ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,বর্ধমান: জমিতে নাড়া(পড়ে থাকা খড় বা ধান গাছের অংশ) পোড়ানোর সময় জমিতেই অসুস্থ হয়ে পড়ে গিয়ে মৃত্যু হয়েছিল মেমারির কলনবগ্রাম এলাকার বাসিন্দা দিলীপকুমার চক্রবর্তীর। ঘটনার পর খবর পেয়ে মেমারি থানার পুলিশ মৃত ব্যক্তির দেহ জমি থেকে উদ্ধার করে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন ময়না তদন্তের জন্য। মৃত ব্যক্তির সৎকারের জন্য স্থানীয় দলুইবাজার ২পঞ্চায়েতের কাছে শংসাপত্র সংগ্রহ করেছিলেন পরিবারের লোকজন। আর সেই শংসাপত্র কে ঘিরেই তৈরি হয়েছে বিতর্ক।
সেখানে পঞ্চায়েত প্রধানের সাক্ষর করা থাকলেও শংসাপত্রে মৃত ব্যক্তি দিলীপকুমার চক্রবর্তীর মৃত্যুর কারণ দেখানো হয়েছে ‘কার্ডিও রেসপিরেটরি ফেলিওর’। এছাড়াও মৃত্যুর স্থান হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে দিলীপ বাবুর নিজ বাসভবন।
যদিও দিলীপ বাবু সেদিন জমিতে নাড়া পোড়ানোর সময় সেই আগুন তার পাশের জমিতে জড়ো করা কাটা ধানের গাদায় ছড়িয়ে পরার কারণে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ায় মাঠেই সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়েছিলেন বলে পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানতে পারা গিয়েছিল। আর তারপর সেই আগুন দিলীপ বাবুর শরীরে লেগে গেলে তিনি জমির মধ্যেই দগ্ধ হয়ে যান। স্বাভাবিকভাবেই খোদ পঞ্চায়েতের দেওয়া সেই শংসাপত্র কে নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয় দিলীপ বাবুর পরিবারের সদস্যদের মধ্যে। দিলীপকুমার চক্রবর্তীর বড় জামাই কাঞ্চন বাগচী বলেন, ‘ পঞ্চায়েত থেকে প্রধানের সাক্ষর করা দাহকার্যের জন্য দেওয়া শংসাপত্রে মৃত্যুর কারণ ও স্থান নিয়ে আমাদের আপত্তি ছিল। কারণ দিলীপকুমার চক্রবর্তীর মৃত্যু তাঁর বাড়িতে হয়নি। এবং জমিতে যাওয়ার পর তাঁর শারীরিক ঠিক কি সমস্যা হয়েছিল, কেনই বা আগুন লাগার পর তিনি জমি থেকে বেরিয়ে আসতে পারলেন না, তারও সঠিক কারণ কোনো চিকিৎসক এখনও আমাদের জানান নি।
তারপরেও পঞ্চায়েতের কাগজে শ্বশুর মশাইয়ের মৃত্যুর কারণ কার্ডিয়াক ফেলিওর দেখানো হয়েছে। আমরা পঞ্চায়েতের সঙ্গে যোগাযোগ করি। ওনারা বিষয়টি বুঝতে পেরে সেটির সংশোধন করে দেবেন বলে জানায়। আজ অর্থাৎ শুক্রবার সেই শংসাপত্র নতুন করে আমার হাতে তুলে দেয়।’ কিন্তু এবারেও সেখানে রয়ে গেছে ভুল। আর এই নিয়েই তৈরি হয়েছে বিতর্ক।
দলুইবাজার-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান ঝুমা কোঁড়ার সঙ্গে এই বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে তিনি ভুল স্বীকার করে নেন। তিনি বলেন, “টেকনিক্যাল ভুল হয়েছে। অনেক সময় আমাদের কম্পিউটারে রেডি করে রাখা শংসাপত্রের নাম ঠিকানা পাল্টে তাড়াতাড়ি পরিবারের লোকেদের হাত তুলে দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে তাড়াহুড়ার জন্যই হয়তো কিছু ভুল হয়ে গেছে। আমরা তা সংশোধন করে নতুন শংসাপত্র দিচ্ছি।” শুক্রবার মৃতের পরিজনদের ডেকে নতুন শংসাপত্রও দেন প্রধান। কিন্তু ফের ভুল থেকে গেছে শংসাপত্রে। নতুন শংসাপত্রে মৃত্যুর কারণটা না লিখলেও তাতে উল্লেখ করা হয়েছে নিজ বাসভবনে মারা গিয়েছেন বলে। মাঠের জমিতে নাড়া পোড়াতে গিয়ে যিনি মারা গেলেন, সেই জমি থেকে পুলিশ যার দেহ উদ্ধার করলো, তিনি কীভাবে নিজ বাসভবনে মারা গেলেন? স্বাভাবিকভাবেই প্রধানের সই করা দু দুবারের এই শংসাপত্র ঘিরে প্রশ্ন উঠেছে।