ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,রায়না: একজনের বয়স দশ, তৃতীয় শ্রেণির পড়ুয়া। আরেকজনের ১১, সে চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র। আচমকাই দুই ভাই মিলে নিছকই একটু ঘুরে আসি ভেবে সাইকেল নিয়ে বাড়ির কাউকে কিছু না জানিয়ে বেরিয়ে পড়ে বুধবার। তখন বেলা প্রায় ১২টা। দুপুর ২টা নাগাদ বাড়ির লোকের খেয়াল হয়, খাবার সময় পেরিয়ে যাচ্ছে ছেলেগুলো গেলো কোথায়। ব্যাস, এরপরই সবাই খোঁজাখুঁজি শুরু করে দেন পরিবারের সকলে। বাড়ির থেকে প্রায় ১০কিলোমিটার এলাকার সমস্ত জায়গা তন্নতন্ন করে শিশু দুটোকে খুঁজতে শুরু করেন সবাই।
এরইমধ্যে নানান দুশ্চিন্তায় বুক ফাটতে শুরু করেছে মায়ের। ঘণ্টার পর ঘণ্টা কেটে গেলেও ছেলেদের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। সন্ধ্যা প্রায় সাতটা নাগাদ আচমকাই পূর্ব বর্ধমানের রায়না থানার এক পুলিশ আধিকারিক পরিবারের একজনের ফোনে ফোন করে জানায়, দুটি ছেলেকে তারা তাদের হেফাজতে রেখেছে। তারা সুস্থ আছে। আপনারা এসে আপনাদের বাচ্চা দের নিয়ে যান। আর এরপরই কালবিলম্ব না করে ঝড়ের গতিতে পরিবারের লোকজন বাঁকুড়া জেলার সোনামুখী থানার ধানশিমলা গ্রাম থেকে পৌঁছে যান প্রায় ৪৫ কিলোমিটার দূরে রায়না থানার গৌরাঙ্গ রোড এলাকায়। সেখানেই পুলিশের হেফাজত থেকে নিজেদের সন্তানদের ফিরে পান দুশ্চিন্তাগ্রস্ত মায়েরা।
শিশু দুটির মধ্যে একজনের মামা হিমাদ্রী ব্যানার্জি বলেন, ’ বর্ধমানে আমাদের আত্মীয়ের বাড়ি আছে। সম্ভবত দূরত্ব বুঝতে না পেরে ওরা বেলা ১২টা নাগাদ সাইকেল নিয়ে সেখানে যাবার জন্য বেরিয়ে পড়েছিল। দুপুর ২টো নাগাদ আমাদের খেয়াল হয় ছেলেগুলো কোথায় গেলো। বাড়ির আশপাশে খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে আরো লোকজন নিয়ে প্রায় ১০কিলোমিটার এলাকায় জঙ্গল থেকে শুরু করে নদী, নালা ও সম্ভাব্য সব জায়গায় আমরা তন্নতন্ন করে খুঁজি। কিন্তু তারপরও কোন হদিস পাওয়া যায়নি। সকলেই খুব দুশ্চিন্তায় পড়ে যায়। পুলিশ কেও জানানো হয় বিষয়টি।
এরপর সন্ধ্যা বেলায় রায়না থানা থেকে ফোন করে আমাদের জানায়, ছেলেদুটো তাদের হেফাজতে রয়েছে। আমাদের ধরে প্রান ফিরে আসে। সঙ্গে সঙ্গে আমরা ছুটে যাই গৌরাঙ্গ রোড মোড়ে। সেখানে গিয়ে পুলিশের সঙ্গে কথা বলে আমাদের ছেলে দুটোকে বাড়ি নিয়ে আসি। স্থানীয় মানুষ এবং রায়না থানার পুলিশের সহযোগিতায় আমরা আমাদের ছেলেদের সুস্থ অবস্থায় ফিরে পেলাম আজ। অসংখ্য ধন্যবাদ সকলকে।’
বাবরকপুর এলাকার বাসিন্দা হানিফ শেখ বলেন, ’ বুধবার সন্ধ্যায় দুটো বাচ্চা ছেলে সাইকেল নিয়ে যাচ্ছিল। স্থানীয় লতিফপুরের বাসিন্দা শেখ বাবু বাচ্চা দুটোকে দেখে জানতে চায় তারা কোথায় যাবে। প্রথমে ভেবেছিল এলাকায় অনুষ্ঠান চলছে সেখানে ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত আসছে, হয়তো স্থানীয় এরা, ফাংশান দেখতে যাচ্ছে। কিন্তু বাচ্চা দুটো কিছু বলতে না পারায় তার সন্দেহ হয়। তখন সে তাদের জিজ্ঞাসা করে তাদের খিদে পেয়েছে কিনা। তারা হ্যা বললে তাদের মিষ্টি কিনে খাওয়ায় বাবু। পরে আরো খেতে চাইলে সেটাও খাওয়ায় সে। এরপর বাচ্চা গুলোর কাছে তাদের বাড়ির ফোন নম্বর জেনে অনেকবার চেষ্টায় যোগাযোগ করা যায়। রায়না থানার পুলিশ কে খবর দেওয়া হলে পুলিশের সহযোগিতায় শিশু দুটির বাড়ির লোকেদের ডেকে পাঠিয়ে অবশেষে তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয় শিশু দুটোকে।’