গলসির সন্তোষপুর কাণ্ডে তদন্তে নয়া মোড়, উঠে আসছে একাধিক সম্ভাবনার তথ্য

Souris  Dey

Souris Dey

ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,গলসি: গলসির সন্তোষপুর গ্রামে রবিবার উৎপল ঘোষ নামে এক ব্যক্তি খুন হয়ে যাওয়ার পরদিন উত্তেজিত গ্রামবাসীদের তাণ্ডবে গোটা গ্রামজুড়ে সন্ত্রাসের পরিবেশ তৈরি হয়েছিল। দুটো বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি উৎপল ঘোষের খুনে অভিযুক্ত প্রতিবেশী মনোজ ঘোষের একটি মোটর সাইকেল সহ আরেক প্রতিবেশী হারাধন ঘোষের দুটি ট্রাক্টর, একটি চারচাকা গাড়ি ও খড়ের পালুইয়ে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিল উত্তেজিত গ্রামবাসীরা। মুহূর্তে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি তৈরি হয়ে গিয়েছিল সন্তোষপুর গ্রামে। যে বাড়ি দুটিতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছিল ঘটনাচক্রে সেই মুহূর্তে কোন মানুষ বাড়িতে না থাকায় প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি। 

বিজ্ঞাপন

কিন্তু নেহাতই এক প্রতিবেশীর স্ত্রীকে আরেক প্রতিবেশী দীর্ঘদিন ধরে কটূক্তি করায় ও অশ্লীল মনোভাব দেখানোর প্রতিবাদ করায় গ্রামেরই এক ব্যক্তি খুন হয়ে যাওয়ার পরেরদিন কি কারণে খুনীর পরিবারের প্রতি ক্ষোভ উগলে না পড়ে এলাকায় তথাকথিত প্রভাবশালী হারাধন ঘোষের বাড়িতে ও তার চার চাকা গাড়ি, ট্রাকটর সহ খড়ের পালুইয়ে আগুন ধরিয়ে সন্ত্রাসের পরিবেশ সৃষ্টি করেছিল উত্তেজিত গ্রামবাসীরা তার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। ইতিমধ্যেই পুলিশ ঘটনায় যুক্ত থাকার অভিযোগে সোমবার ৩৯জনকে এবং বুধবার আরো একজনকে গ্রেপ্তার করেছে। ঘটনায় আরো কারা যুক্ত ছিল জানতে পাঁচ জনকে হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ।আর ঘটনার ৭২ ঘণ্টার মধ্যেই পুলিশ গত সোমবার বিকেলে গ্রামবাসীদের সেই তাণ্ডবের পিছনে আসলে কি রহস্য রয়েছে, বহিরাগত কারুর ইন্ধন ছিল কিনা তার তদন্তে অনেকটাই এগিয়ে গেছে বলেই সূত্রে জানা গেছে।

সূত্রে জানা গেছে, অনেকগুলো বিষয় সন্তোষপুর কাণ্ডে কাজ করেছে। তার মধ্যে চাঞ্চল্যকর বেশ কয়েকটি সম্ভাবনার তথ্য উঠে আসছে। এর মধ্যে অন্যতম – দীর্ঘদিন ধরে দামোদর নদের লোয়া ঘাট, রামগোপালপুর, সোদপুর, শিল্ল্যা ঘাট সহ বেশ কয়েকটি জায়গার অবৈধ বালি কারবার বন্ধে গলসি থানা কড়া পদক্ষেপ নিয়েছিল। প্রচুর ওভার লোডেড বালির গাড়ি ধরে জরিমানা ও চালক কে গ্রেপ্তার করে এই অবৈধ কারবারের মালিকদের বেআইনি কারবারের মেরুদন্ড ভেঙে দিয়েছিল। স্বাভাবিকভাবেই অবৈধ বালির কারবার থেকে আসা লক্ষ লক্ষ টাকা আচমকা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পুলিশের উপর ক্ষোভ বাড়ছিল এলাকার বালি মাফিয়াদের। 

