ঋণদানকারী ব্যাঙ্কের কর্মীদের বিরুদ্ধে ঋণগ্রহীতার মেরে মাথা ফাটিয়ে দেওয়ার অভিযোগ মেমারিতে, আলোড়ন

Souris  Dey

Souris Dey

ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,বর্ধমান: ঋণের কিস্তি আদায় করতে এসে ঋণদানকারি ব্যাংকের দুই আদায়কারীর বিরুদ্ধে ঋণগ্রহীতা ও তাঁর স্ত্রী পুত্র কে বেধড়ক মারধর করার অভিযোগ দায়ের হল পূর্ব বর্ধমান জেলার পুলিশ সুপারের দপ্তরে। সোমবার বিকেলের এই ঘটনায় রীতিমত চাঞ্চল্য ছড়ায় মেমারি থানার বোহার এলাকায়। অভিযোগকারিণী আক্রান্ত গৌরী হালদার জানিয়েছেন, সোমবার বিকেলে জনা ব্যাংক মেমারি শাখার দুই কর্মী আমারুল ইসলাম ও চয়ন ঘোষ প্রচণ্ড ক্ষিপ্ত ও উত্তেজিত অবস্থায় বিকেল ৪টা নাগাদ তার বাড়িতে হাজির হয়। তার স্বামী সুদেব হালদারের নাম করে গালাগাল দিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে আসতে বলে তারা। এরই সঙ্গে অতি বাজে ভাষায় তারা হুমকি দিতে থাকে আজ যদি কিস্তির টাকা তারা না পায় তাহলে তাদের প্রাণে মেরে ফেলবে তারা।

বিজ্ঞাপন

এই সময় ব্যাংকের মাসল ম্যানদের আটকাতে গৌরী দেবী এগিয়ে গেলে তার শাড়ি ধরে টানাটানি করে হেনস্থা করে তারা। এমনকি তার পরনের ব্লাউজ টেনে ছিঁড়ে দেয় এবং প্রতিরোধ করতে গেলে তাকে থাপ্পড় মারে ওই দুই মাসল ম্যান বলে অভিযোগ। গৌরী হালদার অভিযোগ করেছেন, তিনি মাটিতে পরে গেলে তাঁকে বাঁচাতে তাঁর স্বামী সুদেব হালদার ও তার পুত্র ঘর থেকে বেরিয়ে এলে ওই দুই ব্যাংকের কর্মী বলে পরিচয় দেওয়া গুন্ডা তাঁর ছেলেকে ও তাঁর স্বামীকে বেধড়ক মারধর করে। বাড়ির ভিতর থাকা একটি মুগুর দিয়ে মেরে সুদেব হালদারের মাথা ফাটিয়ে দেয় বলে অভিযোগ। রক্তাক্ত অবস্থায় সুদেব বাবু মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।

চিৎকার চেঁচামেচি শুনে প্রতিবেশীরা ছুটে আসলে আমারুল ইসলাম ও চয়ন ঘোষ নামে দুই ঋণ আদায়কারী মাসল ম্যান মোটর সাইকেল নিয়ে পালিয়ে যায়। অভিযোগ ওই দুই দুষ্কৃতী যেতে যেতে হুমকি দিয়ে যায়, যে ‘মেমারি তে তোদের দেখতে পেলে প্রাণে মেরে ফেলবো।’ এরপর স্বামী ও পুত্রকে উদ্ধার করে স্থানীয় পাহাড়হাটি গ্রামীণ স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে গেলে সুদেব হালদারকে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করে দেয় চিকিৎসক। সেখানে মাথায় স্ক্যান করার পাশাপাশি মাথায় বেশ কয়েকটি সেলাই পড়ে সুদেব বাবুর। 

সুদেব বাবু বলেন, তিনি জনা ব্যাংকের মেমারি শাখা থেকে মাসিক কিস্তিতে পরিশোধের শর্তে ত্রিশ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। তাঁর দুটি পায়ে অসুবিধার কারণে ভালোভাবে হাঁটতে পারেন না। বিভিন্ন মেলায় বাদাম বিক্রি করে সংসার চলে তাঁর। লকডাউনে আর্থিক পরিস্থিতি খারাপ হয়ে যাওয়ায় তিনি ঋণ নিয়েছিলেন। ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে কোনো কোনো মাসে দু একদিন দেরী হয়ে যাচ্ছিল গত দুমাস যাবৎ। এদিন কিস্তির অর্ধেক টাকা ব্যাংকের আদায়কারীদের হাতে দিয়েও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পুরো টাকা দিতেই হবে বলে গালাগাল, খিস্তি দিয়ে এমনকি আমার বউয়ের শাড়ি, ব্লাউজ ছিঁড়ে থাপ্পড় মারে। আমার মাথা মেরে ফাটিয়ে দেয় ওরা। এমনকি আমার ছেলেকেও ঘুঁষি মারে।

আমার মাথায় স্ক্যান হয়েছে। সেলাই পড়েছে।  পাড়ার লোকজন চলে এলে বাইক নিয়ে পালিয়ে যেতে যেতে ওরা হুমকি দিয়ে যায় মেমারি তে দেখতে পেলে প্রাণে মেরে ফেলবে আমাদের। আমার পরিবারের লোকজন আজ জেলা পুলিশ সুপার অফিসে গিয়ে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছে। এই দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে যদি ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হয় আমি আদালতের শরণাপন্ন হবো। ওদের কতো বড় আস্পর্ধা আমি দেখবো।” মেমারি থানা সূত্রে জানা গেছে, এই ধরনের কোনো অভিযোগ থানায় জমা পড়েনি। তবে মঙ্গলবার বর্ধমানে পুলিশ সুপার অফিসে বোহার এলাকার এক বাসিন্দা একটি অভিযোগ জমা করেছেন মারধরের। পুলিশ খোঁজ খবর নিয়ে দেখছে।

আরো পড়ুন