festival

দেবী দুর্গার ১০টি হাত কেন, ১০টি অস্ত্রের তাৎপর্যই বা কি?

ফোকাস প্রতিবেদন: মহাপরাক্রমশালী মহিষাসুর যখন ব্রহ্মার বরে অপরাজেয় হয়ে উঠেছিল এবং তার অত্যাচারে যখন স্বর্গ মর্ত্য পাতাল এই তিন লোকের মানুষ ত্রাহি ত্রাহি চিৎকার শুরু করেছিলো তখন সকল দেবতারা মিলে ত্রিদেবের কাছে যান। তারপর ত্রিদেবের যুক্তিতে সকল দেবতার তেজ সম্মিলিত হয়ে আবির্ভূতা হন আদ্যা শক্তি মহামায়া, দনুজদলনী দেবী দুর্গা। দেবতারা দেবীকে বস্ত্র, অলংকার ও অস্ত্র প্রদান করেন ও যুদ্ধের জন্য সজ্জিত হতে সাহায্য করেন।

মা দুর্গার দশ হাত আর এই দশ হাতে দশ অস্ত্র। মহিষাসুরকে নিধন করবার জন্য দেবী দুর্গা যখন সজ্জিত হচ্ছিলেন তখন তাকে যুদ্ধং দেহি মূর্তিতে প্রস্তুত করতে সকল দেবতারা তাদের নিজ নিজ অস্ত্র মা দুর্গার হাতে প্রদান করেন। জ্যোতিষ শাস্ত্রে বলা হয় দেবী দুর্গার এই দশ হাত দশটি দিকের প্রতীক। কুবের, যম, ইন্দ্র, বরুণ, ঈশান, বায়ু, অগ্নি , নৈঋত ব্রহ্মা, বিষ্ণু- এই দশদিক থেকে মহিষাসুরকে বধ করবার জন্যই দেবী দুর্গার দশ হাত। দেবী দুর্গার দশ হাতের জন্য দেবতারা দশটি অস্ত্র দান করলেও মূলত দেবীর আটটি হাতে অস্ত্র থাকে এবং দুটি হাত দিয়ে দেবী একটি অস্ত্র ত্রিশূল ধারণ করে মহিষাসুর কে বধ করেন।

দেবীকে ভগবান বিষ্ণু দিয়েছিলেন চক্র, বরুণ দেব দিয়েছিলেন শঙ্খ। ইন্দ্র তার বাহন ঐরাবতের থেকে দেবীকে দেন ঘন্টা এবং গণেশ দেবীকে দিয়েছিলেন খড়গ। হিমালয় দেবীকে দিয়েছিলেন বাহন সিংহ। বিশ্বকর্মা দেবীকে দিয়েছিলেন কুঠার ও ঢাল। অগ্নিদেব দিয়েছিলেন অগ্নিভল্ল, পবন দেব গিয়েছিলেন ধনু ও তূণ। ব্রহ্মা দিয়েছিলেন পদ্ম অক্ষমালা ও কমন্ডলু, যমরাজ দিয়েছিলেন গদা। ইন্দ্র দিয়েছিলেন বজ্র। নাগরাজ দিয়েছিলেন সর্প তথা নাগ পাশ এবং সর্বশেষে দেবাদিদেব দিয়েছিলেন ত্রিশূল।

দেবী দুর্গার দশ হাতের ১০ অস্ত্রের তাৎপর্য মার্কন্ডেয় পুরাণে লেখা আছে সেগুলি কী কী চলুন আজকে জেনে নেওয়া যাক।

১। শঙ্খ: এই অস্ত্র দ্বারা দেবী যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন মহিষাসুরের বিরুদ্ধে। পুরাণ অনুযায়ী শঙ্খ থেকে যে শব্দের সৃষ্টি হয় তা থেকেই সমগ্র জীবজগত ও প্রাণের সৃষ্টি হয়েছে তাই সনাতন ধর্মে এই শঙ্খকে ইতিবাচক শক্তির আধার রূপে ধরা হয়। পুরাণে এও বলা হয় যে, পৃথিবী সৃষ্টির সময় যখন জলমগ্ন ছিল তখন শ্রীবিষ্ণু একটি শঙ্খের রূপে সমুদ্রের গভীর তলদেশে অবস্থান করেছিলেন।

