তৃণমূল নেতাদের তোলাবাজি নিয়ে সরব তৃণমূলের নেতারাই, ব্যাপক চাঞ্চল্য বর্ধমানে

Souris  Dey

Souris Dey

বিজ্ঞাপন
ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান: এনআরসি এবং সিএএ নিয়ে পূর্ব বর্ধমান জেলা আইএনটিটিইউসির ডাকা সভায় বক্তব্য রাখতে এসে তথাকথিত এক আইএনটিটিইউসি নেতার বিরুদ্ধে সরাসরি জেলা পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ করে গেলেন আইএনটিটিইউসির রাজ্য সভানেত্রী দোলা সেন। এই ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে গোটা জেলা জুড়ে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই জেলা আইএনটিটিইউসির রাজ্য সভানেত্রী দোলা সেনকে নিয়ে গোটা বর্ধমান জুড়ে একাধিক কর্মসূচী নেয় জেলা নেতৃত্ব। 
জেলা আইএনটিটিইউসির সভাপতি ইফতিকার আহমেদ ওরফে পাপ্পু জানিয়েছেন, এদিন দোলা সেনকে নিয়ে বেশ কয়েকটি জায়গায় দিদিকে বলো কর্মসুচী পালন করা হয়েছে। কয়েকটি উদ্বোধন প্রকল্প ছাড়াও তিনি কয়েকটি কারখানাও যান। এদিকে, এদিন বর্ধমান সংস্কৃতি লোকমঞ্চে এনআরসি ও সিএএ নিয়ে আয়োজিত সভায় বক্তব্য রাখেন দোলা সেন। হাজির ছিলেন জেলা তৃণমূল নেতা খোকন দাস, উজ্জ্বল প্রামাণিক সহ জেলা নেতারাও। মাধ্যমিক পরীক্ষার মাঝেই এদিন সংস্কৃতি লোকমঞ্চের বাইরেও মাইক লাগিয়ে এই সভা করার ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়ায়। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে সংস্কৃতি লোকমঞ্চের বাইরে থাকা মাইক বাজানো বন্ধ করে দেন। যদিও এব্যাপারে আয়োজক নেতারা কিছু বলতে চাননি। 
অপরদিকে, এদিন এই সভামঞ্চে বক্তব্য রাখতে গিয়ে খোকন দাস, জেলা আইএনটিটিইউসি সভাপতি ইফতিকার আহমেদ এবং রাজ্য সভানেত্রী দোলা সেন রীতিমত সরব হয়েছেন তৃণমূলের একাংশ যাঁরা আইএনটিটিইউসির নাম করে তোলাবাজি করছেন তাঁদের বিরুদ্ধে। সামনেই বর্ধমান পুরসভার ভোট। তার আগেই তৃণমূলের নেতাদের নামে রীতিমত তোলাবাজি নিয়ে সরব হওয়ায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। 
এদিন বক্তব্য রাখতে গিয়ে বর্ধমান শহরের লড়াকু নেতা তথা বর্ধমান পুরসভার প্রাক্তন কাউন্সিলার এবং তৃণমূল জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক খোকন দাস বলেন, পাপ্পুকে আইএনটিটিইউসির দায়িত্ব দেবার আগে যাঁরা দায়িত্বে ছিলেন তাঁরা কেবলমাত্র তোলাবাজিই করে গেছেন। সংগঠনকে বাড়ানোর কোনো চেষ্টাই করেনি। অযোগ্য এই নেতারা এমনকি শ্রমিকদের স্বার্থও তাঁরা দেখেননি। মালিকপক্ষের সঙ্গে কথা বলেই তাঁরা নিজেদের পকেট ভরিয়েছেন। আর পাপ্পুকে দায়িত্ব দেবার পর পাপ্পু যখন শ্রমিক স্বার্থে কাজ করতে শুরু করেছে সেই সময় কয়েকজন নেতা পাপ্পুর নামে অভিযোগ জানাচ্ছেন। আসলে পাপ্পুর জন্য তাঁদের মাসিক তোলাবাজি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তারা সরব হয়েছেন। 
