festival

নিশাচর পেঁচা কেন দেবী লক্ষ্মীর বাহন, জানুন

ফোকাস প্রতিবেদন: রাত পেরোলেই ধনদেবী লক্ষ্মীর পুজো। উমার গমনের পর লক্ষ্মী আরাধনায় মেতে ওঠেন আপামর বাঙালি। বাঙালির ঘরে ঘরে মা লক্ষ্মী পূজিতা হন দেবীপক্ষের শেষের কোজাগরী পূর্ণিমাতে। রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব বলতেন, “তোমাদের চৈতন্য হোক।” এই চৈতন্য তার‌ই হয় যার ভগবানের চরণে (ইষ্ট চরণে) মতি আছে। এই চৈতন্য যার হয় দেবী লক্ষ্মীও তার প্রতি কৃপা পরবশ হয়ে ওঠেন। আগামীকাল ৯ অক্টোবর হলো কোজাগরী লক্ষী পুজো। এই দেবী লক্ষ্মী সম্পর্কে অনেকের মনে নানান প্রশ্ন থাকে। যেমন দেবী লক্ষ্মী কেন নারায়ণের পদসেবা করেন? এতে কি নারীদের কে ছোট করা হয়, বা পুরুষ তন্ত্রকে প্রাধান্য দেওয়া হয়? এই প্রসঙ্গে বলা যেতে পারে যে, বিষ্ণু বা কৃষ্ণ হলেন সেই সৎ , চিৎ ও আনন্দ অর্থাৎ চৈতন্য।

যে ব্যক্তি সৎ ও চৈতন্য বিশিষ্ট হবে যার মন সদা আনন্দে পরিপূর্ণ, তিনি চৈতন্য স্বরূপ শুদ্ধ আত্মা। আর যিনি শুদ্ধ আত্মা তার কাছে দেবী লক্ষ্মী বাঁধা থাকেন অর্থাৎ তার কোনো অভাব থাকে না। এছাড়া বলা যায় যে, জগৎ পালক হিসেবে পরিচিত ভগবান শ্রী বিষ্ণুর জগৎ পালন কার্যে সহায়তা করেন দেবী শ্রী লক্ষ্মী। তাই ভগবানের চরণে বাঁধা লক্ষ্মী দেবী। দেবী লক্ষ্মীর স্বামী নারায়নের প্রসঙ্গে বলা হয় যে, নার শব্দের অর্থ হলো মোক্ষ আর অয়ন শব্দের মাধ্যমে অভিলাষিত জ্ঞানকে বোঝায়। অর্থাৎ যিনি চৈতন্য স্বরূপ জ্ঞানের দেবতা যাঁর থেকে ঈপ্সিত জ্ঞান লাভ হয়, তিনিই হলেন নারায়ন।

লক্ষ্মীর উপাচার কি?

কিভাবে হয় এই কোজাগরী লক্ষ্মীপূজা? আশ্বিন মাসের পূর্ণিমা তিথিতে অর্থাৎ কোজাগরী পূর্ণিমায় দেবী লক্ষ্মীর আরাধনা করা হয়। অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘বাংলার ব্রত’ বইতে এই লক্ষ্মীপূজা সম্পর্কে বিস্তৃত আলোচনা করেছেন। সেখানে তিনি জানান, দেবীর কাছে ভালো ফলনের কামনা করাই আসলে এই পূজার নৃতাত্ত্বিক কারণ। পূজা বা ব্রত কথার সঙ্গে আলপনার একটি  সম্পর্ক রয়েছে। আলপনা আসলে ‘কামনার প্রতিচ্ছবি।’ দেবী পূজা উপাচার হিসেবে থাকে ফল, মিষ্টি, মোয়া, নাড়ু প্রভৃতি। কোজাগরী লক্ষ্মীর প্রতি আচার নিবেদনের সঙ্গেও একটি লোকবিশ্বাস জড়িত রয়েছে। পূজার সময় মোট ১৪টি পাত্রে উপাচার রাখা হয়। তারপর পূর্বপুরুষদের উদ্দেশে জল দানের রীতি রয়েছে। কাঠের জলচৌকির ওপর লক্ষ্মী প্রতিমাকে স্থাপন করা হয়। এরপর কলাপাতায় টাকা, স্বর্ণ মুদ্রা, ধান, পান, কড়ি, হলুদ ও হরিতকি দিয়ে সাজানো হয় পূজার স্থানটিকে।

নিশাচর পেঁচাকেই কেন দেবী লক্ষ্মী বাহন হিসেবে বেছে নিলেন?

এই প্রসঙ্গে বলা যায় যে, ঋগ্বেদ অনুযায়ী
পেঁচা হলো মৃত্যুর দেবতা যমের দূত। তবে যম আবার ধর্মরাজ, তাই যমরাজের অর্থ সংযম ও ধর্ম। তাই লক্ষী দেবীর বাহন পেঁচা ধনোপার্জনের ক্ষেত্রেও সংযমবুদ্ধি ও ধর্মীয় চেতনা বজায় রাখার কথা বলে। এক‌ইসাথে পেঁচা যমদূতের কথাও স্মরণ করিয়ে দেয় সকলকে। যমদূতের কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে পেঁচা সকলকে মনে করিয়ে দেয় যে যেভাবেই ধন উপার্জন করো না কেন, তা যেন সৎ পথে হয়। না হলে যমরাজ বসে আছে অন্যায়কারীকে শাস্তি দেওয়ার জন্য এবং মৃত্যু ও দাঁড়িয়ে আছে শিয়রে। সবাই প্রতীক্ষা করলেও মৃত্যু প্রতীক্ষা করবে না, তাই মৃত্যুর কথা স্মরণ করে মানুষ যেন সৎ পথে ধন উপার্জন করেন এবং ধর্মীয় বিষয়ে চিন্তা করেন।

তথ্য সংগৃহীত: ইন্টারনেট

Recent Posts