ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক, বারাসাত: ভারতবর্ষকে হিন্দু রাষ্ট্র ঘোষণা করা কেন প্রয়োজন, এমন দাবি উঠল প্রণব কন্যা সংঘে। ধর্মের ভিত্তিতে ভারত ভাগ হল। মুসলিমরা পেল পাকিস্তান আর তাদের রাষ্ট্র ধর্ম হল ইসলাম। ভারত ছিল অলিখিত হিন্দু রাষ্ট্র। পরে ১৯৭৬ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ৪২ তম সংবিধান সংশোধন করে জরুরী অবস্থার মধ্যে ‘সেকুলার’ ও ‘সোস্যালিস্ট’ শব্দ দুটি যুক্ত করানো করেন। কিন্তু ভারতের মধ্যে জেহাদি শক্তির আস্ফালন যেভাবে বাড়ছে দিন দিন, তা উস্কে দিচ্ছে পুনরায় ভারত ভাগের স্মৃতিকে। এমন পরিস্থিতিতে ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্র কেন ঘোষণা করা উচিত – এই নিয়ে আজ ধর্মসংস্কৃতি সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছিল। এই বিষয় নিয়ে বক্তব্য রাখেন ‘মৌলানা আবুল কালাম আজাদ বিশ্ববিদ্যালয়’-এর অধ্যাপিকা ড. অলি ব্যানার্জি ও ‘ভারতীয় কিষাণ সংঘ’-এর পশ্চিমবঙ্গ প্রান্তের প্রচার প্রমুখ ও ‘ভারতীয় কিষাণ বার্তা’ পত্রিকার সম্পাদক মিলন খামারিয়া।
ড. ব্যানার্জি বলেন, “মুসলিম শাসনে ভারতের হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষদের উপর বারবার আঘাত করা হয়েছে। আমাদের মন্দির ভাঙা হয়েছে। নারী নির্যাতন ও শিশু হত্যা করা হয়েছে। ‘ডাইরেক্ট একশান ডে’-এর মাধ্যমে তৎকালীন অখণ্ড ভারতের বঙ্গপ্রদেশের প্রধানমন্ত্রী সুরাবর্দী পাকিস্তানের দাবিতে হিন্দু নিধন করেছেন। নারীদের কেটে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল ভিক্টোরিয়া কলেজের জানালায়। সে ইতিহাস বাঙালি আজ ভুলে গেছে। ভারত হিন্দু রাষ্ট্র না হলে এই জেহাদিরা আবার এই দেশকে টুকরো করার সুযোগ খুঁজছে ও খুঁজবে। ভারতীয় সভ্যতা ও সংস্কৃতি বাঁচানোর জন্য অবিলম্বে ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্র ঘোষণা করা উচিত বলে আমি মনে করি।”
মিলন বলেন, “অবিভক্ত ভারতে ২৬ শতাংশ মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ ছিলেন। তার মধ্যে ১৬ শতাংশ মানুষ মিলে পাকিস্তান গঠন করলেন। বাকি ১০ শতাংশ মানুষ ভারতেই রয়ে গেলেন। ১৬ শতাংশ মানুষ মিলে ভারতের ৩০ শতাংশ জমি দখল করে নিল। তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানে ১৯৪৭ সালে ছিল ২৩ শতাংশ হিন্দু আর পূর্ব পাকিস্তানে ছিল ২৮ শতাংশ হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ। আজ পাকিস্তানে হিন্দু আছে ১.৫ শতাংশ আর পূর্ব পাকিস্তান তথা বর্তমান বাংলাদেশে আছে ৭ শতাংশ হিন্দু। ১৯৫০ সালের ৮ এপ্রিল নেহেরু-লিয়াকৎ চুক্তিতে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের রক্ষা করার কথা বলা হয়েছিল। ভারত সে চুক্তি মেনেছে। তাই আজ মুসলিম জনগণের সংখ্যা ৯.৮ শতাংশ থেকে বেড়ে(২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী ছিল ১৪ শতাংশ-এর বেশি) প্রায় ১৭ শতাংশ হয়ে গেছে।
