ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,বর্ধমান: পূর্ব বর্ধমান জেলার বিভিন্ন মন্দিরে যেখানে ভক্তদের জন্য নিত্য ভোগের আয়োজনের ব্যবস্থা রয়েছে সেই সমস্ত মন্দিরের বেশ কয়েটিতে সম্প্রতি পরিদর্শনের পর ভক্তদের জন্য নিবেদিত সেই ‘ভোগ’ স্বাস্থ্যকর ও নিরাপদ বলেই অনুমোদন দিতে চলেছে খাদ্য সুরক্ষা দপ্তর। এমনকি এই অনুমোদন পুজোর আগেই চলে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন বর্ধমানের সর্বমঙ্গলা মন্দিরের ট্রাস্টি বোর্ডের সম্পাদক সঞ্জয় ঘোষ। যদিও এই তালিকায় জেলার আরও কয়েকটি ধর্মীয় স্থানও রয়েছে।
জানা গেছে, বিভিন্ন ধর্মীয় স্থানে জনসাধারণের জন্য যে ভোগ বা প্রসাদের আয়োজন করা হয় মন্দির কমিটির পক্ষ থেকে, সেটি কতটা নিরাপদ বা স্বাস্থ্যবিধি মেনে তৈরি ও পরিবেশন করা হচ্ছে তা খতিয়ে দেখেই খাদ্য সুরক্ষা দফতর এই অনুমোদন দেয়। ব্লিসফুল হাইজেনিক অফারিং টু গড (blissfull, hyagenic offering to god) বা ভোগ (BHOG) নামে এই সার্টিফিকেট দেওয়া হয় মন্দির কর্তৃপক্ষ কে। ভগবানের কাছে আনন্দময়, স্বাস্থ্যকর নৈবেদ্য অর্পণ করা বলা হয় এই খাদ্যকে। বর্ধমান শহরের সর্বমঙ্গলা মন্দির, কাঞ্চননগরে কঙ্কালেশ্বরী মন্দির ছাড়াও কাটোয়া শহরের ক্ষেপি মায়ের মন্দির রয়েছে এই অনুমোদনের তালিকায়। এরমধ্যে সর্বমঙ্গলা মন্দিরে বহু বছর আগে থেকেই পুন্যর্থীদের নিত্য ভোগের আয়োজন হয়ে আসছে।
ইতিমধ্যেই খাদ্য সুরক্ষা দফতর থেকে মন্দির চত্বর পরিদর্শন করা হয়েছে। আধিকারিকরা বিভিন্ন বিষয়গুলি খতিয়ে দেখেছেন। বিভিন্ন নমুনাও সংগ্রহ করেছেন তাঁরা। মূলত যে বিষয় গুলি খতিয়ে দেখেছেন পরিদর্শনকারী দলের সদস্যরা সেইগুলি হল, মন্দির চত্বরে যে অংশে ভোগ রান্না করা হচ্ছে সেই জায়গা কতটা পরিষ্কার রয়েছে। ভোগ পরিবেশনের স্থানে যথাযত ব্যবস্থা রয়েছে কিনা। যারা রান্না বা পরিবেশনের কাজে যুক্ত রয়েছেন তারা যথাযত পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখছেন কিনা। স্বস্থ্যবিধি মেনে কাজ করছেন কিনা। এছাড়া, ভোগের জন্য ব্যবহৃত উপকরণ স্বাস্থ্যকর কিনা, রান্নার ক্ষেত্রে কি কি উপকরণ ব্যবহার করা হচ্ছে সেই বিষয়গুলিও গুরুত্ব সহকারে দেখা হয়। আর সমস্ত দিক খতিয়ে দেখার পরই বর্ধমানের সর্বমঙ্গলা মন্দির অনুমোদনের নিরিখে অনেকটাই এগিয়ে রয়েছে বলে জনা গেছে। পুজোর আগেই এই অনুমোদন মিলবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন মন্দির কর্ত্রীপক্ষ।
