সিপিএমের বর্ধমান জেলা সম্পাদক হিসাবে নির্বাচিত হলেন সৈয়দ হোসেন

Souris  Dey

Souris Dey

ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান: জনগণের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্ক গড়ে তোলাই একমাত্র পথ।  দুদিন ধরে সিপিএমের পূর্ব বর্ধমান জেলা সম্মেলনে এটাই একমাত্র মন্ত্র বলে গৃহিত হল। দুদিনের এই সম্মেলন শেষে সিপিএমের বর্ধমান জেলা সম্পাদক হিসাবে নির্বাচিত হলেন সৈয়দ হোসেন। ২০১৮ সালে এই পদে এসেছিলেন অচিন্ত্য মল্লিক। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সামনেই পুরভোট। স্বাভাবিকভাবেই নির্বাচনী লড়াইয়ের পাশাপাশি সংগঠনকে মজবুত করার লক্ষ্য নিয়েই সম্মেলনে দুদিন ধরে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। একদিকে পার্টি নেতৃত্বের ত্রুটি সংশোধন, অন্যদিকে সাধারণ মানুষের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তোলার ওপর জোড় দেওয়া হয়েছে। 

বিজ্ঞাপন

উল্লেখ্য, সিপিএমের বর্ধমান জেলায় মোট সদস্য সংখ্যা বর্তমানে ৭১৫৮জন। পার্টির সম্পাদকীয় প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, পার্টি সদস্য পুননর্বীকরণের ক্ষেত্রে হতাশাজনক চিত্র। একইসঙ্গে নতুন পাটি সদস্য হওয়ার ক্ষেত্রেও সংখ্যা আশাব্যঞ্জক নয়। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১৮ সালে নতুন পার্টি সদস্য হয়েছেন ২৫২ জন, ২০১৯ সালে ৩৯৬জন,২০২০ সালে ৬০০জন এবং ২০২১ সালে মাত্র ২৯২জন। উল্লেখ করা হয়েছে ২০২১ সালে ৬টি এরিয়া কমিটি থেকে একজনও নতুন সদস্য হননি। 

পার্টি সদস্য পুনর্নবীকরণের ক্ষেত্রেও অনীহা লক্ষ্য করা গেছে। ২০১৮ সালে মহিলা পার্টি সদস্য পুনর্নবীকরণ করেছেন ৯.৬৩ শতাংশ, তরুণরা করেছেন ৬.৫৭ শতাংশ। ২০১৯ সালে মহিলা ৯.৩০, তরুণ ৫.৪৮ শতাংশ, ২০২০ সালে মহিলারা ৯.২৮,তরুণরা ৪.৭৩ শতাংশ এবং ২০২১ সালে মহিলা পার্টি সদস্য পুনর্নবীকরণ করিয়েছেন ৭.৮ শতাংশ এবং তরুণরা করিয়েছেন ১৭.৮০ শতাংশ। চলতি বছরের হিসাব অনুযায়ী তপশিলী জাতি ভুক্ত পার্টি সদস্যরা পুনর্নবীকরণ করিয়েছেন ২২০০ জন, আদিবাসী ৫৫৯ জন এবং সংখ্যালঘু সদস্যরা পুনর্নবীকরণ করিয়েছেন ১৫৩৬ জন। 

উল্লেখ্য, শনি ও রবিবার বর্ধমান টাউন হলে আয়োজিত সিপিএমের জেলা সম্মেলন শেষে জেলা সম্পাদক পরিবর্তনের পাশাপাশি ৫৮ জনের নতুন জেলা কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩জন স্থায়ী আমন্ত্রিত সদস্য রয়েছেন। সিপিএমের এই জেলা সম্মেলনে স্বীকার করা হয়েছে রাজ্যের শাসকদলের তথা তৃণমূল সরকারের জনকল্যাণমুখী কর্মসূচী সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক প্রভাব  ফেলেছে। সম্পাদকীয় প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে – তৃণমূল কংগ্রেসের সরকারের জনকল্যাণমুখী কর্মসূচী জনগণের উল্লেখযোগ্য অংশের মানুষের মধ্যে যথেষ্ট ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে এবং এদের মধ্যে থেকে একটা ভোট ব্যাঙ্ক তৈরী হয়েছে বলা যায়। সরকারের কাজগুলি জনমনে কি প্রতিক্রিয়া তৈরী করছে তা আমরা হিসেবের মধ্যে রাখিনি। 

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে – এটা ঠিক গ্রামীণ শ্রমজীবীদের মধ্যে আমাদের সমর্থন হ্রাস ও তাদের মধ্যে জীবন জীবিকার প্রশ্নে সেই ধরণের ধারাবাহিক শ্রেণী আন্দোলন গড়ে তোলার ক্ষেত্রে আমাদের দুর্বলতার কারণে তৃণমূল এবং বিজেপি ঐ অংশের মধ্যে তাদের প্রভাব বাড়াতে পেরেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে – মহিলাদের মধ্যে থেকে বাড়তি সমর্থন তৃণমূল কংগ্রেস পেয়েছে। তরুণ অংশের মধ্যে থেকে আমাদের প্রতি সমর্থনে দুর্বলতা সামনে এসেছে। বিশেষ করে গরীব অংশের মধ্যে এই প্রবণতা স্পষ্টতই নজরে পড়ে।

 জেলার তরুণ অংশের প্রার্থীর মনোনয়ন সাধারণভাবে প্রশংসিত হলেও নির্বাচনী ফলাফলে তার ইতিবাচক প্রতিফলন দেখা যায়নি। সম্পাদকীয় প্রতিবেদনে সংগঠনের ত্রুটিও উল্লেখ করে বলা হয়েছে, পার্টির সাংগঠনিক প্লেনামের সিদ্ধান্তকে বারে বারে আলোচনা সত্ত্বেও জেলায় কার্যকর করা যায়নি। বলা হয়েছে, বয়স্ক এবং অসুস্থ কমরেডদের বাদ দিয়ে প্রায় ২০ শতাংশের বেশি পার্টি সদস্য নিষ্ক্রিয় থেকেছেন অথবা আনুষ্ঠানিকতা বজায় রেখে কাজ করেছেন।

আরো পড়ুন