এবার বর্ধমান হাসপাতাল থেকে মর্গে মৃতদেহ নিয়ে যেতেও ডোমেদের তোলাবাজির অভিযোগ, চাঞ্চল্য

Souris  Dey

Souris Dey

ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,বর্ধমান: ফের শিরোনামে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল। মৃতের পরিবারের লোকেদের কাছ থেকে অনৈতিকভাবে টাকা আদায়ের একাধিক অভিযোগ জমা পড়ল পূর্ব বর্ধমান জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য অধিকর্তাদের কাছে। অভিযোগ এই ঘটনা ঘটছে খোদ বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মধ্যেই। ভুক্তভোগী মৃতের পরিজনেরা ইতিমধ্যেই তাদের অভিযোগ লিখিতভাবে জেলার মুখ্যস্বাস্থ্য আধিকারিক, জেলাশাসক, জেলা পরিষদের সভাধিপতি কে এমনকি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী কাছেও পাঠিয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

সম্প্রতি বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের মর্গে মৃতদেহ পরিবারের হাতে যথাযথভাবে ফেরত দিতে গেলে হাজার হাজার টাকা মৃতের পরিজনদের কাছ থেকে দাবি করা হচ্ছিল বলে অভিযোগ জমা পড়েছিল। সেই ঘটনায় রীতিমত চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছিল জেলার প্রশাসনিক মহলে। সেই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই ফের সামনে চলে এলো মৃতদেহ বহনকারী ডোমেদের তোলাবাজির দৌরাত্ম্য। মর্গের ঘটনায় জেলাশাসক রিপোর্ট তলব করেছিলেন মেডিক্যাল কর্তৃপক্ষের কাছে। আর তারপরেই মেডিক্যাল কলেজের সদ্য নিযুক্ত প্রিন্সিপ্যাল ডা. কৌস্তুভ নায়েক দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। অভিযোগকারীদের সামনেই রীতিমত টি আই প্যারেড করিয়ে অভিযুক্ত দের চিনহিতকরণ করার ব্যবস্থা করা হয়। ফেরত করা হয় অনৈতিকভাবে মৃতের পরিজনদের কাছে নেওয়া টাকা।

মর্গের বিভিন্ন জায়গায় জরুরি ফোন নম্বর সহ লাগিয়ে দেওয়া হয় সতর্কীকরণ বোর্ড। কিন্তু তারপরেও পরিস্থিতির তেমন কোন পরিবর্তন ঘটেনি বলেই অভিযোগ। আর বুধবার ফের নতুন করে হাসপাতাল চত্বরেই একাধিক মৃতের পরিজনদের কাছ থেকে তোলাবাজির অভিযোগ জমা পড়ায় সেই ঘটনার সত্যতাতেই সিলমোহর পড়ল বলেই মনে করছেন ওয়াকিবহাল মহল। অভিযোগকারী মুর্শিদাবাদের জিয়াগঞ্জের হাতিবাগানের বাসিন্দা সৌমেন চৌধুরি বর্তমানে বর্ধমানের বাজেপ্রতাপপুর এলাকায় ভাড়া থাকেন। তিনি জানিয়েছেন, মঙ্গলবার তাঁর বাবা শ্যামলকুমার চৌধুরির অস্বাভাবিক মৃত্যু হয় বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। দেহ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে নিয়ে যেতে গেলে চরম সমস্যায় পড়েন।

সৌমেন লিখিত অভিযোগে জানিয়েছেন, শববাহী ভ্যানের চালক যার নাম বিশু তাঁর কাছে দেড় হাজার‌ টাকা দাবি করে মৃতদেহ হাসপাতাল থেকে মর্গে নিয়ে যেতে। শেষ পর্যন্ত ৫০০ টাকায় রফা হয়। এরপর মর্গে গিয়েও সমস্যায় পড়েন তিনি। সৌমেন বলেন, “মর্গে সোনু নামে একজন ১২০০ টাকা দাবি করে। সেটা না দিলে মর্গে দেহ ঢোকাবে না। অশ্লীল ভাষায় কথা বলতে থাকে ওই ব্যক্তি। শেষ পর্যন্ত ৫০০ টাকা দিয়ে ময়নাতদন্ত করিয়ে দেহ ফেরত পাই। বাবাকে হারানোর শোক। তার উপর আমাদের অসহায় অবস্থার সুযোগ নিয়ে এইভাবে আমাদের মত দুঃস্থ পরিবারকে লুট করছে এই অসাধু লোকজন। শুনেছি ওরা হাসপাতালেই কাজ করে।”

একই অভিযোগ, মেমারি থানার কলানবগ্রামের দিলীপকুমার চক্রবর্তীর স্ত্রী রচনা চক্রবর্তীরও। গত ২৫ নভেম্বর নিজের জমির নাড়া পোড়াতে গিয়ে দগ্ধ হয়ে মারা যান দিলীপবাবু। মৃতদেহ হাসপাতাল থেকে মর্গে নিয়ে যেতে ভ্যানচালক দেড় হাজার টাকা দাবি করে। শেষ পর্যন্ত ৭০০ টাকা দেওয়ার পর দেহ মর্গে নিয়ে যায়। সেখানে গিয়েও একইরকমভাবে জুলুমবাজির শিকার হয়েছেন। মর্গেও তাঁর কাছে দেড় হাজার টাকা দাবি করা হয়। অভিযোগ, সেখানে মর্গের অফিসে যোগাযোগ করেও কোনও সুরাহা হয়নি। শেষ পর্যন্ত ৮০০ টাকা দিতে বাধ্য হন। এই বিষয়ে তিনিও এদিন জেলা শাসক, সভাধিপতি ও মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন। পাশাপাশি এদিন দীপঙ্কর ব্রহ্ম নামে মেমারির পাল্লারোড এলাকার এক বাসিন্দাও একইভাবে জুলুমবাজির শিকার হয়েছেন বলে এদিন জেলাশাসক ও মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছেন।

হাসপাতাল সুপার তাপস ঘোষ বলেন, ” মর্গে ফোন নম্বরে ফোন করার পরেও কেউ ফোন ধরেননি বা ব্যবস্থা নেয়নি এমনটা হবার কথা নয়। তবে হাসপাতাল থেকে মর্গে দেহ নিয়ে যাবার জন্য মৃতের পরিজনদের কাছে টাকা দাবি করা হচ্ছে এই বিষয়ে এখনও আমার কাছে অভিযোগ আসেনি। বিষয়টি যখন জানতে পারলাম আমরা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেব। এর আগেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।”

অন্যদিকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ কৌস্তুভ নায়েক বলেন, ‘ মর্গের অনিয়ম বন্ধে আমরা কঠোর পদক্ষেপ করেছি, তারপরেও যদি একই অভিযোগ আসে সেক্ষেত্রে এবার আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে নতুন করে কোনো অভিযোগ পায়নি। সংবাদ মাধ্যমের কাছে শুনলাম, অভিযোগ খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যেকোনো ধরনের অনৈতিক কাজে যুক্ত কাউকে রেয়াত করা হবে না।’ এদিকে সূত্রের খবর, ভুক্তভোগী মৃতের পরিজনদের অভিযোগের ভিত্তিতে ইতিমধ্যেই কড়া পদক্ষেপের পথেই হাঁটতে চলেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সেক্ষেত্রে অভিযোগ প্রমাণিত হলে চাকরি পর্যন্ত চলে যেতে পারে হাসপাতাল থেকে মর্গে মৃতদেহ বহনকারী ভ্যান চালক অভিযুক্ত ডোমের।

আরো পড়ুন