এবার বিহারের প্রাক্তন উপ মুখ্যমন্ত্রী কে হুমকি চিঠি, প্রেরক সেই বর্ধমানের বাসিন্দা

Souris  Dey

Souris Dey

ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,বর্ধমান: কিছুদিন আগেই গরু পাচার মামলায় অনুব্রত মণ্ডলকে জামিন না দিলে আসানসোল সিবিআই আদালতের বিচারককে মাদক মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকি চিঠি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল বর্ধমান আদালতের এক ল’ক্লার্কের বিরুদ্ধে। ঘটনার তদন্তে নেমে সুদীপ্ত রায় নামে এক ল’ক্লার্ক কে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। অভিযুক্ত বর্তমানে জেল হেফাজতে রয়েছে। এবার বিহারের প্রাক্তন উপ মুখ্যমন্ত্রী তথা বিজেপির রাজ্যসভা সাংসদ সুশীল মোদিকে খুনের হুমকি দিয়ে চিঠি পাঠানোর অভিযোগ সামনে আসায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। স্পিড পোস্টের মাধ্যমে সেই চিঠি মঙ্গলবার বিজেপি নেতা সুশীল মোদীর পটনার রাজেন্দ্রনগরের বাড়িতে পৌঁছয়। চিঠি পেয়েই পটনা পুলিশের সিনিয়র সুপারিনটেনডেন্ট পর্যায়ের আধিকারিককে বিষয়টি জানান তিনি। তারপরেই তদন্তে নামে বিহার পুলিশ।

বিজ্ঞাপন

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এই চিঠির প্রেরক হিসেবে নাম রয়েছে চম্পা সোম (সোমা) নামে এক মহিলার। যিনি নিজেকে তৃণমূল নেত্রী পরিচয় দিয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব বর্ধমানের রায়ান গ্রামের বাসিন্দা বলে উল্লেখ রয়েছে ওই চিঠিতে। এমনকি ফোন নম্বরও দেওয়া হয়েছে চিঠিতে। মঙ্গলবার সাংবাদিক বৈঠক করে খুনের হুমকির চিঠির বিষয়ে জানিয়েছেন সুশীল মোদী। আর এরপরই রিতিমত হৈ চৈ পড়ে যায় প্রশাসনিক এবং রাজনৈতিক মহলে। এদিকে চম্পা সোম দাবি করেছেন, তাঁকে ফাঁসাতেই আইনজীবী সুদীপ্ত রায় এই কাজ করেছেন। যেমনভাবে আসানসোলের সিবিআই আদালতের বিচারককে হুমকি চিঠি দিয়ে এই আইনজীবী ইতিমধ্যেই গ্রেফতার হয়েছেন কিছুদিন আগে।

উল্লেখ্য সুশীল মোদিকে পাঠানো এই চিঠিতে ইংরেজিতে লেখা রয়েছে, ‘আমি তৃণমূলের নেত্রী। ভারতের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নরেন্দ্র মোদী এবং অমিত শাহের পোষা কুকুর তুমি। মমতা এবং নীতীশ কুমার জিন্দাবাদ। আমি তোমাকে খুন করব।’ সুশীল মোদী জানিয়েছেন, চিঠির শেষ লাইনে লেখা হয়েছে, “৩১ আগস্ট বা তার আগে আপনাকে (সুশীলকে) খুন করা হবে।” চিঠির নীচে চম্পা সোম (সোমা) ও মোবাইল নম্বর দেওয়া হয়েছে। তবে কোনও স্বাক্ষর বা হাতের লেখা নেই। ৩১ আগস্টের মধ্যে খুনের হুমকির কথা লেখা হলেও চিঠিটি মঙ্গলবারই পেয়েছেন সুশীল মোদী। চিঠি লেখার তারিখ দেওয়া রয়েছে ১৬ আগস্ট ২০২২।

এদিন মোবাইলের সূত্র ধরে চম্পা সোমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি বর্ধমান আদালতের ল’ক্লার্ক। তিনি বলেন, “আমি ঠিক করে ইংরেজিই লিখতে পারি না। ওইভাবে ইংরেজিতে খুনের হুমকি দেবো কীভাবে।” তিনি অভিযোগের আঙুল তুলেছেন বর্ধমানের এক আইনজীবী তথা ল’ক্লার্ক সুদীপ্ত রায়ের দিকে। কিছুদিন আগে গরু পাচার মামলায় অনুব্রত মণ্ডলকে জামিন না দিলে আসানসোল সিবিআই আদালতের বিচারককে মাদক মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকি চিঠি দেওয়ার অভিযোগ ওঠে ওই আইনজীবী সুদীপ্ত রায়ের বিরুদ্ধে। গত ৩০ আগস্ট সিবিআই গ্রেফতার করে সুদীপ্ত কে। বর্তমানে বিচারবিভাগীয় হেফাজতে রয়েছে ধৃত। জেলা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বধূ নির্যাতন থেকে জালিয়াতি, প্রতারণার অন্তত ১৫টি মামলা ঝুলছে আইনজীবী সুদীপ্তের বিরুদ্ধে।

বর্ধমান জেলা আদালতের মুহুরি (ল’ক্লার্ক) চম্পা সোম এদিন জানান, গ্রেফতার হওয়ার দিন সাতেক আগে তাঁর সঙ্গে সুদীপ্তর বিবাদ হয়েছিল। তিনি বলেন, “আমাকে ফাঁসাতে এটা ওরই কাজ বলে মনে হচ্ছে। আমি তো ঠিক করে ইংরেজিই জানিনা। কেউ নিজের নাম ঠিকানা, মোবাইল নম্বর দিয়ে হুমকি চিঠি দেয় নাকি!  আমাকে ফাঁসাতে আমার নাম, ঠিকানা, মোবাইল নম্বর দিয়ে ওই ব্যক্তিই এই কাজ করেছে বলেই মনে হচ্ছে।” তিনি জানান, পাটনা পুলিশের তরফে তাঁকে ফোন করে বলা হয়েছে, ওই হুমকি চিঠিতে তাঁর নাম, ঠিকানা এবং মোবাইল নম্বর রয়েছে। তাঁর যে ঠিকানা এবং মোবাইল নম্বর পাটনা পুলিশ বলেছে, তা নির্ভুল। ফলে চম্পার আশঙ্কা, তাঁকে ফাঁসানোর জন্য এ কাজ করেছেন পরিচিত কেউ। তাঁর কথায়, ‘‘আমি বিহারের প্রাক্তন উপমুখ্যমন্ত্রী সুশীল মোদীকে চিনি না। আমি ওঁকে কোনও হুমকি চিঠি পাঠাইনি। অন্য কেউ চক্রান্ত করে এই কাজ করেছে।’’

চম্পার অনুমান, ওই হুমকি চিঠি পাঠানোর পিছনে রয়েছেন বর্ধমান কোর্টের আইনজীবী সুদীপ্ত রায়। এর আগেও সুদীপ্ত আসানসোলের সিবিআই কোর্টের বিচারপতি রাজেশ চক্রবর্তীকে হুমকির চিঠি পাঠিয়েছিলেন বলে অভিযোগ। সেই চিঠিতে বলা হয়েছিল, ধৃত তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডলকে জামিন না দিলে, বিচারককে মাদক মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়া হবে। সেই চিঠি-কাণ্ডে গ্রেফতার সুদীপ্ত বর্তমানে জেল হেফাজতে রয়েছেন।

আরো পড়ুন