উল্লেখ্য, এরই মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে মন্দির কর্তৃপক্ষকে নিয়ে বৈঠক করেছেন খাদ্য সুরক্ষা দপ্তরের আধিকারিকরা। যেখানে কিভাবে পরিচ্ছন্ন পরিবেশ ও স্বাস্থ্যকর খাবার বজায় রাখা যাবে সেই সমস্ত বিষয়ে আলোচনা করা হয়। এই কাজে নিযুক্ত ব্যক্তিদের প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা করা হয়। খাদ্য সুরক্ষা দফতরের আধিকারিক অভিক পান্ডা জানান, ” সর্বমঙ্গলা মন্দির ছাড়াও বর্ধমানের আরও কয়েকটি ধর্মীয় স্থান রয়েছে যেখানে নিয়মিত নিত্য ভোগের আয়োজন করা হয়। সবগুলিই প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে। বর্ধমানের সর্বমঙ্গলা মন্দির পরিদর্শন করেছি আমরা। মন্দির কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। এই কাজের সঙ্গে যুক্ত কর্মীদের দ্রুত প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা করা হবে। পুজোর আগেই এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।”
সর্বমঙ্গলা মন্দিরের ট্রাস্টি বোর্ডের সম্পাদক সঞ্জয় ঘোষ বলেন, “খাদ্য সুরক্ষা দফতরের আধিকারিকরা সর্বমঙ্গলা মন্দিরের রান্নাঘর, ভোগ খাওয়ানোর জায়গা, জলের ব্যবস্থা সহ বিভিন্ন দিক খতিয়ে দেখে পরিদর্শন করে গিয়েছেন আধিকারিকরা। এছাড়াও জল,খাবার ও অন্যান্য জিনিসের নমুনা সংগ্রহ করে নিয়ে গিয়েছেন তারা। তাদের নির্দেশ মতো যে ব্যবস্থা করতে বলা হবে সেগুলি আমরা করবো। পূজোর আগেই এই অনুমোদন মিললে সেটা সত্যি আনন্দের বিষয় হবে। সর্বমঙ্গলা মন্দিরে দৈনিক ২৫০ থেকে ৩০০ জন ভোগ খান। এই অনুমোদন মিললে পূণ্যর্থীরাও নিঃসংকোচে ভোগের বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারবেন।”
গত শুক্রবার এই বিষয়ে একটি প্রশিক্ষণ শিবিরের আয়োজন করা হয়। জেলার ৪ টি হাসপাতালের কর্মী, মন্দির কর্তৃপক্ষ ও মিষ্টি ব্যবসায়ীদের নিয়ে খাদ্য সুরক্ষা দফতরের আধিকারিকরা বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেন। এই শিবিরে ছিলেন ডেপুটি সিএমওএইচ-২ সুবর্ণা গোস্বামী, জেলা খাদ্য সুরক্ষা দফতরের আধিকারিক অভিক পান্ডা ও অন্যান্যরা। কালনা, কাটোয়া, মেমারি ও ভাতার হাসপাতালের রান্নার কাজের সঙ্গে যুক্ত কর্মী, বর্ধমান শহরের বিভিন্ন মিষ্টির দোকানে নিযুক্ত কর্মী ও সর্বমঙ্গলা মন্দিরের নিত্যভোগের সঙ্গে নিযুক্ত কর্মীরা এই শিবিরে অংশ নেন।
খাদ্য সুরক্ষা দফতরের আধিকারিক অভীক পান্ডা জানান, এদিন জেলায় প্রথমবার এই ধরনের প্রশিক্ষণ শিবিরের আয়োজন করা হল। এরপরেও এই ধরনের শিবিরের আয়োজন করা হবে। জেলার অন্যান্য হাসপাতালের কর্মীদের ও বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট ও হোটেলের কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। পরবর্তীকালে খাদ্য সুরক্ষা দফতরের পক্ষ থেকে নিয়মিত নজরদারি চালানো হবে। নির্দিষ্ট গাইডলাইনের মানা না হলে সেই উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি। খাদ্য সুরক্ষা দফতরের পক্ষ থেকে জানা গিয়েছে, যেসমস্ত জায়গায় নিয়মিত খাবার তৈরি হয়। সেখানে খাবারের গুনগত মান, ব্যবহৃত উপকরণের দিক গুলি বিষয়েও নির্দেশিকা রয়েছে।