সৌরীশ দে,পূর্ব বর্ধমান: দক্ষিণবঙ্গে জাঁকিয়ে শীত পড়তে এখনও কয়েকদিন অপেক্ষা করতে হবে বলে আবহাওয়া দপ্তর সূত্রে জানা গেছে। তবে এরই মধ্যে রাজ্যের বেশ কয়েকটি জায়গার পাশাপাশি পূর্ব বর্ধমানের দামোদর নদের বিস্তীর্ণ এলাকায় আস্তানা গাড়তে হাজার হাজার মাইল পথ অতিক্রম করে এসে হাজির হয়েছে পরিযায়ীরা। পূর্ব বর্ধমানের বড়শুল থেকে ইদিলপুর পর্যন্ত দামোদর নদ ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকায় দেখা মিলছে প্রচুর পরিযায়ী পাখিদের।
এই সমস্ত পাখিদের মধ্যে বেশ কয়েকটি প্রজাতির পাখিরা প্রধানত জলাশয়, খাল বিল, নদ নদীর জলেই নিজেদের বাসা তৈরি করে দলবদ্ধভাবে থাকে। জল থেকেই তাদের প্রয়োজনীয় খাবার সংগ্রহ করে নেয়। আবার কিছু প্রজাতির পাখিরা নদীর পার্শ্ববর্তী চাষজমি তে সারাদিন খাবার সংগ্রহ করে বেড়ায়। কিছু সময় এরা জলেও থাকে। স্থানীয় এলাকাবাসী ও বর্ধমান অ্যানিম্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটির সম্পাদক অর্ণব দাস জানিয়েছেন, নভেম্বরের গোড়া থেকেই একটি দুটি করে পরিযায়ী পাখির আসা শুরু হয়েছে এই সমস্ত এলাকায়। তবে ধীরে ধীরে এদের সংখ্যা এখন অনেকটাই বেড়েছে।
যে সমস্ত পরিযায়ী পাখি ইতিমধ্যেই দামোদরের বুকে নেমেছে তাদের মধ্যে অন্যতম হলো রুডি শেল ডাক (rudy shell duck) অর্থাৎ চকা চখি, অস্প্রে (osprey) যাকে মাছ মুরাল বলা হয়। রেড ক্রিস্টেড পচার্ড (red crested pochard) বা রাঙা মুদী, গাড ওয়াল (gadwoal), বার হেডেড গুস (bar headed goose) দাগী রাজহাঁস। এছাড়াও হাঁস প্রজাতির একাধিক পরিযায়ী পাখিদেরও এখানে দেখা মিলছে যেমন গ্রে লেগ গুস (grey leg goose), কটন পিগমি গুস (cotton pigmy goose), স্মল প্যাটিনকোল (small patincole) ও সরাল (lesser whisel duck) এরা প্রধানত নদী, খাল বিলের জলে থাকে।
অন্যদিকে ব্লু থ্রোট (blue throte) নীল গলা ফিদ্দা, রুবি থ্রোট (Ruby thorote) লাল গলা ফিদ্দা, হোয়াইট আই বুচার্ড (white eye buzzard) সাদা চোখের বাজ, গ্লসি আইবিস (glossy ibis) এরা নদীর পার্শ্ববর্তী চাষজমিতে সারাদিন খাবার সংগ্রহ করে বেড়ায়। অল্প সময়ই জলে কাটায়। এই সমস্ত পাখিদের দল তিব্বত, সাইবেরিয়া, মায়ানমার, দক্ষিণ আফ্রিকা সহ পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার মাইল পথ উড়ে আসে খাবারের সন্ধানে। সাধারণত নভেম্বর থেকে প্রায় ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ পর্যন্ত এই পরিযায়ীদের দল দামোদর নদের বিস্তীর্ণ এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আস্তানা গেড়ে বসবাস করে। স্বাভাবিকভাবেই জমিয়ে শীত পড়ার আগেই শতাধিক পরিযায়ী পাখিদের ভিড় শুরু হওয়ায় স্বস্তির নিশ্বাস ফেলছেন প্রকৃতিপ্রেমী থেকে পরিবেশবিদরা।