ক্রাইম

নদীর বাঁধেই বালির স্টক! বাঁধের রাস্তা দিয়েই চলছে ভারী বালির গাড়ি, ধ্বসের আতঙ্কে ঘুম উড়েছে গ্রামবাসীদের

ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক, গলসি: গলসির শিল্যাঘাটে সরকারি নিয়ম ভেঁঙে ভাড়ি অর্থাৎ ১০ চাকা ১২ চাকা ১৬ চাকা বালির গাড়ি চলছে দামোদরের বাঁধে দিয়ে। যাতে সিঁদুরের মেঘ দেখছেন এলাকার হাজার হাজার মানুষ। স্থানীয় পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের উদাসীনতার জেরে যেকোন সময় ভেঁঙে পরতে পারে দামদরের বাঁধ  বলে আশঙ্কা করছেন আশপাশের গ্রামের মানুষ। এমনকি বিপদের চিন্তায় রাতের ঘুম উড়েছে দামোদর বাধ সংলগ্ন ছয় সাতটি গ্রামের মানুষের। তাদের অনেকেরই প্রশ্ন, বেআইনিভাবে বালির গাড়ি চলাচলের জন্য বাঁধ ভেঁঙে এলাকায় বন্যা হলে তার দায় কে নেবে? স্থানীয় প্রসাশন ও ভুমি দপ্তর কি ঘুমিয়ে আছে? যেখানে রাজ্য সরকারের নিষেধাজ্ঞা আছে সেখানে কিভাবে চলছে শ’য়ে শ’য়ে বালির গাড়ি? কাদের অঙ্গুলি হেলনে ভাঙা হচ্ছে সরকারি নিয়ম প্রশ্ন তুলছেন সাধারণ মানুষ।

 

একদিকে ডিভিসির জলাধার থেকে জল ছাড়া হয়েছে, অন্যদিকে বর্ষার বৃষ্টির ফলে দামোদর নদীর জলস্তর বেড়েছে। পূর্ব বর্ধমানের গলসি ১ ব্লকের শিল্যা থেকে লোয়া রামগোপালপুর হয়ে গোহগ্রাম পর্যন্ত দামোদরের জল বাঁধের গা ছুঁয়েছে। কিন্তু এরই মধ্যে একদল বালি মাফিয়াদের দৌরাত্ম্যে রাতে ঘুম উড়েছে দামোদরের বাঁধ বরাবর বেশ কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দাদের। অভিযোগ, লোয়া রামগোপালপুর পঞ্চায়েতের বিরিংপুর মৌজায় তালতলা বা বাবলাতলা এলাকায় নদীর বাঁধের উপরেই মজুদ করা হয়েছে বিপুল পরিমাণ বালি। আর সেই বালি লোডিং করতে বাঁধের উপর দিয়ে প্রতিদিন দেদারে চলছে শতশত গাড়ি। যেখানে ১০ চাকা, ১২ চাকা থকে ১৬ চাকা গাড়ি ভর্তি করে বালি নিয়ে যাচ্ছে। যা নিয়ে এলাকায় ব্যাপক ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের হস্তক্ষেপের দাবী করেছেন স্থানীয়রা।

সেচ দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বর্ষার সময় নদী বাঁধের উপর দিয়ে ভারী যান চলাচল নিষিদ্ধ থাকে। এমনকি নদীর বাঁধের উপরে বালি মজুদ রাখাও বেআইনি। কিন্তু তারপরেও শিল্যা থেকে বাঁধে উঠে প্রায় চার কিলোমিটার রাস্তা পেরিয়ে তালতলা ঘাটে বালি নিতে আসছে প্রচুর গাড়ি। পরে সেই গাড়িগুলোই বালি লোড করে আবার বাঁধের রাস্তা দিয়ে শিল্যা হয়ে পারাজ মোড়ে পৌঁছে যাচ্ছে। ফলে বাঁধের সমূহ ক্ষতির আশঙ্কা করছেন স্থানীয় গ্রামবাসীরা। গ্রামবাসীদের একাংশের অভিযোগ, সম্পূর্ন বেআইনিভাবে নদীর জায়গায় বালি মজুদ করা হয়েছে। এলাকাবাসীদের অনেকেই প্রশ্ন তুলেছে, কিভাবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সেই মজুদ বালির চালান ইস্যু হয়ে গেল? কিভাবেই বা সেই বালিই নদীর বাঁধ ব্যবহার করে গাড়িতে করে সরবরাহ করা চলছে? সেচ দপ্তর থেকে ভূমি রাজস্ব দপ্তর কিংবা পুলিশ কেউই কি এই বেআইনি কারবারের কিছুই জানেনা? নাকি তাদের চোখ বন্ধ রাখার ব্যবস্থা করে দিয়েছে বালি কারবারিরা?

গলসি ১ ব্লক ভূমি রাজস্ব দপ্তরের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই বিরিংপুর মৌজায় তালতলা এলাকায় মজুদ বালির বিষয়ে তদন্ত করতে একটি থ্রি ম্যান্স কমিটি গঠন করা হয়েছে। দ্রুত তারা রিপোর্ট জমা দেবে। সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ করা হবে। অন্যদিকে সেচ দপ্তরের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, বর্ষার সময় নদী বাঁধের উপর দিয়ে ভারী যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়। পাশাপাশি নদীর বাঁধের উপর কখনোই বালি মজুদ করা যায়না। সেটা বেআইনি। ইতিমধ্যেই বিতর্কিত এই এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কাছে রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে।

প্রসঙ্গত তালতলায় যে জায়গায় বালি মজুদ করা হয়েছে তার আশপাশে বেশ কয়েকটি গ্রাম রয়েছে। সেগুলো হলো শিল্যা, কাশপুর, অমরপুর, আমবহুলা, বিরিংপুর, রামগোপালপুর ইত্যাদি। এই সমস্ত গ্রামের বাসিন্দাদের অনেকে জানিয়েছেন, দামোদরের জল এখন বেড়ে বাঁধের গায়ে ধাক্কা মারছে। নদী থেকে বাঁধের দূরত্ব এখন খুব কম। এরই মধ্যে বাঁধের উপর দিয়ে ভারী ভারী বালির গাড়ি চলাচল করছে প্রতিদিন। স্বাভাবিকভাবেই আতঙ্ক বাড়ছে এলাকাবাসীর। তাদের আশঙ্কা নদীর জল আরো বাড়লে যেকোন সময় বাঁধ ধ্বসে গিয়ে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হতে পারে। ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়তে হবে এলাকার চাষীদের। এলাকাবাসীদের দাবী, সরকারি নিষেধাজ্ঞা ও এলাকার মানুষের ক্ষতির দিক বিচার করে দ্রুত পদক্ষেপ নিক স্থানীয় প্রশাসন। অবিলম্বে নদীর বাঁধের উপরে ভাড়ি বালির গাড়ি যাতায়াত বন্ধ করুক প্রশাসন।