festival

মহা অষ্টমীর সন্ধিক্ষণ কি, সন্ধি পুজোরই বা কি মাহাত্ম্য? জানুন

ফোকাস প্রতিবেদন: রাত পোহালেই মহাঅষ্টমী। অনেক মানুষ আছেন যাঁরা অষ্টমীর দিন দুর্গাষ্টমীর ব্রত করেন বা অষ্টমীর সন্ধি পুজোয় উপবাস করেন। কিন্তু অষ্টমীর এই সন্ধি পুজোর মাহাত্ম্য কী তা অনেকেই জানেন না। তাই চলুন আজকে আপনাদের জানাবো অষ্টমীর সন্ধিপুজোর মাহাত্ম্য কী? তবে সন্ধি পূজার মাহাত্ম্য কী সেটা জানবার আগে আপনাদের জানতে হবে ‘সন্ধিক্ষণ’ কোন সময়টাকে বলে?

দুর্গাষ্টমীর শেষ ২৪ মিনিট ও নবমী তিথির প্রথম ২৪ মিনিট অর্থাৎ দুর্গাষ্টমীর শেষের ও দুর্গা নবমীর শুরুর এই সময়টুকুকেই বলা হয় সন্ধিক্ষণ। ‌এই সন্ধিক্ষনে কী হয়েছিল? জানতে গেলে আমাদের জানতে হবে মহিষাসুরমর্দিনীর ইতিহাস।

ব্রহ্মার বরে অপরাজেয় অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছিলেন মহিষাসুর। এরপর মহিষাসুর নিজের ক্ষমতা, দম্ভ প্রতিষ্ঠা করতে শুরু করেন, হয়ে ওঠেন অত্যাচারী। সমগ্র জগৎ জুড়ে অত্যাচার করতে শুরু করেন। তার অত্যাচারের জ্বালায় অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেন মুনি ঋষিরা পর্যন্ত। পুরাণে বর্ণিত হয়েছে, মুনি ঋষিরা দেবতাদের জন্য যে যঞ্জের আয়োজন করেছিলেন সেই যঞ্জাহুতি মহিষাসুর নিজে এসে ভক্ষণ করে নিচ্ছিলেন। এইভাবে দেবতাদের বরাদ্য খাদ্য মহিষাসুর ভক্ষণ করে নেওয়ায় দেবতারা খাদ্য না পেয়ে ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ছিলেন। এইসময় মহিষাসুর স্বর্গলোকে আক্রমণ করেন এবং দেবতাদের পরাস্ত করে স্বর্গলোক দখল করেন। এইভাবে ক্রমেই স্বর্গ, মর্ত্য, পাতাল তিন লোকে নিজের আধিপত্য বিস্তার করেন মহিষাসুর।

মহিষাসুরের অত্যাচার থেকে বাঁচতে দেবতারা সদলবলে পালিয়ে কাশ্যপ মুনির আশ্রমে চলে যান। তাঁরা ত্রিদেবের শরণাপন্ন হন। দেবাদিদেব মহাদেব তখন বলেন, আমাদের এই মুহূর্তে আদ্যা শক্তি মহামায়ার সাহায্য প্রয়োজন। কারণ ব্রহ্মার বরে মহিষাসুর অপ্রতিরোধ্য, তাই একমাত্র আদ্যা শক্তি মহামায়া‌ই তাকে বধ করতে পারবেন। এই সময় সকল দেবতাদের সম্মিলিত তেজপুঞ্জের মধ্য দিয়ে আবির্ভূতা হন আদ্যা শক্তি মহামায়া দশপ্রহরণধারিণী দুর্গা। তিনি রণ সাজে সজ্জিতা হয়ে মহিষাসুরের বিরুদ্ধে এরপর যুদ্ধ ঘোষণা করেন। কথিত আছে ন দিন ন রাত অসুরের সাথে দীর্ঘ যুদ্ধের পর দশমীর দিন দেবী মহিষাসুরের বিনাশ করেছিলেন। ‌

এই যুদ্ধের একটি মুহূর্তে রক্তবীজের সাথে দেবীর যুদ্ধ শুরু হয়। রক্তবীজের উপর আশীর্বাদ ছিল যে তার শরীরের এক ফোঁটা রক্ত মাটিতে পড়লে তা থেকে আরেক অসুরের সৃষ্টি হবে। তাই দেবী সহজে তাকে বধ করতে পারছিলেন না। কারণ প্রত্যেকবার তার শরীরের রক্ত থেকে নতুন অসুরের সৃষ্টি হচ্ছিল। এই সময় দেবী অত্যন্ত ক্রুদ্ধা হয়ে ওঠেন এবং দেবী দুর্গার ত্রিনয়ন থেকে মা কালী আবির্ভূতা হয়ে রক্তবীজের নিধন করেন। কথিত আছে সন্ধিক্ষণেই দেবী দুর্গার ত্রিনয়ন থেকে মা কালী আবির্ভূতা হয়ে রক্তবীজের নিধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছিলেন। তাই এই সন্ধিক্ষণের এত গুরুত্ব! এই সময় দেবী কালিকা আবির্ভূতা হয়েছিলেন এবং অশুভ শক্তি বিনাশ করেছিলেন।

সন্ধি পূজোর মাহাত্ম্য সম্পর্কে বলা হয় যে, যে সকল ভক্তরা সারা বছর দুর্গা পুজো করতে পারেন না তারা যদি সন্ধিপূজোর সময় উপোস করেন তাহলে তাদের সারা বছরের দুর্গা পুজো করার ফল লাভ হয় এবং পরম পূণ্য ফল পেয়ে তারা যম যাতনা থেকে মুক্তি পেয়ে স্বর্গ লোকে স্থান পান। গৃহী এবং সংসারী মানুষের ক্ষেত্রে যেহেতু সারা বছর ধরে দুর্গা পুজো করাটা একটু কষ্টকর তাই মানুষজন সারা বছর দুর্গাপুজো করার পরিবর্তে সন্ধি পুজোর উপবাস করাকেই বেশি পছন্দ করেন।

তথ্য সংগৃহীত: ইন্টারনেট

Recent Posts