ফোকাস বেঙ্গল প্রতিবেদন: আজ ২৫শে ডিসেম্বর, সবাই জানেন আজকের দিনে মানব ত্রাতা যীশু খ্রীষ্ট আবির্ভূত হয়েছিলেন মাতা মেরীর কোলে, কিন্তু অনেকেই জানেন না যে খ্রিস্টান ধর্মের সাথে সাথে সনাতন ধর্মেও এই দিনটি অত্যন্ত পূণ্যবহ এক তিথি। কারণ ২৫ শে ডিসেম্বর হলো তুলসী জয়ন্তী।
পুরাণে বর্ণিত আছে, দেবী তুলসী হলেন অসুর শঙ্খচূড়ের পত্নী। তার স্বামী শঙ্খচূড়ের নিয়তি ছিল যে, তার স্ত্রী যেদিন অসতী হবেন সেদিন তার মৃত্যু হবে। অসুররাজ শঙ্খচূড়ের সাথে দেবতাদের যুদ্ধ শুরু হলে শঙ্খচূড়কে পরাস্ত করার জন্য ভগবান শ্রী বিষ্ণু ছলনার আশ্রয় নিয়ে শঙ্খচূড়ের বেশ ধারণ করে তুলসীর সতীত্ব হরণ করেন। তুলসী যখন তার সাথে হওয়া প্রবঞ্চনার কথা বুঝতে পারেন, তখন নারায়ণকে শিলায় পরিণত হওয়ার অভিশাপ দিয়ে তুলসী দেহত্যাগ করেন। এরপর নারায়ণের আশীর্বাদে তুলসীর কেশ বৃক্ষতে পরিণত হয় আর নারায়ণের শালগ্রাম শিলার সাথে তুলসীর বিবাহ হয়। এর পর থেকেই তুলসী দেবী সতী নারী হিসেবে গণ্য হন।
তুলসীকে বলা হয় কৃষ্ণ প্রেয়সী। কারণ তুলসী পত্র ছাড়া শ্রী নারায়ণ বা শ্রীকৃষ্ণের পুজো সম্ভব নয়। যে অন্নে তুলসী পাতা থাকে না, সেই অন্ন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ গ্রহণ করেন না। তাই সনাতন ধর্মে তুলসী বৃক্ষকে অতি পবিত্র হিসেবে পুজো করা হয় আর প্রতি হিন্দু বাড়িতেই তুলসী বৃক্ষ লক্ষ্য করা যায়, সেখানে বাড়ির মেয়ে বউরা সকাল সন্ধ্যায় ধূপ দেখায় , জল দেয়। দেবী তুলসীর প্রণাম মন্ত্র বলে সকলে প্রণাম করেন, “ওঁ বৃন্দায়ৈ তুলসী দেবৈ প্রিয়ায়ৈ কেশবশ্য চ,বিষ্ণু ভক্তি প্রদে দেবী সত্যব ত্যৈ নমো নম:”
স্কন্দ পুরাণ আর পদ্ম পুরাণে বলা হয়েছে যে, যে বাড়িতে তুলসী গাছ থাকে সেই বাড়ি তীর্থে পরিণত হয়। আর গড়ুর পুরাণে বলা হয়েছে যে, তুলসী গাছ রোপন, দান ও তুলসী গাছের যত্ন নিলে মানুষের পূর্ব জন্মের পাপক্ষয় হয়ে যায়। এছাড়া সনাতন শাস্ত্রে বলা হয় যে, তুলসী দূষিত বাতাসকে শুদ্ধ করে ও মনকে শান্তি ও তৃপ্তি প্রদান করে। তুলসী পাতার রস খেলে যে অনেক রোগের নিরাময় হয় এই কথা আমরা কমবেশি সবাই জানি। এত গুণাবলী যুক্ত ও আধ্যাত্মিক কারন সমন্বিত হওয়ার জন্যই প্রতিটি হিন্দু বাড়িতেই তুলসী গাছ দেখা যায়। তুলসী গাছ থাকলে বাড়ির সকল অশুভ দোষ কেটে যায়, তাই বলা হয়, যে বাড়িতে তুলসী গাছ নেই, সেই বাড়ি লক্ষী হীন। কারণ শাস্ত্রে উল্লেখিত আছে, যে গৃহে কৃষ্ণ প্রেয়সী তুলসী নেই, সেই গৃহে লক্ষী দেবী প্রবেশ করেন না।
তথ্য – ইন্টারনেট