ক্রাইম

সাধুর কথায় ছেলেকে শুধরাতে রাতভর দামোদরের ধারে ফেলে রেখে এলো বাবা মা, পড়ে গ্রেপ্তার তিন

ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,রায়না: ছেলে নাকি চঞ্চল, তাই তাকে শোধরাতে এক সাধুর নিদান অনুযায়ী সারারাত দামোদরের পাড়ে নির্জন এলাকায় ছেড়ে দিয়ে চলে আসে বাবা মা। তাতেই নাকি ছেলে ঠিক হয়ে যাবে! গভীর রাতে নদীর পাড় থেকে বাচ্চা ছেলের কান্নার আওয়াজ শুনে এলাকার মানুষ ঘটনাস্থল থেকে একাকী কিশোর কে উদ্ধার করে নিয়ে আসেন গ্রামে। ভয়াবহ, অমানবিক ঘটনাটি ঘটেছে পূর্ব বর্ধমানের রায়না থানার শিয়ালি গ্রামে। গ্রামের কিছু মানুষই থানায় খবর দিলে পুলিশ পৌঁছে কিশোরকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায় রাতেই।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ জানতে পারে, স্থানীয় একটি আশ্রমের সাধুর কথায় কিশোরটি কে নদীর পারে ফেলে রেখে চলে গিয়েছিলেন তার বাবা, মা ও মামার বাড়ির দাদু। এরপরই স্বতঃপ্রণোদিত মামলা রুজু করে রায়না থানার পুলিশ অভিযুক্ত বাবা, মা ও দাদুকে বুধবার রাতেই গ্রেফতার করে। একই সঙ্গে আশ্রম কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধেও মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। ধৃতদের বৃহস্পতিবার বর্ধমান আদালতে তোলা হয়। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে রায়না থানার পুলিশ। এই ঘটনায় রীতিমত চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে এলাকায়।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, কিশোরটির বাড়ি নদিয়ার চাকদহ থানা এলাকায়। তার মামার বাড়ি পূর্ব বর্ধমানের মেমারি থানা এলাকায়। মামার বাড়ির সূত্র ধরেই ছেলেটির পরিবারের রায়নার শিয়ালি গ্রামের ওই আশ্রমে যাতায়াত ছিল। প্রায় ২০ বছর ধরে শিয়ালিতে আশ্রমটি রয়েছে। তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র ওই কিশোর পুলিশকে জানিয়েছে, আশ্রমের সাধুর কথাতেই তার বাবা, মা ও দাদু নদীর পারে তাকে ফেলে রেখে পালিয়ে গিয়েছিল। এমনকি কিশোরকে উদ্ধারের সময় পুলিশ জানতে পারে ওই আশ্রমেই কিশোরের মা রয়েছে। সেই মতো পুলিশ ওই আশ্রমে খোঁজ নিতে গেলে বাধা পায়।

পুলিশের দাবী, মহিলা আশ্রমিকরা তাদের দীর্ঘক্ষণ আটকে রেখেছিল। পরে আরও পুলিশ গিয়ে ওই মহিলাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্যে রায়না থানায় নিয়ে আসে। পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা করে ওই মহিলাকে প্রথমে গ্রেফতার করে।পরে শক্তিগড় থেকে কিশোরের বাবা ও মামার বাড়ির দাদুকেও গ্রেফতার করে। পুলিশের দাবী, পরে পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে কিশোরের মা দেবস্মিতা বিশ্বাস জানায়, আশ্রমের উপর তাদের অগাধ ‘বিশ্বাস’। বেশ কয়েকবার আশ্রমের জন্যেই তাঁদের ছেলে বিপদের হাত থেকে বেঁচে ফিরেছে। ছেলে দিনের পর দিন চঞ্চল হয়ে উঠছে, তা শোধরানোর জন্যেই তাঁরা নদিয়া থেকে ওই আশ্রমে এসেছিলেন। নদীর পাড়ে ছেলে রাত কাটালে নাকি তার দুষ্টুমি কমে যাবে, সে কথা শুনেই বিশ্বাসভরে ছেলেকে নদীর পাড়ে রেখে দিয়ে চলে এসেছিলেন।

মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ওম প্রকাশ সিং বলেন, ‘বাচ্চারা এই বয়সে চঞ্চল হবেই বাড়াবাড়ি কিছু হলে চিকিৎসা বিজ্ঞানে তার সমাধানও আছে।কিছু কিছু মানুষ আস্থা নিয়ে এইসব ফেথহিলারদের কাছে যায় আর তাদের অন্ধবিশ্বাসের জন্য এইসব ফেথহিলাররা এই ধরনের ঘটনা ঘটায়। আমাদের এই কুসংস্কার থেকে বের হতে হবে।’ পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞানমঞ্চের বর্ধমান শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তা চন্দ্রনাথ বন্দোপাধ্যায় জানান, ‘শিশুদের মন সবসময় চঞ্চল প্রকৃতির হয়। অন্ধবিশ্বাসের কবলে পরে সমস্যা সমাধানের পরিবর্তে বাবা মায়েরা অনেকসময় তা আরও জটিল করে তোলেন।  অনেককেই অনেক সময় প্রিয়জনকেও হারাতে হয় এই কারণে। আসলে এগুলো একটা মানসিক বিকার। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।