ফোকাস প্রতিবেদন: আজ ১১ নভেম্বর। আজ ভূত চতুর্দশী। এই ভূত চতুর্দশীর দিন বাংলার ঘরে ঘরে অনেকগুলি রীতি পালিত হয়। যার মধ্যে অন্যতম হলো চোদ্দো শাক খাওয়ার রীতি। আসলে ভূত চতুর্দশীর দিন ইষ্ট দেবতা ও স্বর্গত পূর্বপুরুষদের স্মরণ করে প্রদীপ জ্বালানো হয়। আসলে প্রকৃতির বিভিন্ন উপাদানে মানুষের দেহ গঠিত হয় তাই প্রকৃতির থেকে ১৪ টি শাক তুলে সেগুলিকে একত্রিত করে ১৪ পুরুষের উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করে খাওয়ার রীতি প্রচলিত।
চোদ্দো শাক কি? ওল, কেও, বেতো, সর্ষে, কালকাসুন্দে, জয়ন্তী, নিম, হেলঞ্চা বা হিঞ্চে, শাঞ্চে বা শালিঞ্চা, গুলঞ্চ, পলতা বা পটুক পত্র, ভাঁটপাতা, শুলফা, শুষনী। আয়ুর্বেদে উল্লেখ আছে প্রাচীন বাংলার এই ১৪ টি শাকের। যেগুলি, ঋতু পরিবর্তনের সময় রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। কথিত আছে এমনটা করলে বাড়িতে যমের ছায়া পড়ে না এবং পূর্বপুরুষদের আশীর্বাদ গৃহের উপর বর্ষিত হয়। অলক্ষীর বাস করে না গৃহে। শাস্ত্র অনুযায়ী আরো বলা হয় যে, ভূত চতুর্দশীর দিনে মা কালী নরকাসুরকে বধ করেছিলেন বলে এই চতুর্দশী নরক চতুর্দশী নামেও পরিচিত।
লোককথা অনুযায়ী, এই ভূত চতুর্দশীর দিন এমন কিছু আচার এবং রীতি আছে যা পালন করলে গৃহ এবং সংসারের মঙ্গল হয়। সুদূর অতীত থেকে এই সমস্ত রীতিনীতি প্রচলিত হয়ে আছে ভূত চতুর্দশীকে কেন্দ্র করে। অনেকেই সেগুলো মানেন, আবার অনেকেই মানেন না। চলুন জেনে নেওয়া যাক এই ভূত চতুর্দশী কীভাবে পালন করবেন?
১। এইদিন সকালে উঠে তেল, ফুল ও চন্দন মিশিয়ে একটা পাচন তৈরি করে তা দিয়ে স্নান করা উচিত, এমনটা করলে ব্যক্তি বহু অশান্তির থেকে মুক্ত হয়। এছাড়া স্নান জলে তুলসী পাতা ফেলে স্নান করলে অশুভ শক্তি কেটে যায় বলেও অনেকে এই দিন এইভাবে স্নান করেন। এরপর শুদ্ধ বসন পরে ইষ্ট দেবতার উদ্দেশ্যে চালের গুঁড়ো, তিলের গুঁড়ো, ঘি, চিনি দিয়ে পুজো করলে মনোবাসনা পূর্ণ হয়।
২। এই চতুর্দশীর দিন মহাদেবের পুজো করলে নির্বাণ লাভ হয়। এই দিন পুজো করলে সব মনস্কামনা পূর্ণ হয়। এছাড়া এই দিন শিব পুজো করলে পাপের প্রায়শ্চিত্ত হয় বলেও কথিত আছে। ভূত চতুর্দশীর দিন যে ব্যক্তি শিব পুজো করেন তিনি নরক গমনের হাত থেকে রক্ষা পান।
৩। শাস্ত্র মতে ভূত চতুর্দশীর দিন রঙিন পোশাক পরা উচিত, তবে এইদিন ভুলেও কালো পোশাক পরা উচিত নয়। ৪। এই দিন ঘর পরিষ্কার, ঝকঝকে ও তকতকে রাখা উচিত। ঘরে কোনরকম নোংরা জিনিস রাখা উচিত নয়। ঘরের মধ্যে কোন ভাঙ্গা বাসনপত্র থাকলে তা এই দিন সরিয়ে ফেলা উচিত। নাহলে তা নেগেটিভ এনার্জি ক্রিয়েট করে।
৬। ভূত চতুর্দশীর দিন প্রত্যেকের উচিত ঘরের বাইরে সদর দরজার কাছে দুটি মাটির প্রদীপ জ্বালিয়ে রাখা উচিত, এর থেকে পজিটিভ এনার্জি ক্রিয়েট হয় এবং এটি অত্যন্ত শুভ বলেও মানা হয়। ভূত চতুর্দশীর দিন প্রদীপ জ্বালালে তা গৃহ এবং সংসারের জন্য শুভ ফলপ্রদ হয়।
৭। এইদিন অন্যের অনিষ্ট চিন্তা করবেন না, সকলের মঙ্গলের কথা চিন্তা করুন। সারাদিন বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকলেও ভগবানের কথা চিন্তা করুন মনে মনে, নীরবে জপ করুন, ভগবানের বিভিন্ন লীলার কথা স্মরণ ও মনন করুন-এতে অশেষ পূণ্য লাভ হয় এবং পাপ ক্ষয় হয়।