২১শের রাতেই তৃণমূলের পার্টি অফিসে আগুন রায়নায়, ফের অশান্তির আশঙ্কায় এলাকাবাসী

Souris  Dey

Souris Dey

ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,রায়না: পঞ্চায়েত ভোটের আর এক বছরও বাকি নেই। ২০২৩ সালের মে মাসের মধ্যেই এই রাজ্যে সম্ভাব্য পঞ্চায়েত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আর তার আগেই ফের আগুন জ্বলতে শুরু করলো পূর্ব বর্ধমানের রায়নায়। বৃহস্পতিবার ২১এর সভা থেকে ফিরে রাতে যখন গ্রামের সবাই ক্লান্ত হয়ে শুয়ে পড়েছেন। ঠিক সেই সুযোগে কে বা কারা তৃণমূলের পার্টি অফিসেই আগুন লাগিয়ে দেওয়ার ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে রায়না থানার হিজলনা গ্রাম পঞ্চায়েতের জোৎসাদি গ্রামে। স্থানীয়দের অভিযোগের তীর রায়না ১ব্লক সভাপতি বামদাস মণ্ডলের গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে।

বিজ্ঞাপন

আগুনে পুড়ে গেছে কয়েকশ তৃণমূলের পতাকা, একটি খেজুর গাছ, মমতা বন্দোপাধ্যায়ের ছবি দেওয়া পোস্টার, ফ্লেক্স সহ পার্টি অফিসের একাংশ। গ্রামবাসীদের অনেকেই জানিয়েছেন, ঘটনাটি ঘটেছে রাত প্রায় সাড়ে ১২টা থেকে ১টা নাগাদ। স্থানীয়রাই রায়না থানায় খবর দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে। জোৎসাদি গ্রামের বাসিন্দা, ২০০৮সাল থেকে তৃণমূল কংগ্রেসের একনিষ্ট কর্মী বাবাজি মল্লিক বলেন,” এই এলাকা দীর্ঘদিন ধরেই তৃণমূলের দুর্গ। এখানে বিরোধীদের কোনো অস্তিত্ব নেই। তবে গত বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকে হিজলনা পঞ্চায়েত সহ রায়না ১ব্লক জুড়ে তৃণমূলের দুটি গোষ্ঠীর লড়াই শুরু হয়েছে। একদিকে ব্লক সভাপতি বামদেব মন্ডল গোষ্ঠী আরেক দিকে বিধায়ক শম্পা ধারা গোষ্ঠী।

গতকাল ২১জুলাই উপলক্ষে গ্রামের মানুষ বেশিরভাগ ধর্মতলায় গিয়েছিলেন দিদির বক্তব্য শুনতে। রাস্তায় গাড়ির চাপ থাকায় গ্রামে ফিরতে সবার অনেক দেরী হয়ে যায়। সারাদিন পর সকলেই ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন। অন্যান্য দিনের তুলনায় তাই একটু আগেই শুয়ে পড়েন সবাই। আর এরপরই রাত একটা নাগাদ গ্রামে খবর ছড়িয়ে পড়ে কে বা কারা তৃণমূলের পার্টি অফিসে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। এই পার্টি অফিসে আমরা যারা বিধায়কের সঙ্গে থেকে দল টা করি তাঁরাই বসতাম।”

জোৎসাদি গ্রামের আরেক বিধায়ক ঘনিষ্ট তৃণমূল কর্মী তরুণ মল্লিক বলেন, ” আমাদের বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর লোকেরা এই কাজ করে থাকতে পারে। আমরা পুলিশ কে সব জানিয়েছি। রাতেই পুলিশ এসেছিল। এই ঘটনায় যারা যুক্ত তাদের চিহ্নিত করে যাতে শাস্তির ব্যবস্থা করা হয় সেব্যাপারে আমরা পুলিশ কে বলেছি।”

যদিও যার গোষ্ঠীর লোকেদের বিরুদ্ধে পার্টি অফিসে আগুন লাগানোর অভিযোগ সেই ব্লক সভাপতি বামদেব মন্ডল এই ঘটনা কে বিরোধীদের কাজ বলে দাবি করেছেন। তিনি বলেন,” রায়নার কোনো গোষ্ঠী নেই। তৃণমূলের পার্টি অফিসে আগুন লাগানোর খবর আমি শুক্রবার সকালে শুনলাম। তৃণমূলের কেউ দলের পার্টি অফিসে আগুন লাগাতে পারে, সেটা আমি বিশ্বাস করিনা। এমনিতেই গতকাল কলকাতা থেকে ফেরার সময় রাস্তায় অত্যধিক জ্যাম থাকায় কর্মীদের নিজের নিজের বাড়ি ফিরতে রাত হয়েছিল। ক্লান্তও ছিল। স্বাভাবিকভাবেই কখন কি হয়েছে জানিনা। সকালে শুনলাম। পুলিশ কে খবর দিয়েছি। তদন্ত করে দোষীদের চিহ্নিত করুক। এই ঘটনার সঙ্গে দলের কেউ যুক্ত নয়।” অন্যদিকে রায়নার বিধায়ক শম্পা ধারা বলেন,” এই ঘটনার সঙ্গে আমাদের দলের কেউ যুক্ত নয়, আমাদের কোনো গোষ্ঠী দ্বন্দ্বের বিষয় নেই। এই কাজ বিরোধীদের। বিরোধীরা এই এলাকায় নিজেদের পায়ের তলায় মাটি খুঁজে পাচ্ছে না। তাই অশান্তি পাকানোর চেষ্টা করছে।”

বামদেব মন্ডল বলেন,” ২০১৫সালের পর থেকে বিজেপি, সিপিএম থেকে কিছু লোক তৃণমূল ঢুকে অশান্তি সৃষ্টি করে চলেছে। অনেকেই হিজলনা কে ফের বাম আমলের পরিস্থিতিতে ফেরানোর চক্রান্ত করছে। তারা চাইছে আবার নিজেদের মধ্যে মাথা ফাটাফাটি করুক এরা। যাতে বিরোধীদের সুবিধা হয়। কিন্তু রায়নার মাটি, দুর্জয় ঘাঁটি। ৩৪বছরের সিপিএম কে যখন বহু লড়াই করে উৎখাত করতে পেরেছি, তখন এই দু চারজন উপদ্রবকারিকে জব্দ করতে বেশি সময় লাগবে না। গোষ্ঠী দ্বন্দ্বের জিগির তুলে এই এলাকা কে অশান্ত করতে দেওয়া হবে না।”

আরো পড়ুন