আগেই পূর্ব বর্ধমান জেলা প্রশাসন ক্ষতিগ্রস্থ চাষীদের ও হিমঘর কর্তৃপক্ষ কে নিয়ে বৈঠক করেছিল। ক্ষতিগ্রস্থ আলু চাষিদের দ্রুত ক্ষতিপূরণের টাকা পাইয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যেই বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছিল। প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছিল বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল ৪৮ ঘন্টার মধ্যে ক্ষতিগ্রস্থ চাষিদের কিছুটা করে টাকা দেবে হিমঘর কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তারপর চারদিন কেটে গেছে। অভিযোগ, কোনো টাকা পায়নি তারা। এদিকে চাষীরা অর্থাভাবে আমন চাষ করতে পারছেন না বলেও অভিযোগ করেছেন চাষীরা।

আর চারদিন আগের বৈঠকের পর ফের সোমবার আবারও জেলা শাসকের সভাগৃহে হিমঘর কর্তৃপক্ষ ও চাষিদের নিয়ে বৈঠকে বসে জেলা প্রশাসন। কিন্তু এদিনের বৈঠকে হিমঘর মালিক পক্ষের অনমনীয় মনোভাবে হতাশ চাষিরা মিটিং চলাকালীন সভা ছেড়ে বেড়িয়ে আসেন। জেলা শাসকের অফিসের সামনে অনেককেই কাঁদতে দেখা যায়। বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করার কথাও বলেন বেশ কিছু ক্ষতিগ্রস্থ চাষি।

এদিনের বৈঠকে জেলাশাসক প্রিয়াঙ্কা সিংলা ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন জেলার পুলিশ সুপার কামনাশীস সেন, ক্ষতিগ্রস্ত আলুচাষিদের প্রতিনিধিরা, মেমারির বিধায়ক মধুসূদন ভট্টাচার্য ও তিরুপতি হিমঘর কর্তৃপক্ষ। জানা গেছে, এদিনের বৈঠকে হিমঘরের পক্ষ থেকে চাষীদের বস্তা প্রতি দেড়শো টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেবার কথা বলা হয়। ৮৯০ টাকা প্রতি বস্তা সরকারি দাম নির্ধারণের পরে দেড়শো টাকা দেবার কথায় চাষিদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ তৈরী হয়।

সূত্রের খবর সেই সময় খোদ পুলিশ সুপার হিমঘর মালিকের কাছে হাতজোড় করে চাষিদের ক্ষতি পূরণের টাকা বাড়ানোর আবেদন করেন। কিন্তু তারপরও অনড় ছিলেন হিমঘর কর্তৃপক্ষ। তাদের দাবি, বিষয়টি হাইকোর্টের বিচারাধীন। তাই এর থেকে বেশী তারা দিতে পারবেন না। এরপরেই পুলিশ সুপার মিটিং থেকে বেড়িয়ে চলে যান। বেড়িয়ে আসেন চাষিরাও।

জেলাশাসকের অফিসের বাইরে শেখ মোফিজ নামে এক চাষি রীতিমত কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন, ‘এখনও মুখ্যমন্ত্রী যদি এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করেন, তাহলে আমরাদের বিষ খেতে হবে। তবে বিষ আমরা একা খাবোনা। হিমঘর মালিক কে খাইয়ে তবেই খাবো।’ কামালুদ্দিন মোল্লা নামে এক চাষি বলেন, ‘আমাদের ধৈর্য্যের বাঁধ আজ ভেঙে গিয়েছে। যেভাবে জেলা প্রশাসন হিমঘর কর্তৃপক্ষের কাছে হাত জোড় করে অনুরোধ করেছে, তারপরেও ওরা নিজেদের অবস্থান থেকে সরেনি। এবারে ওরা বুঝবে  কতধানে কত চাল হয়। আমরা ২ হাজার চাষী হিমঘর কর্তৃপক্ষের দোষে আজ পথে বসতে চলেছি, আমাদের পরিবারের মোট সদস্য সংখ্যা প্রায় ১০হাজার। আন্দোলন কাকে বলে এবার বুঝতে পারবে ওরা।’

জেলা প্রশাসনও বড়সড় অশান্তির আশঙ্কা করছে এই ঘটনার জেরে। এতগুলো মানুষ একসঙ্গে উত্তেজিত হয়ে বড়সড় আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা জেলা পুলিশের বড় কর্তাদেরও। এদিনের বৈঠকে উপস্থিত বিধায়ক মধূসুদন ভট্টাচার্য এ বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলবেন বলেও বৈঠকে জানিয়েছেন। এদিন বৈঠকে ছিলেন হিমঘর মালিক শিউ প্রকাশ ভাট্টরের ছেলে সিদ্ধার্থ ভাট্টর। তিনি বলেন, ‘আমরা আদালতে গিয়েছি। আমরা এদিন চাষিদের প্রাথমিকভাবে ১৫০ টাকা করে দেব বলে প্রস্তাব দিয়েছি। কিন্তু ওনারা তা মানবেন না। এখন আমাদের কিছু করার নেই, একটা দুর্ঘটনা ঘটে গিয়েছে। সবাইকেই মানিয়ে নিতে হবে।’

Recent Posts