ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,বর্ধমান: বর্ধমান পুর এলাকায় টোটোর রুট ডিস্ট্রিবিউশনের দ্বিতীয় দিনেও টোটো চালকদের বিরোধিতায় সাময়িক বিশৃঙ্খলার পরিস্থিতি সৃষ্টি হল বর্ধমান সংস্কৃতি লোকমঞ্চে। এদিনও টোটো চালকদের বিরোধিতার মূল প্রসঙ্গই ছিল শহরের মধ্যে নির্দিষ্ট কয়েকটি রুটে নির্দিষ্ট কিছু টোটোর যাতায়াতের অনুমোদন দেওয়া কে কেন্দ্র করে। যদিও বিধায়ক খোকন দাস ও বর্ধমান থানার আইসি সুখময় চক্রবর্তী মঞ্চ থেকে সকলের উদ্দেশ্যে এই নতুন ব্যবস্থা কেন, কাদের স্বার্থে ইত্যাদি প্রসঙ্গে বক্তব্য রাখার পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
আইসি এদিন বলেন, ‘বর্ধমান শহরের যানজট নিয়ন্ত্রণে কিভাবে টোটোর সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা যায়, সেব্যাপারে গত কয়েকমাস ধরে একাধিকবার বৈঠক করা হয়েছে। শহরের টোটো চালকদের কাছেও মতামত নেওয়া হয়েছে। কিভাবে টোটোর সংখ্যা কমিয়ে এনে শহরের বাসিন্দা টোটো চালকদের রোজগার বাড়ানো যায়, এমনকি শহরের বাইরে থেকে আসা টোটো কিভাবে বন্ধ করে যায় সেবিষয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যেই পঞ্চায়েত থেকে টোটো ঢোকা বন্ধ করা হয়েছে। আর এরপরই ওয়ার্ড ভিত্তিক ক্যাম্প করে ৩৬০০টোটো কে অনুমোদন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় পুরসভা।’
বিধায়ক খোকন দাস বলেন,” টোটো চালকদের পেটের ভাত মারার উদ্দেশ্যে আমরা এই পদ্ধতি গ্রহণ করছি না। বরং কিভাবে পুর এলাকার ভোটার তথা বাসিন্দা টোটো চলকদের আয় আরো বাড়ানো যায় তার জন্যই সবপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে এবং শহরের যানজট নিয়ন্ত্রণ করা যায় সেব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নতুন কোন ব্যবস্থা চালু হলে প্রথম দিকে কিছু অসুবিধা থাকেই। আগামী ২০ তারিখ থেকে টোটো চালকদের টোকেন দেওয়া শুরু করবে পুরসভা। এবং ১অক্টোবর থেকে নতুন ৮টি রুটে দুটি শিফটে ৫০০করে টোটো চলবে। বাকি ২৬০০টোটো শহরের যেকোন জায়গায় চলাচল করতে পারবে শুধু নির্দিষ্ট রুটগুলো বাদ দিয়ে। এরপর থেকে আগামী একমাস আমরা এই ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ করবো। টোটো চালকরাও তাদের সুবিধা অসুবিধার কথা লিখিতভাবে পুরসভার ড্রপ বক্সে জমা করবেন। পরবর্তীতে আবার আলোচনা করে পর্যালোচনার ভিত্তিতে পরিবর্তন করা হতে পারে বর্তমান ব্যবস্থার।’
এরপরই শুরু হয় রুট নিয়ে লটারি। এদিন সবুজ সাদা রংয়ের ১৮০০টোটো র মধ্যে ৫০০টোটো যারা দ্বিতীয় শিফটে চলবে তাদের জন্য লটারি অনুষ্ঠিত হয়। এদিকে টোটো নিয়ে নতুন ব্যবস্থা চালু হওয়া নিয়ে শহরবাসীর মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। নানান প্রশ্ন উঠে আসছে অনেকের কাছ থেকে। টোটোর নতুন আটটি রুট কি কি হচ্ছে, কিভাবে জানা যাবে কোন টোটো কোন রুটে চলছে, কিভাবে বুঝতে পারা যাবে কোন রুটের টোটো ধরতে গেলে কোথায় যেতে হবে। রুটের বাইরে শহরের কোথায় যেতে গেলে কোন টোটোয় চেপে যেতে হবে ইত্যাদি।
পুরসভা সূত্রে জানা গেছে, শহরের গুরুত্বপূর্ণ এবং ব্যস্ততম রাস্তাগুলো নিয়ে আপাতত ৮টি রুট তৈরি করা হয়েছে। সেগুলি হল, ১. উত্তরফটক থেকে রানিগঞ্জ বাজার হয়ে ঢলদিঘি পেট্রোল পাম্প। ২. ঢলদিঘি পেট্রোল পাম্প থেকে রানিগঞ্জ বাজার, খোশবাগান হয়ে মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। ৩.নটরাজ সিনেমা হল থেকে রানীসায়ের পশ্চিম পাড়, পাওয়ার হাউস পাড়া হয়ে হাসপাতাল। ৪. রাজ কলেজ মোড় থেকে হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ, কৃষ্ণ সায়ার পার্ক হয়ে উত্তরফটক। ৫. গোলাপবাগ থেকে বাবুরবাগ সিএমএস স্কুল, উত্তরফটক হয়ে হাসপাতাল। ৬. তেলিপুকুর থেকে বেড়মোড়, বংপুর, সর্বমঙ্গলা মন্দির, মহাজন টুলি হয়ে হাসপাতাল। ৭. বাজেপ্রতাপপুর থেকে পৌরসভা অফিস। এবং ৮. তেলিপুকুর থেকে বিদ্যার্থী গার্লস স্কুলের সামনে বাঁকার ব্রিজ, রানীগঞ্জ বাজার, পার্কস রোড, গুডস শেড রোড হয়ে স্টেশন।
পুরসভা সূত্রে জানা গেছে, প্রত্যেক রুটের শুরু এবং শেষ নির্দিষ্ট রুটের বোর্ড লাগানো থাকবে। রুটে চলবে এমন প্রত্যেক টোটোয় নির্দিষ্ট নম্বর লেখা থাকবে। রুটে চলবে না বাকি টোটো তে নম্বর প্লেট দুটো শূন্য লেখা থাকবে। অর্থাৎ টোটোর ইউএনআই ( ইউনিক আইডেন্টিফিকেশন নম্বর) নম্বরের সঙ্গে দুটো শূন্য লেখা টোটো র কোনো রুট থাকবে না। এই টোটো গুলি রুটের বাইরে শহরের যেকোনো প্রান্তে চলাচল করবে বলে জানা গেছে। এই ব্যবস্থা ছয়মাস বলবৎ থাকবে। তারপর ফের লটারি করা হবে। দিন রাতের শিফটের পরিবর্তন প্রতি ১৫দিন অন্তর করা হবে। দিনে চলবে নিল সাদা ১৮০০টোটো। দুপুর দুটোর পর থেকে পরের দিন সকাল পাঁচটা পর্যন্ত চলবে বাকি ১৮০০ সবুজ সাদা টোটো।