বর্ধমানে ভগত সিং-এর মূর্তি এখন হকারদের পসরার আড়ালে ঢাকা পড়েছে

Souris  Dey

Souris Dey

ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,বর্ধমান: বর্ধমান শহরের স্টেশন মোড় এলাকায় শহীদ ভগত সিং এর মূর্তি এখন স্থানীয় হকারদের দখলে। অভিযোগ, এই শহীদের মূর্তির চারপাশ দখল করে মালপত্রের বস্তা,পেটি সহ বিভিন্ন নোংরা আবর্জনা পরে থাকলেও হেলদোল নেই প্রশাসনের। জনবহুল রাস্তার পাশে এই মূর্তি আজ থেকে ১২বছর আগে প্রতিষ্ঠা হলেও এখন মূর্তির সামনের অংশ হকারদের দখলে চলে যাওয়ায় সেটি আর প্রায় মানুষের চোখেই পরে না। এদিকে বাম আমলে এই রাজ্যের মনীষীদের প্রতি যথাযোগ্য গুরুত্ব, সন্মান জানানো হতো না বলে অভিযোগ তুলে খোদ বর্তমান শাসকদলের নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে গোটা রাজ্য জুড়েই মনীষের জন্মদিন, মৃত্যুদিনকে যথাযোগ্য মর্যাদার সঙ্গে পালন করার রেওয়াজ চালু হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

 কিন্তু বর্ধমান শহরের প্রাণকেন্দ্র খোদ স্টেশন মোড় এলাকায় হকারদের দখলে চলে যাওয়া শহীদ ভগত সিংয়ের মূর্তি যে দিনের পর দিন অযত্নে, অবহেলায় পড়ে রয়েছে তা দেখার কেউ নেই। অভিযোগ এই হকাররা তৃণমূল কংগ্রেস আশ্রিত। খোদ দলনেত্রীর নির্দেশে যেখানে রাজ্য জুড়ে মনীষীদের সম্মান জানানো হচ্ছে সেখানে কিভাবে তৃণমূল আশ্রিত হকারদের মনে ভগত সিং সম্পর্কে এই উদাসীনতা ? তা নিয়েই চর্চা শুরু হয়েছে শহর জুড়ে।

উল্লেখ্য, গত ২০০৮ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারী তৎকালীন ফরওয়ার্ড ব্লক সাংসদ দেবব্রত বিশ্বাস বর্ধমানের ষ্টেশন মোড় এলাকায় সারা ভারত যুবলীগের রাজ্য সম্মেলন উপলক্ষ্যে এই ভগত সিং-এর আবক্ষ মূর্তির আবরণ উন্মোচন করেন। এরপর কয়েকবছর ভগত সিং-এর জন্মদিন ও মৃত্যুদিনে তাঁর গলায় মালা দেওয়া বা সম্মান জানানো হলেও আস্তে আস্তে আবেগ অস্তমিত হয়। ২০১২ সালে বর্ধমানের খণ্ডঘোষের ওঁয়াড়ি গ্রামে বিপ্লবী বটুকেশ্বর দত্তের বাড়িতে আসেন ভগত সি-এর ভাগ্নে জগমোহন সিং। সেইদিন বর্ধমানের একটি মানবাধিকার সংগঠনের পক্ষ থেকে জগমোহন সিং-কে বর্ধমান শহরে সম্মানিত করা হয়। জগমোহন সিং ওইদিনই ষ্টেশন মোড়ে ভগত সিং-এর মূর্তিতে মালা দেন। এরপরই তিনি ওঁয়াড়ি গ্রামে চলে যান।

 শহীদ বটুকেশ্বর দত্ত স্মৃতি রক্ষা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মধুসূদন চন্দ জানিয়েছেন, ভগত সিং- মূর্তিটি অবহেলায় অনাদরে পড়ে রয়েছে দীর্ঘদিন। গতবছর থেকেই তাঁরা এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছেন। তিনি দাবী করেছেন, যেহেতু ওই মূর্তিটি বর্ধমান পুরসভার অধীন তাই পুরসভাও তার দায় এড়াতে পারে না। মধুসূদনবাবু জানিয়েছেন, ১৯২৮ সালের ১৭ ডিসেম্বর এণ্ডারসনকে হত্যা করে ভগত সিং বটুকেশ্বর দত্তের সঙ্গে পালিয়ে আসেন ওঁয়াড়ি গ্রামে। সেই সময় ডিসেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে ১৯২৯ সালের জানুয়ারী মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে মোট ১৫দিন ওঁয়াড়ি গ্রামে আত্মগোপন করে থাকেন। এই সময়েই তিনি মাটির তলায় গোপন কুটিরে ৩দিন ৩ রাত্রি কাটান।

স্বাভাবিকভাবেই ভগত সিং- সম্পর্কে বর্ধমান বাসীর একটা আলাদা আবেগ রয়েছে বলে জানিয়েছেন মধুসূদন বাবু। তিনি জানিয়েছেন, সেই বীর সন্তানের মূর্তিই এখন অনাদরে পড়ে রয়েছে। এটা তাঁদের কাছে লজ্জার। যদিও এই বিষয় সম্পর্কে কোনো তৃণমূল নেতাই মুখ খুলতে চাননি। অপরদিকে, ভগত সিং-এর মূর্তির এই অবমাননা এবং তাঁর মূর্তিকে দখল করে হকারদের পসরা সাজিয়ে বসার ঘটনায় বর্ধমানের আলুডাঙার হজরত খাজা গরীব নওয়াজ পঞ্চরণ চক ট্রাষ্টির উদ্যোগে জেলাশাসকের দৃষি আকর্ষণ করা হয়েছে।

 সংগঠনের সদস্য মহম্মদ ইকবাল হোসেন এবং কাজী আসফাক নাজিব জানিয়েছেন, বাংলার এক বীর সন্তানের এই অবমাননা বন্ধ হোক। তাঁকে যোগ্য সম্মান জানানো হোক। মূর্তির পাদদেশ এলাকা থেকে উচ্ছেদ করা হোক হকারদের – এটাই তাঁদের দাবী। এব্যাপারে তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীর কাছেও আবেদন জানাতে চলেছেন।

আরো পড়ুন