ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান: ফের ফিরে এলো লকডাউনের সেই দিনগুলোর আতঙ্ক। ফের রুটি রুজিতে টান পড়ার আশংকায় দুলতে শুরু করে দিল বর্ধমান ষ্টেশন এলাকার প্রায় ১৫০০হকার। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কিভাবে প্রতিদিনের সংসার প্ৰতিপালন করবে তাই নিয়ে দুশ্চিন্তায় রাতের ঘুম ছুটছে এই রোজ আনি রোজ খাই হকার দের। কার্যত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী উত্তরোত্তর করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির ঘটনায় আগামী ১৪দিন সমস্ত লোকাল ট্রেন বাতিল করার কথা ঘোষণার পরই এই আতংক ছেয়ে গেল হকারদের মধ্যে।
বিজ্ঞাপন
এদিন বর্ধমান ষ্টেশন সংলগ্ন ঝালমুড়ি বিক্রেতা বাবু দাস জানিয়েছেন, লোকাল ট্রেন বন্ধ হওয়ায় তাঁদের চরম সমস্যার মধ্যে পড়তে হবে। এরপর যদি এক্সপ্রেস ট্রেনগুলিও বন্ধ করে দেওয়া হয় তাহলে কার্যত তাঁদের অনাহারেই দিন কাটাতে হবে। তিনি জানিয়েছেন,এমনিতেই অনেক দূরপাল্লার ট্রেন বর্ধমান ষ্টেশনে থামে। কিন্তু করোনা সংক্রমণের জেরে সেগুলি যদি না থামে তাহলে তাঁরা চরম সংকটে পড়বেনই। তিনি জানিয়েছেন, প্রথমবার করোনা সংক্রমণের জেরে তাঁদের আর্থিক অবস্থা একেবারেই তলানিতে এসে ঠেকেছে। একটু একটু করে তাঁরা ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছিলেন। এমতবস্থায় ফের লকডাউনে তাঁরা কার্যত অসহায় হয়ে পড়লেন।
অন্যদিকে বর্ধমান স্টেশন হকার্স ইউনিয়নের সম্পাদক শেখ নৌসাদ জানিয়েছেন, লোকাল ট্রেন বন্ধ করে দেওয়া মানে সরাসরি তাদের পেটে লাথি মারা। লোকাল বন্ধ হয়ে যাওয়া মানে আর কোন গাড়িতে প্যাসেঞ্জার হবে না। বিশেষত মেল ট্রেন বা এক্সপ্রেস ট্রেনে। কারণ লোকাল ট্রেন থেকে নেমেই মানুষ মেল ট্রেন ধরে। অনেকেই দূরপাল্লার ট্রেন ধরার জন্য লোকাল ট্রেনে এসে স্টেশনে বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করেন। অনেকেই সেই সময় চা, ঝালমুড়ি, বিস্কুট বা আরো অনেককিছু খাওয়াদাওয়া এবং কেনাকাটা করেন। এখন এসবই বন্ধ হয়ে গেল। ফলে স্টেশনের উপর বা ট্রেনের উপর নির্ভর করে যাদের জীবনজীবিকা চলে তাদের বাস্তবিক রুটি রুজি বন্ধ হয়ে গেল।
নৌসাদ জানান, হকারদের কাছে এটা জীবনমরণ সমস্যা। কারণ হকারদের জন্য কেউই কোনোদিন চিন্তা ভাবনা করেনি। তিনি জানান, তাঁরা নিজের কামান, নিজেরা খান। আর পরিবার চালান। এর আগে লকডাউনের সময় ইউনিয়নের পক্ষ থেকে হকারদের পাশে দাঁড়িয়ে চাল,ডাল সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছিল। এরই মধ্যে অনেক হকার এই পেশা থেকে সরে গিয়ে অন্য পেশায় চলে গেছেন। রোজগারের তাগিদে। তবু আবার নতুন করে সবাই শুরু করেছিলেন। কিন্তু করোনার বাড়াবাড়িতে আবার সেই আগের অবস্থাই ফিরে এলো।
এদিকে, লোকাল ট্রেন বন্ধ হওয়ায় তার প্রভাব এবার সরাসরি বাজারেও পড়তে চলেছে। কারণ এই লোকাল ট্রেনের মাধ্যমেই বিভিন্ন জায়গায় মালপত্র নিয়ে ব্যবসায়ীরা যাতায়াত করেন। বর্ধমান শহরের কাঁচা বাজারের অধিকাংশ মালই আসে জামালপুর, মেমারী, শিবাইচণ্ডী প্রভৃতি এলাকা থেকে। লোকাল ট্রেন বন্ধ হওয়ায় সেই সমস্ত মালপত্র বাজারে না আসার সম্ভাবনা। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, যদিও কিছু মালপত্র আসে তার দামও বাড়বে। কারণ ট্রেন বন্ধ হওয়ায় অন্যান্য পরিবহণের মাধ্যমে তাঁদের মালপত্র আনতে পরিবহণ খরচ বাড়বেই – যার প্রভাব কাঁচা শাকসব্জির বাজারে পড়বে। ফলে দাম বাড়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।