ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,বর্ধমান: ফের খবরের কেন্দ্রবিন্দুতে বর্ধমানের সরাইটিকর পঞ্চায়েতের খাগড়াগড়। না, এবার কোনো বোমা বিস্ফোরণ বা জাল নোট তৈরির কারখানার হদিস পাওয়া যায়নি নতুন করে। তবে এবার এলাকার সাধারণ মানুষ এলাকারই কিছু যুবকের বিরুদ্ধে নানান অসামাজিক কাজকর্মের প্রতিবাদ জানিয়ে শান্তিতে বসবাস করার জন্য প্রায় শতাধিক মানুষ গণসাক্ষর সম্বলিত লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন বর্ধমান থানায়। আর এই ঘটনায় নতুন করে অশান্তির বাতাবরণ তৈরি হয়েছে খাগড়াগড় এলাকা জুড়েই। প্রশাসন এই অভিযোগের ভিত্তিতে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে এই আশঙ্কায় ইতিমধ্যেই রাতের অন্ধকারে অভিযোগকারীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে অভিযুক্তরা চমকাতে শুরু করেছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে স্থানীয়দের কাছ থেকে।
যদিও অভিযোগকারীদের সকলেই জানিয়েছেন, এলাকার এই যুবকদের দৌরাত্ম্য যদি অবিলম্বে বন্ধ করতে প্রশাসন উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ না করে তাহলে তারা বৃহত্তর আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবেন। কারণ ছোট ছেলে মেয়েদের নিয়ে এলাকায় বসবাস করতে হয় তাদের। পড়াশুনা, খেলাধুলা, যাতায়াত সবই প্রতিদিন করতে হয় পাড়ার মধ্যে দিয়েই। আর এই বকাটে, মস্তান টাইপের ছেলেরা প্রতিদিন স্থানীয় যুব সংঘ নামে একটি ক্লাবের সামনে বসে সকলকে নানা ভাবে উত্যক্ত করছে। এও বলছে তারা নাকি শাসক দলের মদতপুষ্ট! মেয়েদের টোনটিটকিরি থেকে অশ্রাব্য ভাষায় সারাদিন গালিগালাজ করছে এরা। এমনকি রাস্তায় বসেই এরা মদ,গাঁজা নিয়ে নেশা করে। পাড়ার বাসিন্দা হলেও এরা পাড়ার লোকেদের কাউকেই সম্মান করেনা। উল্টে নিজেদের ক্ষমতা দেখিয়ে বিভিন্ন মানুষের কাছে তোলাবাজি চালায়। এইভাবেই ওরা ওদের রোজগার করে। স্বাভাবিকভাবেই এলাকার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে বলে অভিযোগ।
অভিযোগকারীরা বর্ধমান থানার পুলিশ কে দেওয়া অভিযোগে সাফ জানিয়েছেন, এই সমস্ত যুবকদের কাজকর্ম নিয়ে কেউ কোনো প্রতিবাদ করলে এরা খারাপ ভাষায় গালাগালি দেওয়ার পাশাপাশি প্রকাশ্যে হুমকি দিয়ে বলে ‘আমরা যা খুশি করবো, কারো কিছু করার থাকলে করে নে। আরও বলে যে, আমরা তৃণমূল রাজনৈতিক দলের সমর্থক, থানা পুলিশ আমাদের কথায় ওঠে বসে। যেখানে খুশি যা, কেউ আমাদের বিরুদ্ধে কিছু করতে পারবি না।’ অভিযোগকারীরা জানিয়েছেন, ওদের অত্যাচারে খাগড়াগড় গ্রামের মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। এলাকায় ছেলে মেয়েদের নিয়ে বসবাস করাই দায় হয়ে উঠেছে। এলাকায় সন্ত্রসের পরিবেশ তৈরি করেছে এরা।
অন্যদিকে এলাকারই একাংশ সূত্রে জানা গেছে, এই এলাকাটি স্থানীয় সরাইটিকর পঞ্চায়েতের মধ্যে পরে। সামনেই পঞ্চায়েত নির্বাচন। আর তার আগে এলাকার সাধারন মানুষের এই সমস্যায় কেউই ব্যবস্থা নিচ্ছে না। ফলে পঞ্চায়েত ভোটে এই ঘটনার প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা। পঞ্চায়েত সদস্য সেখ ফিরোজ বলেন,’ যুব সংঘ নামে যে ক্লাবের কথা বলা হচ্ছে তার কোনো অস্তিত্ব নেই এলাকায়। এলাকার কিছু ছেলেদের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন সাধারণ মানুষের অভিযোগ রয়েছে। আমি প্রশাসন কে জানিয়েছি। আজ এলাকার মানুষ অভিযোগ করেছেন, প্রশাসন, পুলিশ অভিযোগ খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেবে।’
বর্ধমান ২ব্লক সভাপতি কাকলি তা গুপ্ত বলেন,’ আপনি যখন আমায় ফোন করছেন তার একটু আগেই ওই এলাকা থেকে আমার কাছে ফোন এসেছে। থানায় যারা অভিযোগ জানিয়েছে তাদের হুমকি দিচ্ছে এলাকার কিছু যুবক। আমি পুলিশ কে জানাচ্ছি অভিযোগ খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা গ্রহণ করার বিষয়ে। ‘ ডিএসপি ট্রাফিক-২ রাকেশ চৌধুরী বলেন, ‘অভিযোগ যখন এলাকার লোকেরা করেছেন, তখন পুলিশ নিশ্চই বিষয়টি খতিয়ে দেখবে। যদি অভিযোগের সত্যাতা থাকে তাহলে আইন মেনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এদিকে যে ক্লাবের বিরুদ্ধে অভিযোগ সেই ক্লাবের সদস্য মহম্মদ ইনসান ক্লাবের বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করে জানান,” আমাদের ক্লাব এলাকায় সারা বছর সামাজিক কাজকর্মের সঙ্গে যুক্ত। এলাকার উন্নয়ণের ক্ষেত্রেও অনেক কাজ করেছে ক্লাব। এলাকায় অসামাজিক কাজ বন্ধ করতে সদস্যরা সচেতন। এই কারণেই কিছু মানুষের আক্রোশের মুখে পড়তে হচ্ছে ক্লাবের সদস্যদের। দীর্ঘদিনের পুরনো এই ক্লাবকে কালিমালিপ্ত করতেই এই ধরনের অভিযোগ করা হয়েছে।” সবমিলিয়ে ফের খাগড়াগড় এলাকায় নতুন করে অশান্তির মেঘ জমতে শুরু করল বলেই মনে করছেন এলাকাবাসীর একাংশ।