ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,বর্ধমান: অবশেষে বর্ধমান পুরসভা এলাকায় টোটো চলাচলের ওপর নির্দিষ্ট নিয়মাবলী লাগু করতে চলেছে জেলা প্রশাসন। আগামী ১মার্চ থেকেই টোটো চলাচলের নতুন নিয়ম কার্যকরী হয়ে যাবে বলেই বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসনের একটি বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মূলত শহরের যানজট নিয়ন্ত্রণ ও অনিয়ন্ত্রিতভাবে টোটোর সংখ্যা বৃদ্ধি রুখতেই এই পদক্ষেপ বলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। উল্লেখ্য সম্প্রতি হাওড়ায় একটি সভায় পরিবহন মন্ত্রী (transport minister) স্নেহাশীষ চক্রবর্তী লাগামছাড় টোটোর কারণে রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় ও গ্রামাঞ্চলে যানজট সৃষ্টির বিষয়ের ওপর আলোকপাত করেছিলেন। এমনকি এই মুহূর্তে টোটো কে সরকারি ভাবে অনুমোদন দেওয়ার কোন পরিকল্পনা নেই বলেও উল্লেখ করেছিলেন। আর এরপর পূর্ব বর্ধমান জেলা প্রশাসনের বৈঠকে শহরের টোটো চলাচলের ওপর নিয়ন্ত্রণ জারি করার সিদ্বান্ত ঘোষণা করায় শহরবাসীর অধিকাংশই স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছেন।
এদিন বৈঠক শেষে প্রশাসন সুত্রে জানা গেছে, এখনই রুট ভাগ করা নাহলেও বর্ধমান শহরের রাস্তায় পুরসভার রেজিস্ট্রিকৃত টোটো ছাড়া অন্য কোনও টোটো চলাচল সম্পূর্ন বন্ধ করতে চলেছে জেলা প্রশাসন। পাশাপাশি, বর্ধমান শহর সংলগ্ন পঞ্চায়েত এলাকার টোটো গুলির শহরে ঢোকার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট এলাকা বেঁধে দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার এই বিষয়ে একটি পূর্ব বর্ধমান জেলার জেলা শাসকের অফিসে একটি বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এদিনের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন জেলাশাসক প্রিয়াঙ্কা সিংলা, পুলিশ সুপার কামনাশিস সেন, বিধায়ক (কাটোয়া) রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়, বর্ধমান দক্ষিণের বিধায়ক খোকন দাস, বর্ধমান পুরসভার চেয়ারম্যান পরেশ চন্দ্র সরকার প্রমুখ।
জানাগিয়েছে, বর্ধমান শহরের টোটো চলাচলের নতুন নিয়ম আগামী ১ লা মার্চ থেকে কার্যকর করা হবে। এরআগে, পুরসভার তরফে নীল সাদা ও সবুজ সাদা দুটি আলাদা রঙের টোটোগুলিকে পুরসভার পক্ষ থেকে রেজিস্ট্রেশন নম্বর দেওয়া হবে। শুক্রবার থেকেই এই কাজ শুরু হবে। আপাতত বর্ধমান শহরে পুরসভায় নাথিভুক্ত ৩৭০০ টোটো চলাচল করবে বলে জানানো হয়েছে। বৈঠকের সিদ্ধান্ত হয়েছে, পঞ্চায়েতের টোটো শহরের মূল অংশে প্রবেশ করতে পারবে না। সে জন্যে চারটে পয়েন্ট ঠিক করা হয়েছে। নবাবহাট এলাকার পঞ্চায়েতের টোটো গোলাপবাগ পর্যন্ত, বাজেপ্রতাপপুর সংলগ্ন পঞ্চায়েতের টোটো রেল সেতুর কাছে আর উল্লাস এলাকার টোটো আলিশা বাসস্ট্যান্ড-ঘোড়দৌড় চটি পর্যন্ত আসবে। বর্ধমান দক্ষিণের পঞ্চায়েত এলাকার টোটোগুলির শেষ সীমানা হবে তেলিপুকুর। তবে রোগী নিয়ে যাতায়াত করলে শহরের ভিতর পঞ্চায়েতের টোটোগুলিকে শহরের ভিতর প্রবেশে ছাড় দেওয়া হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
বর্ধমান উন্নয়ন সংস্থার চেয়ারপার্সন কাকলি গুপ্ত তা বলেন, “বিভিন্ন পঞ্চায়েতের সঙ্গেই আলোচনা করে প্রস্তাব রাখা হয়েছিল। পঞ্চায়েতগুলি টোটোগুলিকে হলুদ রং করা হবে। এ ছাড়াও কোন পঞ্চায়েতের টোটো সেটিও নির্দিষ্ঠ করে চিহ্নিত করে দেওয়া হবে। সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেই জেলা প্রশাসন সার্বিকভাবে এই সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে।”
বিধায়ক খোকন দাস বলেন, “যে টোটোগুলিকে ইতিমধ্যে দিন ও রাতের হিসেবে রং করা হয়েছে পুরসভার তরফে, সেগুলিকে প্রথমে রেজিস্ট্রেশন দেওয়ার কাজ শুরু হবে। এক্ষেত্রে টোটোর মালিককেই চালক হিসেবে ধরা হবে। একজন মালিক একাধিক টোটো কিনে ব্যবসা করতে পারবেন না। সোমবার থেকে পুলিশ প্রশাসনের সহায়তায় টোটোর ‘স্বাস্থ্য-পরীক্ষা’ করে টাউন হল থেকে রেজিস্ট্রেশন দেওয়ার কাজ শুরু হবে। টোটোর স্বাস্থ্য, আলো, ‘লুকিং’ আয়না ঠিক আছে কি না দেখা হবে। একই সঙ্গে ডান দিক দিয়ে টোটোতে যাত্রী তোলাও বন্ধ করা বাধ্যতামূলক বলে বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সবমিলিয়ে প্রশাসন ও বর্ধমান পুরসভার পক্ষ থেকে অনেক প্রচেষ্টার পর বর্ধমান শহরের রাস্তায় টোটো চলাচলের ক্ষেত্রে নিয়ম বেঁধে দেওয়া হচ্ছে। আগামী ১ মার্চ থেকে এই নিয়ম লাগু করা হবে। অবশেষে জট কাটিয়ে শহরকে যানজট মুক্ত করতে জেলা প্রশাসনের এটি একটি বড় পদক্ষেপ বলেই মনে করছেন শহরবাসীর অধিকাংশ নাগরিক।