সূত্রের খবর, বালি মাফিয়াদের একাংশ সুযোগ খুঁজছিল এমন কিছু ঘটনা ঘটানোর যার কারণে গলসি থানার পুলিশ বেকায়দায় পড়ে। আর সেই সুযোগে যদি থানার অফিসারদের বদলি করে দেওয়া হয়, তাহলে ফের তারা পুরনো মৌরুসিপাট্টা ফিরে পাবে। আর এই সম্ভাবনা থেকেই স্থানীয় কিছু বালি কারবারির মদতে খুনের ঘটনার পর গ্রামবাসীদের উস্কানি দিয়ে উত্তেজিত করা হয়েছে বলেই পুলিশ প্রাথমিক তদন্তে জানতে পেরেছে। ইতিমধ্যেই খুনের ঘটনায় এফআইআর-এ নাম থাকা এলাকারই দুজনের বিরুদ্ধে এই ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার বিষয়েও পুলিশি তদন্তে উঠে এসেছে। শামীম সেখ ওরফে খোকন ও মইদুল ইসলাম মল্লিক ওরফে সঞ্জয় নামে দুই ব্যক্তির খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ। 

অন্যদিকে গ্রামেরই বাসিন্দা হারাধন ঘোষ এলাকায় সুদের কারবার করেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। গ্রামের অনেকেই তার কাছে টাকা ধার করতেন। গ্রামবাসীদের একাংশের অভিযোগ হারাধন ঘোষের ব্যবহার ভাল ছিল না। সামান্য পাওনা টাকার জন্যেও অনেকের সঙ্গেই দুর্ব্যবহার করতেন তিনি। প্রভাব খাটাতেন। এই নিয়ে গ্রামের একাংশের ক্ষোভ ছিল হারাধন ঘোষের উপর। উৎপল খুনে অভিযুক্ত মনোজ ঘোষের সঙ্গে হারাধন ঘোষের ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিল বলেও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। ফলে একদিকে গ্রামবাসীদের একাংশের হারাধনের উপর ক্ষোভ অন্যদিকে খুনি মনোজের পরিবারের উপর আক্রোশ দেখানোর সুযোগে হারাধন ঘোষের সম্পত্তি তে আগুন ধরিয়ে দিয়ে অশান্তি সৃষ্টি করে পুলিশের উপর চাপ সৃষ্টি করারও লক্ষ্য থাকতে পারে বলে পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে এই সম্ভাবনার তত্ব উঠে আসছে। এক্ষেত্রেও গ্রামবাসীদের দিয়ে আগুন ধরিয়ে গ্রামকে অশান্ত করার পিছনে মদত ছিল বহিরাগত কয়েকজনের বলে সূত্রে জানা গেছে। 

এদিকে এই অশান্তির ঘটনায় যাদের প্রত্যক্ষ মদত থাকতে পারে বলে পুলিশি তদন্তে নাম উঠে আসছে তারা গলসি ২-ব্লকের প্রাক্তন সভাপতির ঘনিষ্ট বলে স্থানীয় সূত্রে জানতে পারা গেছে। গলসি পুলিশের কড়া শাসনে দামোদরের বুকে অবৈধ বালির কারবারে ভাটা পরার পর থেকেই শাসকদলের মদতপুষ্ট এই সমস্ত দুষ্কৃতীরা অর্থনৈতিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল। ফলে রাজনৈতিক কিংবা প্রশাসনিক কোনোভাবেই কোন সাহায্য না পাওয়ায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছিল বালির কারবারের সঙ্গে যুক্ত লোয়া, রামগোপালপুর, সন্তোষপুর, সোদপুর সহ অন্যান্য গ্রামবাসীদের একাংশ। আর এই বিক্ষুদ্ধ গ্রামবাসীদের খুনের পর সুযোগ বুঝে একত্রিত করে সোমবার কয়েকজন (এফআইআর এ নাম আছে) সন্তোষপুর গ্রামে উৎপল ঘোষের দেহ ফিরতেই অশান্তি পাকানোর ইঙ্গিত দিয়েছিল বলে তদন্তে উঠে আসছে। এখন পুলিশ সমস্ত দিক খতিয়ে দেখে এই ঘটনার শেষ দেখতে চাইছে বলেই জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।

আরো পড়ুন