২। সুদর্শন চক্র: এই চক্র ভগবান বিষ্ণু ধারণ করে থাকেন এই অস্ত্র দেবীর হাতে ধারণের অর্থ হল তাকে কেন্দ্র করে সমগ্র জগত আবর্তিত হচ্ছে এবং তিনি সৃষ্টির মূলে আদ্যাশক্তি রূপে বিরাজ করছেন। সুদর্শন চক্র এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের অপার সৌন্দর্যের প্রতীক এবং একই সাথে এই অস্ত্র অশুভ শক্তি বিনাশক এবং জগতে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সহায়ক।

৩। গদা: যমরাজ প্রদত্ত এই অস্ত্র হল আনুগত্য ভালোবাসা ও ভক্তির প্রতীক। দেবী এই অস্ত্র ধারণ করেন বাম হাতে এই অস্ত্র বিশ্বের সম্মোহনী শক্তি রূপে কাজ করে এবং একই সাথে মহাকালের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে।

৪। পদ্ম: পদ্ম পাঁকের মধ্যে জন্মায় তবুও সে সুন্দর, অর্থাৎ জন্ম নয়,কর্মই সমস্ত কিছুকে পরিণতি দান করে। দেবীর আশীর্বাদে তেমনি অসুরেরাও পাঁক মুক্ত হয়ে শুভ শক্তি হয়ে উঠতে পারে। এই‌ পদ্ম সর্বশক্তির আধার আর দেবীর ডান হাতে থাকা কমন্ডলু ও অক্ষমালা পবিত্রতার প্রতীক।

৫। খড়্গ: খড়্গ হলো মোক্ষ লাভের প্রতীক। দেবী খড়্গ দিয়ে অসুরদের মুণ্ডচ্ছেদ করে মুণ্ড মালা গলায় পড়ে ছিলেন। এই বলির অর্থ হলো হিংসা, ক্রোধ,মোহ,মদ,অহং,মাৎসর্য এই ছয় রিপুর বলি দিয়ে আত্মাকে শুদ্ধ করে তোলা।

৬। তীর‌ও ধনুক: দেবীর হাতে থাকা এই অস্ত্র লক্ষ্যভেদের প্রতীক। সকল প্রতিকূলতার মধ্যেও লক্ষ কে স্থির রেখে এগিয়ে চলতে হবে।

৭। ঘন্টা: যুদ্ধের সময় দেবীর ঘন্টার বাদ্য অসুরদের দুর্বল করে দিয়েছিল ঘন্টার শব্দ এতটাই শুভ যে তা সমস্ত অশুভ শক্তিকে বিনষ্ট করে মুহূর্তেঈ।

৮। বজ্র: দধীচি মুনির হাড় দিয়ে তৈরি হয়েছিল বজ্র যা পরবর্তীকালে ইন্দ্রের প্রধান অস্ত্র হয়েছিল। এই বজ্র হলো দৃঢ়তা ও সংহতির প্রতীক।

৯। সর্প: দেবীর সঙ্গে যুদ্ধ করবার সময় যখন মহিষাসুর ছলনার আশ্রয় নিয়ে প্রতিমুহূর্তে রূপ বদল করছিলেন তখন মহিষাসুরকে পরাস্ত করবার জন্য নাগরাজ প্রদত্ত নাগপাশ ব্যবহার করে দেবী অসুর কে বন্দি করেন। এই নাগ পাশ হলো শুদ্ধ চেতনার প্রতীক।

১০। ত্রিশূল: মহাদেব প্রদত্ত এই অস্ত্রে তিনটি শূল আছে এই তিনটি শূল আসলে সত্ত্ব,রজঃ,তম এই তিনগুণের প্রতীক।

তথ্য সংগৃহীত: ইন্টারনেট

Recent Posts