কিন্তু পাকিস্তান ও বাংলাদেশ যে চুক্তি মানেনি তার প্রমাণ দিচ্ছে তাদের দেশের জনগণনার তথ্যই। তাহলে কোথায় গেল সেই সব হিন্দুরা? হয় জোর করে ধর্মান্তরিত করা হয়েছে, না হলে মেরে ফেলা হয়েছে কিংবা তারা পালিয়ে ভারত বা অন্যান্য রাষ্ট্রে চলে এসেছেন। যেখানেই হিন্দুরা সংখ্যায় কমে গেছে সেখান থেকেই তারা বিতাড়িত হয়েছেন। সনাতনীরা নিজেরা ভালো থাকার পাশাপাশি অন্যান্য ধর্মের মানুষের ভালো থাকার কথাও বলেন। কিন্তু অন্যান্য ধর্মের মানুষ যদি তাদের ‘কাফের’ ভাবে, মারতে চায়, তাহলে তাদের রক্ষা করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। তাই ভারতের সনাতনীদের সুরক্ষা দেবার জন্য এবং বিশ্বে শান্তি ও স্থিতি বজায় রাখার জন্য ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্র ঘোষণা করা উচিত। ভারতের মানুষই একমাত্র বলতে পারে, ‘বসুধৈব কুটুম্বকম’ অর্থাৎ বিশ্বের সবাই আমার আত্মীয়। তাই ভারতকে রক্ষা করতে গেলে ভারতের হিন্দুদের রক্ষা করতে হবে। আর ভারত হিন্দু রাষ্ট্র হলে তবেই হিন্দুরা সুরক্ষিত থাকবে বলে আমি মনে করি।”
গত ৩১ ডিসেম্বর’২৪ থেকে ৫ জানুয়ারী’২৫ পর্যন্ত চলছিল এই ‘পঞ্চান্নতম বার্ষিক শ্রী শ্রী ত্রিশূলোৎসব ও ধর্মসংস্কৃতি সম্মেলন’। মঙ্গল আরতি ভোগ আরতি, শ্রীমৎ ভাগবতগীতা পাঠ, বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা, শিক্ষা সম্মেলন, মাতৃ সম্মেলন, হিন্দু সমাজে নারীর মর্যাদা, লাঠিখেলা, অন্নকূট ভোগ উৎসব ইত্যাদি ছিল এই ৬ দিনের সম্মেলনের বিষয়বস্তু। বহু মানুষ এই উৎসব ও সম্মেলনে যোগদান করেছেন।
এই ত্রিশূলোৎসব ও ধর্মসংস্কৃতি সম্মেলন নিয়ে প্রণব কন্যা সংঘ-এর অধ্যক্ষা সন্ন্যাসিনী জ্ঞনানন্দময়ী মাতাজী বলেন, “হিন্দুদের সংঘবদ্ধ হওয়া উচিত। স্বামী প্রণবানন্দজী এটাই চেয়েছিলেন। সংঘবদ্ধ না হলে পশ্চিমবঙ্গের হিন্দুরা আর কত দিন এই রাজ্যে শান্তিতে বসবাস করতে পারবেন, তা নিয়ে সন্দেহ আছে। দিকে দিকে হিন্দুদের উপর অত্যাচার বাড়ছে। তাই সবাই এগিয়ে আসুন, আমাদের এই রাজ্যকে বাঁচাই জেহাদিদের গ্রাস থেকে। গুরু মহারাজ্যের ভাব শিষ্য শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জির পাকিস্তানের গ্রাস থেকে লড়াই করে ছিনিয়ে আনা এই পশ্চিমবঙ্গে বর্তমান ও আগামী প্রজন্মের হিন্দুরা যেন সুরক্ষিত থাকে, সেই বিষয়ে আমরা সবাই যেন সচেতন হই। তবেই এই ত্রিশূলোৎসব ও ধর্মসংস্কৃতি সম্মেলন করা সার্থক হবে।”