গলসির সন্তোষপুর কাণ্ডে দিলীপ ঘোষ সহ গ্রেপ্তার ৩৯জন, ঘটনাস্থলে সিআইডির ফিঙ্গারপ্রিন্ট এক্সপার্ট টিম

Souris  Dey

Souris Dey

ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,গলসি: মাথায় কুড়ুল মেরে গলসি থানার লোয়া রামগোপালপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের সন্তোষপুর গ্রামের প্রতিবেশী যুবককে খুনের ঘটনার পর সোমবার উত্তেজিত গ্রামবাসীরা রীতিমত তাণ্ডব চালিয়েছিল অভিযুক্তের এবং তার আত্মীয়দের বাড়িতে। বাড়ি, গাড়ি সহ খড়ের পালুইয়ে আগুন ধরিয়ে দিয়ে রীতিমত সন্ত্রাস সৃষ্টি করেছিল সন্তোষপুর গ্রামেরই উত্তেজিত শতাধিক গ্রামবাসীরা। গ্রামবাসীদের তাণ্ডবে পুড়ে ছাই হয়ে যায় অভিযুক্তের মোটর সাইকেল থেকে দুটো ট্রাক্টর, একটি চার চাকা গাড়ি, একটি খড়ের পালুই ও দুটি বাড়ির একাংশ। ঘটনার ভয়াবহতায় সোমবার দুপুরে পর থেকে গোটা এলাকাজুড়ে আতংকের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিল। যদিও উৎপল ঘোষ নামে এক মাছ ব্যবসায়ীকে খুনের ঘটনায় রবিবার রাতেই গলসি থানার পুলিশ ঘটনায় মূল অভিযুক্ত মনোজ ঘোষ নামে এক প্রতিবেশী যুবককে গ্রেপ্তার করে। কিন্তু তারপরেও আচমকা গ্রামবাসীদের একাংশের ব্যাপক তাণ্ডবে কার্যত দিশেহারা হয়ে পড়ে পুলিশ। 

বিজ্ঞাপন

জেলা পুলিশ সুপার কামনাশিস সেন জানিয়েছিলেন, ‘খুনের ঘটনার কয়েকঘন্টার মধ্যেই অভিযুক্তকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। তারপরেও যারা আইন নিজেদের হাতে তুলে নিয়ে গ্রামে অশান্তির পরিবেশ সৃষ্টি করেছে তাদের কাউকে ছাড়া হবে না। দোষী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে প্রত্যেককে গ্রেপ্তার করা হবে।’ আর এরপরই সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত লোয়া রামগোপালপুর গ্রাম পঞ্চায়েত জুড়ে পুলিশি অভিযানে সন্তোষপুর গ্রামে অশান্তির ঘটনায় ৩৯জনকে গ্রেপ্তার করল গলসি থানার পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতদের সকলের বাড়ি সন্তোষপুর গ্রামে। ধৃতদের বিরুদ্ধে দলবদ্ধ ভাবে ষড়যন্ত্র করে অশান্তি সৃষ্টি, গৃহস্থের সম্পত্তিতে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর, অবৈধ জমায়েত সহ প্রাণনাশের চেষ্টা ও সরকারি কাজে বাধা দানের অভিযোগ আনা হয়েছে।

মঙ্গলবারই সন্তোষপুর গ্রামের বাসিন্দা তপন বাগদি (৫০), বাবলু বাগদি (৪০), সুবোধ বাগদি (৫৫), রাজু বাগদি (২৯), ধনেশ্বর মন্ডল ওরফে নারু (৫৫), দিলীপ ঘোষ ওরফে দিলু (৫৮) সহ বাকি অভিযুক্তদের বর্ধমান আদালতে পেশ করেছে পুলিশ। পাশপাশি ৩৯জন অভিযুক্তের মধ্যে পাঁচজনকে তিনদিনের পুলিশি হেফাজত চেয়ে আবেদন জানানো হয়েছে আদালতে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, অভিযুক্তদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে এই ঘটনায় আরো কারা যুক্ত ছিল পুলিশ তা জানবে। আর তারপর বাকি অভিযুক্তদের খুঁজে বের করে গ্রেপ্তার করা হবে। এদিকে মঙ্গলবার সকালে গলসি থানায় জড়ো হয়ে বিক্ষোভ দেখায় সন্তোষপুর গ্রামের গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের লোকজন। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, যাদের পুলিশ ধরে নিয়ে এসেছে তাদের অনেকেই এই ঘটনায় যুক্ত ছিল না। ৩৯ জন ধৃতের মধ্যে অনেকেই নির্দোষ। তাদের অবিলম্বে ছেড়ে দিতে হবে এবং অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় যারা মূল অভিযুক্ত তাদের গ্রেপ্তার করতে হবে। 

অন্যদিকে মঙ্গলবার সন্তোষপুরে অগ্নিকান্ডের তদন্তে এল কলকাতা সিআইডির ফরেন্সিক ফিঙ্গার প্রিন্ট এক্সপার্ট টিমের একটি বিশেষ দল। এই দলে রয়েছে সিআইডির ইন্সপেক্টর শৈবাল বাগচি সহ চার জন। এদের মধ্যে একজন ফটোগ্রাফার ও দুজন ফিঙ্গারপ্রিন্ট এক্সপার্ট রয়েছেন। মঙ্গলবার সকালে এই টিম গলসী থানায় এসে পৌঁছায়। থানার একজন অফিসারকে সঙ্গে নিয়ে তারা সন্তোষপুর গ্রামে পৌঁছান। ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুনে পুড়ে যাওয়া বাড়ি ও গাড়ি গুলি পরীক্ষা-নিরিক্ষা করে দেখার পাশপাশি খুন করতে ব্যবহার করা কুড়ুলের নমুনা সংগ্রহ করেন। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, একটি মোটর সাইকেলের চাবি ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। যদিও একটি মোটর সাইকেলে আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দেওয়ায় পুলিশের প্রাথমিক অনুমান প্রমাণ লোপাটের জন্য দুষ্কৃতীরা চেষ্টা করেছে। সমস্ত দিক খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

আরো পড়ুন