খোকন দাস এদিন বলেন, চুড়িদার পাঞ্জাবী পড়ে আইএনটিটিইউসির নাম করে নেতারা তোলাবাজি করছে। তারা লোকসভা নির্বাচনের পর কোথায় ছিল? তারা কেউই রাস্তায় বের হয়নি। তখন তাঁরা কয়েকজন রাস্তায় নেমে বিজেপিকে ঘর ঢুকিয়ে দিয়েছেন। এখন তারা এসে বলতে শুরু করেছে তারা দীর্ঘদিন তৃণমূল করছেন। এদিন এই সমস্ত নেতাদের বিরুদ্ধে রীতিমত কড়া ভাষায় সমালোচনা করেন খোকন দাস। 
অন্যদিকে, বক্তব্য রাখতে গিয়ে ইফতিকার আহমেদ এদিন বলেন, সম্প্রতি বামেদের ডাকা বনধে তৃণমূল কংগ্রেসের বাস শ্রমিক সংগঠন সমস্ত বাস বন্ধ রেখেছিল। অথচ তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় বলেছেন বনধ করা যাবে না। পাপ্পু এদিন এই বিষয়টি তুলে ধরে দোলা সেনের কাছে ব্যবস্থা নেবার আর্জি জানিয়েছেন। পাশাপাশি তিনি জানিয়েছেন, তাঁরাই পারেন এব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে। কিন্তু এব্যাপারে দলীয় উচ্চ নেতৃত্বই ব্যবস্থা নিক। অন্যদিকে, এদিন বক্তব্য রাখতে গিয়ে রাজ্য সভানেত্রী দোলা সেনও জেলা নেতাদের বক্তব্যের রেশ ধরে জানান, খোদ তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দোপাধ্যায়ের কড়া নির্দেশ শ্রমিক সংগঠনের নামে কোনোরকম চাঁদা তোলা যাবে না। কিন্তু এদিন তিনি বর্ধমানে এসে এরকম একটি অভিযোগ পেয়েছেন। 
আইএনটিটিইউসির অনুমোদন না থাকা এক নেতা চাঁদা তুলছেন বলে তিনি জানার পরই জেলা পুলিশ সুপারকে এব্যাপারে তিনি ব্যবস্থা নেবার আবেদন জানিয়েছেন। তাঁর এই অভিযোগকেই এফআইআর হিসাবে গ্রহণ করারও আবেদন জানিয়েছেন। এদিন বক্তব্য রাখতে গিয়ে দোলা সেন বলেন, আপনারাও শ্রমিক নেতৃত্বদের ওপর কড়া নজর রাখুন। তাঁরা কি করছেন খেয়াল রাখুন। তাঁরা মুখে যা বলছেন কাজে তা করছেন কিনা তার ওপর কড়া নজর রাখুন। বাম আমলে রাজ্যের শ্রমিকদের অবস্থা করুণ অবস্থায় পৌঁছানো, কলকারখানা বন্ধ হওয়া, রুগ্ন হওয়ার বিষয়গুলি তুলে ধরে তিনি এদিন বলেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের নির্দেশে রাজ্যে শ্রমিক সংগঠনের কোনো বনধ পালিত হয়নি গোটা রাজ্যে। তাই কোনো শ্রমদিবসও নষ্ট হয়নি। অন্যদিকে, বাম আমলে কেবলমাত্র ধর্মঘটের জেরেই ৭৭ লক্ষ শ্রমদিবস নষ্ট হয়েছে। 
এদিন দিদিকে বলো কর্মসূচীতে বেড়িয়ে বেশ কয়েক জায়গায় শ্রমিকরা তাঁদের ন্যায্য পাওনা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেন দোলা সেনের কাছে। দোলা সেন জানিয়েছেন, এব্যাপারে তিনি অভিযোগ পেয়েছেন, তা নথীভুক্তও করেছেন। ফিরে গিয়ে তিনি শ্রম দপ্তরের সঙ্গে কথা বলবেন। এদিন বক্তব্য রাখতে গিয়ে আসন্ন বর্ধমান পুরসভা নির্বাচনের পর খোকন দাসকে বড় কোনো পদ দেওয়া হবে বলেও এদিন জানিয়ে যান দোলা সেন।

আরো পড়ুন