বর্ধমানে মারণ ভাইরাসে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে পথ কুকুরের, অবিলম্বে টিকাকরণের আবেদন জানিয়ে চিঠি জেলাশাসককে

Souris  Dey

Souris Dey

ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান: সম্প্রতি ব্যাপক হারে পথ কুকুরদের মৃত্যুর কারণে জেলা জুড়ে আতঙ্ক বাড়ছে। কয়েক মাস আগেই পূর্ব বর্ধমান জেলার কালনা মহকুমায় প্রচুর কুকুরের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছিল। খোদ বর্ধমান শহরেও গত এক মাসে প্রচুর কুকুরের মৃত্যু ঘটেছে বলে খবর। সরকারি পশু হাসপাতাল থেকে শুরু করে পশু প্রেমী একাধিক সংস্থা সুত্রে জানা গেছে, প্রায় প্রতিদিন পাঁচ থেকে ছটি কুকুরকে অসুস্থ অবস্থায় পাওয়া যাচ্ছে। পশু হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে,  ক্যানাইন ডিস্টেম্পার নামে একটি ভাইরাস দ্বারা কুকুরেরা আক্রান্ত হচ্ছে। এটি একটি সংক্রামক এবং গুরুতর রোগ যা শ্বাসযন্ত্র, গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল এবং স্নায়ুতন্ত্রকে আক্রমণ করে। এছাড়াও পার্ভো নামে একটি মারাত্মক ভাইরাসের আক্রমণেও বহু কুকুর মারা যাচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রেই সঠিক সময়ে চিকিৎসা না পেয়ে, এবং অনেক সময় পর্যাপ্ত চিকিৎসা ব্যবস্থা না মেলায় অনেক কুকুরই মারা যাচ্ছে বলে পশু হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে।

বিজ্ঞাপন

আর এই অবস্থায় সার্বিকভাবে এই পথ কুকুরদের অবিলম্বে টিকাকরণের প্রয়োজনীয়তার কথা জানিয়ে জেলাশাসকের কাছে আবেদন জানালো ভয়েস ফর দ্যা ভয়েসলেস নামে একটি পশু প্রেমী সংস্থা। সংস্থার সভাপতি অভিজিৎ মুখার্জি বলেন, ‘পরিস্থিতি খুবই উদ্বেগজনক। প্রতিদিন ক্যানাইন ডিস্টেম্পার ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া কুকুরদের জন্য তাদের সংস্থায় গড়ে ৯ থেকে ১০টি ফোন আসছে। আমরা আমাদের সীমিত ক্ষমতার মধ্যে এই অবস্থার সঙ্গে লড়াই করার চেষ্টা চালাচ্ছি। তবে আমাদের আশঙ্কা এই পরিস্থিতিতে অবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে খুব শীঘ্রই ভয়াবহ আকার নিতে পারে।

মাস দুয়েক আগে কালনাতে এই রোগে প্রচুর কুকুর মারা গেছে। বর্ধমানেও প্রতিদিন প্রচুর কুকুর এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এই অবস্থায় অবিলম্বে ব্যাপকহারে পথ কুকুরদের ক্যানাইন ডিস্টেম্পার ভাইরাসের ভ্যাকসিন যাতে দেওয়া যায় তার জন্য জেলা প্রশাসনের কাছে আবেদন জানিয়ে ই-মেল করেছি। এই ভ্যাকসিন দেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত প্রশিক্ষিত লোকের প্রয়োজন হলে সেটাও আমাদের সংস্থা মেটাবে বলে জানানো হয়েছে। আমরা আরও জানিয়েছি, পরিস্থিতি সরজমিনে খতিয়ে দেখতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে অবিলম্বে একটি ভেটেরিনারি মেডিক্যাল টিম তৈরি করে রাস্তায় নামানো উচিত। সেক্ষেত্রে আমাদের সংস্থা প্রশাসনের সঙ্গে সব ধরনের সহযোগিতা করবে।’

অন্যদিকে বর্ধমান শহরের কার্জন গেটের কাছে এবং নবাবহাট এলাকায় সরকারি দুটি পশু চিকিৎসালয় সূত্রে একই উদ্বেগের কথা জানা গেছে, এই দু জায়গাতেই প্রচুর মানুষ পথ কুকুর বা তাদের পোষ্য দের নিয়ে চিকিৎসার জন্য আসছেন। একইসাথে পার্ভো ভাইরাসে আক্রান্ত কুকুরের সংখ্যাও দিনদিন বাড়ছে। তবে সরকারিভাবে পর্যাপ্ত ভ্যাকসিন না থাকায় বাইরে থেকে বেশ দামী এই ভ্যাকসিন কিনে কুকুরদের চিকিৎসা চালাতে হচ্ছে অনেকেকে।

রাজ্যের প্রাণী সম্পদ বিকাশ দপ্তরের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ বলেন,’ আমরা বিষয়টি সম্পর্কে অবগত। সামগ্রিকভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। জেলার পশু হাসপাতাল গুলোকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রণনের জন্য দপ্তরকে তৎপর থাকার জন্য বলা হয়েছে।’ বর্ধমান পুরসভার চেয়ারম্যান পরেশ চন্দ্র সরকার বলেন, ‘ আমি খোঁজ নিয়ে জানবো বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে। পরিস্থিতি বুঝে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ 

জানা গেছে, সাধারণত নভেম্বর, ডিসেম্বর মাস থেকেই ক্যানাইন ডিসটেম্পার ভাইরাসের প্রকোপ শুরু হয়। সেই সময় থেকেই পথ কুকুরদের ভ্যাকসিন দিতে শুরু করা উচিত। এই সময়ে পার্ভো ভাইরাস এবং ডিসটেম্পার ভাইরাসের প্রকোপ একই সঙ্গে লক্ষ্য করা যায়। যদিও দুটি রোগের লক্ষণ অনেকটাই আলাদা। ডিসটেম্পারের ক্ষেত্রে খুব ছোট অর্থাৎ ৯০ দিনের বাচ্চাদের মধ্যে সাধারণত এই রোগ দেখা যায় না, কিন্তু পার্ভো ভাইরাস যে কোন বয়সের কুকুরের মধ্যে দেখা দিতে পারে। ডিসটেম্পার ভাইরাস মূলত নার্ভ প্রক্রিয়াকে দুর্বল করে দেয় কুকুরের। ফলে হাত, পা কাঁপতে শুরু করে। খাওয়া বন্ধ করে দেয়, ঝিমিয়ে পড়ে। অন্যদিকে পার্ভো ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত কুকুরের পায়খানার সঙ্গে রক্ত বের হয়। খাওয়া বন্ধ করে দেয়। বমি করতে শুরু করে। দুর্বল হয়ে যায়।

ছবি – ইন্টারনেট

আরো পড়ুন