সংস্কৃতি

ভাইফোঁটা তে কেন দই, চন্দন ব্যবহার হয়? ফোঁটা দিতে কেন কড়ে আঙুল লাগে – জানতে ক্লিক করুন

ফোকাস বেঙ্গল ওয়েব ডেস্ক: বুধবার ভাই ফোঁটা অর্থাৎ ভ্রাতৃদ্বিতীয়া। এটি হলো ভাই, দাদাদের কল্যাণ কামনায় দিদি, বোনদের উৎসব। ভ্রাতৃদ্বিতীয়ার দিন সব বোনেরা ভাইদের কল্যাণ কামনা করে কপালে চন্দন, দইয়ের ফোঁটা দেয়।  পরিবর্তে ভাই বোনের মাথায় ধান, দূর্বা দিয়ে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয় যে সে সমস্ত পরিস্থিতিতে তার বোনকে রক্ষা করবে। এই ভাবেই ভাই বোনের পারস্পরিক বন্ধন বজায় থাকে, তাদের মধ্যে একে অপরকে রক্ষা করবার অঙ্গীকার সৃষ্টির মধ্য দিয়েই যুগ যুগ ধরে পালিত হয়ে আসছে ভ্রাতৃদ্বিতীয়া উৎসব। ভ্রাতৃদ্বিতীয়ার প্রথা অনুযায়ী  ভাইয়ের আয়ু বৃদ্ধির কামনা করে বোনেরা উপোস করে থাকে। সকালে স্নান করে ভাই বা দাদার কপালে মঙ্গল কামনা করে ফোঁটা দেওয়া হয়।

ফোঁটা দেওয়ার সময় বোন বা দিদি ভাই, দাদাদের কপালে কড়ে আঙ্গুল ঠেকিয়ে মন্ত্র উচ্চারণ করে যে, “ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা, যম দুয়ারে পরলো কাঁটা, যমুনা দেয় যমকে ফোঁটা, আমি দি আমার ভাইকে ফোঁটা”- অর্থাৎ মৃত্যুর দেবতা যমরাজের পথে কাঁটা দিচ্ছে বোনেরা ফোঁটার মাধ্যমে, এই ভাইফোঁটা দেওয়ার মাধ্যমে তাদের ভাইদের আয়ু বৃদ্ধি হবে এই আশায়। হিন্দু সনাতন ধর্ম অনুসারে কথিত আছে যে ভাইফোঁটার দিন যমরাজের বোন যমুনাকে যমরাজ কথা দিয়েছিলেন যে এই দিন যে সকল বোনেরা তার ভাইদের ফোঁটা দেবে তাদের আয়ু বৃদ্ধি হবে- সেই থেকেই বোনেরা তাদের ভাইদের মঙ্গল কামনায় উপোস করে এই মঙ্গল অনুষ্ঠান পালন করে।

ভ্রাতৃদ্বিতীয়ার ক্ষেত্রে দেখা যায় বোনেরা ভাইদের কপালে বাঁ হাতের কড়ে আঙুল দিয়ে চন্দন ও দইয়ের ফোঁটা দিচ্ছে। কিন্তু কেন ভাইফোঁটায় চন্দন ও দইয়ের ব্যবহার হয় তা কি সবাই জানেন? আসলে সনাতন ধর্ম অনুসারে এই যে রীতি প্রচলিত তার পিছনে এক মঙ্গল বিধান রয়েছে। রয়েছে চিকিৎসা বিজ্ঞানের তথ্য। প্রচলিত রয়েছে, কপালে চন্দনের ফোঁটা বা দইয়ের ফোঁটা দিলে নাকি মাথা ঠান্ডা থাকে, এক‌ইসাথে ধৈর্য শক্তি বৃদ্ধি পায় ও মন শান্ত থাকে। দই ও চন্দনের তিলক কপালে দেওয়ার ফলে একাগ্রতা বাড়ে। তাই ভাইফোঁটায় অন্য সকল দ্রব্য বাদ দিয়ে কেবলমাত্র চন্দন এবং দই দিয়েই ফোঁটা দেওয়া হয় ভাইয়ের কপালে।

অন্যদিকে তর্জনী, মধ্যমা, অনামিকা ইত্যাদি আঙুল বাদ দিয়ে কড়ে আঙ্গুল দিয়ে ভাইকে ফোঁটা দেওয়া হয়, তার কারণ হলো মানবদেহের পাঁচটি আঙ্গুল পাঁচটি ইন্দ্রিয় অর্থাৎ ক্ষিতি, অপ, তেজ, মরুৎ ও ব্যোমের প্রতীক। সেই হিসাব অনুযায়ী মানুষের দেহের কড়ে আঙুল হলো মহাশূণ্যের প্রতীক। ভাই বোনের ভালোবাসা ও সম্পর্ক অসীম আর তা বোঝানোর জন্যই মহাশূন্যের প্রতীক স্বরূপ এই আঙুল দিয়ে ফোঁটা দেওয়ার বিধান প্রচলিত ভাই ফোঁটার দিনে।

অন্যদিকে পুরাণ মতে, শ্রীকৃষ্ণের খুব কাছের ও প্রাণের বোন ছিলেন সুভদ্রা। নরকাসুরকে বধ করার পর কার্তিক মাসের শুক্লাপক্ষের দ্বিতীয়ার দিন দ্বারকাতে ফিরে আসেন শ্রীকৃষ্ণ। দাদার বিজয় উত্‍সবকে স্বাগত জানাতে শুভদ্রা পুজোর থালি নিয়ে তিলকের ফোঁটা পরিয়ে দ্বারকাতে প্রবেশ করার অনুমতি দেন। স্বাগত জানাতে বোনের এমন এলাহি আয়োজন দেখে আপ্লুত হয়ে যান শ্রীকৃষ্ণ। ভাইবোনের অকৃত্রিম ভালবাসা ও শ্রদ্ধাকে সম্মান জানাতে প্রতি বছর কার্তিক মাসের এই পবিত্র দিনে ভাইফোঁটার আয়োজন করা হয় বাঙালির ঘরে ঘরে।

Recent Posts