বর্ধমান জেলায় এবছর পরিযায়ী পাখি আগমনের সংখ্যা বৃদ্ধির আশায় বনদপ্তর, ৭-৮ জানুয়ারি জেলাজুড়ে হবে পাখি গণনা

Souris  Dey

Souris Dey

ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান: নভেম্বর মাসের শুরু থেকেই পূর্ব বর্ধমান জেলার বিভিন্ন প্রান্তের জলাশয়, খাল বিল, নদ নদী এমনকি জলাশয়ের তীরবর্তী এলাকা জুড়ে হাজার হাজার পরিযায়ী পাখি ভিড় করতে শুরু করেছে। সুদূর হিমালয়ের উপর দিয়ে বিভিন্ন দেশের সীমানা টপকে কয়েক হাজার মাইল পথ অতিক্রম করে এই সমস্ত পরিযায়ীরা তাদের নতুন ঠিকানার খোঁজে ভিড় করছে পূর্ব বর্ধমানের বিভিন্ন জলাশয়ে। মূলত খাদ্যের খোঁজে ও প্রজননের তাগিদে অপেক্ষাকৃত উষ্ণ অঞ্চলে এই পাখিরা উড়ে আসে প্রতিবছর। ফ্রেব্রুয়ারি মাসের শেষ থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত এরা এই এলাকায় সংঘবদ্ধ ভাবে থাকে। তারপর আবার ফিরে যায় নিজের নিজের দেশে।

বিজ্ঞাপন

গত কয়েকবছর ধরে বন বিভাগের উদ্যোগে একাধিক পশুপক্ষী প্রেমী সংস্থার ও এনজিওর সহযোগিতায় জেলা জুড়ে পরিযায়ী পাখি গণনার কাজ করা হচ্ছে। করোনার কারণে দুবছর এই গণনা স্থগিত থাকার পর গত বছরের প্রথমে শীতের সময় ফের এই পাখি গণনার উদ্যোগ নেয় বন বিভাগ। সেই সময় পূর্বস্থলীর চুপিচর, কাটোয়া, কেতুগ্রাম, আউশগ্রাম, ভাতার ইত্যাদি এলাকার জলাশয়ে আসা পরিযায়ীদের উপর সমীক্ষা চালানোর পাশপাশি প্রথমবার দামোদর তীরবর্তী পাল্লারোড, বড়শুল, চৈত্রপুর, শ্রীরামপুর, সদরঘাট ও ইদিলপুর এই সমস্ত এলাকাতেও পরিযায়ীদের গণনা চালানো হয়।

বিভাগীয় অতিরিক্ত বনাধিকারিক সোমনাথ চৌধুরী জানিয়েছেন, গতবছর দামোদর নদীর বড়শুল থেকে আমিরপুর বাংলো পর্যন্ত এলাকায় আনুমানিক ১৬৪১ টি পরিযায়ী পাখির দেখা পাওয়া গিয়েছিল। অন্যদিকে দামোদর নদীর ইদিলপুর থেকে মানা পর্যন্ত এলাকায় আনুমানিক ৬২০টি বিভিন্ন প্রজাতির পরিযায়ী পাখি দেখা গিয়েছিল। এছাড়াও রায়না ২ব্লকের ছাতাদীঘি তে আনুমানিক ৫১৫ টি পাখির দেখা পাওয়া গিয়েছিল। বর্ধমান-১ ব্লকের কর্জনা এলাকায় আনুমানিক ৩১৫৫ টি নানান প্রজাতির বিদেশি পাখির আগমন হয়েছিল। সব মিলিয়ে এই এলাকার জলাশয়গুলোতে প্রায় ৫৯৩১ টি পরিযায়ী পাখির সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল গত বছর।

বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালের গণনা অনুযায়ী পূর্ব বর্ধমান জেলায় প্রায় ১০৩ টি বিভিন্ন প্রজাতির দেশি বিদেশি মিলিয়ে মোট ১৫ হাজার ১৮৪ টি পাখি এসেছিল। এদের মধ্যে করজগ্রাম এলাকার বিভিন্ন জলাশয়ে ১৯ টি প্রজাতির মোট ৮১৬ টি পাখির খোঁজ পাওয়া গিয়েছিল। খিরজগ্রামে ২০টি প্রজাতির ১০৩১টি পাখির দেখা পাওয়া গিয়েছিল। আউশগ্রামের কালিকাপুরে ২৭টি বিভিন্ন প্রজাতির মোট ৯৪৬ টি পাখি দেখা গিয়েছিল। ভোতার বিলে ৪৩ টি প্রজাতির ৮৭২ টি পরিযায়ী পাখির অস্তিত্ব পাওয়া গিয়েছিল। উড়াল বিলে ৫৪ টি প্রজাতির ৬৫০টি পাখি কে দেখতে পাওয়া গিয়েছিল। অন্যদিকে জেলার মধ্যে সর্বাধিক পুর্বস্থলির চুপি চরে ৫৪ টি প্রজাতির ৮৫৪৬ টি পরিযায়ী পাখি গণনায় ধরা পড়েছিল। পাশাপশি আহার বিলে ২১ টি প্রজাতির ৫০৩টি পাখি, কয়না বিলে ২০টি প্রজাতির ৪৬১টি, শ্রীরামপুর বিলে ২০টি প্রজাতির ৪৫৩টি, ছাতার দীঘি তে ২০টি প্রজাতির ৩২১টি ও সায়ের পাড় দীঘিতে ২টি প্রজাতির পরিযায়ী পাখির প্রায় ৫৮৫ টির হদিস পাওয়া গিয়েছিল।

অতিরিক্ত বনাধিকারিক সোমনাথ চৌধুরী বলেন,’ এবছর ৭ ও ৮ জানুয়ারি জেলা জুড়ে পরিযায়ী পাখি গণনার কাজ করা হবে। গত বছরেও জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে জেলা জুড়ে পাখি গণনার কাজ করা হয়েছিল। বিগত কয়েক বছরের তুলনায় সেক্ষেত্রে  পরিযায়ী পাখির সংখ্যা গণনায় অনেকটাই বেশি ধরা পড়েছিল। গতবার এই পাখি গণনার এলাকা হিসেবে নতুন করে সংযোজন করা হয় বর্ধমানের দামোদর নদের পাল্লারোড থেকে ইদিলপুর পর্যন্ত এলাকা।

ইতিমধ্যে আমাদের কাছে খবর এসেছে দামোদর নদের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে প্রচুর পরিযায়ী পাখি এসেছে। তাদের মধ্যে দু একটি নতুন প্রজাতির পরিযায়ী পাখির হদিস পাওয়া গেছে ইতিমধ্যেই। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কমন শেল ডাক ও নব বিল ডাক। এই পাখিরা মূলত ইউরোপ, এশিয়ার বিভিন্ন দেশ ও তিব্বত থেকে উড়ে আসে এই অঞ্চলে। বিভিন্ন পশুপ্রেমী সংস্থা ও এনজিওর মাধ্যমে আমাদের বন কর্মীরা দামোদর তীরবর্তী এলাকাগুলিতে নজরদারি চালাচ্ছেন। আশা করা যাচ্ছে এবছর পূর্ব বর্ধমান জেলায় পরিযায়ী পাখির আসার সংখ্যা আগের বছরের তুলনায় অনেকটাই বাড়বে।’

আরো পড়ুন