বর্ধমানে বালি পাচারের ‘নয়া’ কৌশল, সাদা বস্তায় ভরে ডাম্পারে করে চলছে পাচার

Souris  Dey

Souris Dey

ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,বর্ধমান: বারো চাকা, ষোলো চাকা ডাম্পারের মাথা ছাপিয়ে থরে থরে সাজানো সাদা প্লাস্টিকের বস্তা। একের পর এক ট্রাক ছুটছে জাতীয় সড়কের ওপর দিয়ে। বর্ধমান শহরের ইদিলপুর হনুমান মন্দির সংলগ্ন রাস্তা ও আঞ্জির বাগান ফ্লাই ওভারের নিচ থেকে এই সমস্ত বস্তা ডাম্পারে লোড হয়ে প্রতিদিন বেরিয়ে যাচ্ছে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে। কিন্তু এই সাদা বস্তায় ভরে আসলে যাচ্ছে কি? ফোকাস বেঙ্গল এর পর্যবেক্ষণে যে তথ্য উঠে এসেছে সেটা চমকে যাওয়ার মতো।

বিজ্ঞাপন

সাদা বস্তায় ভরে ডাম্পারে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে দামোদর নদের বালি। রীতিমত জেলা প্রশাসনের ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দপ্তর এমনকি জেলা পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে দিনের পর দিন এই অভিনব ‘ নয়া ‘ কারবার চালিয়ে যাচ্ছে ইদিলপুর এলাকার বেশ কয়েকজন বালি মাফিয়া। স্থানীয় এলাকাবাসীর একাংশের অভিযোগ এই বেআইনি ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত কারবারিদের মাথায় হাত রয়েছে স্থানীয় এক প্রভাবশালী তৃণমূল নেতার! যদিও এই কারবার দীর্ঘদিন ধরে চললেও, পুলিশ বা প্রশাসন এতদিন সেইভাবে নজরই দেয়নি বলে অভিযোগ। এর পিছনেও এক অদৃশ্য সমঝোতা কাজ করছে বলে স্থানীয় এলাকাবাসীদের একাংশ অভিযোগ করেছেন।

সোমবার আচমকাই সন্ধ্যার পর ইদিলপুর হনুমান মন্দির লাগোয়া বালি খাদ এলাকায় বর্ধমান থানার পুলিশ অভিযানে নামে। কিভাবে, কারা এই নদীর বালি চুরি করে বস্তায় ভরে পাচার করছে, এমনকি কেনই বা বালি বস্তায় ভরে ট্রাকে করে পাচার করা হচ্ছে – এই সমস্ত অভিযোগ খতিয়ে দেখতে এলাকায় অভিযানে নামে পুলিশ বলে সূত্রের খবর। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সারা রাত পুলিশ এলাকায় নজরদারি চালিয়েছে অবৈধ বালি কারবারিদের খোঁজ পেতে। যদিও এরপরেও ইদিলপুর এলাকা  থেকে বেশ কয়েকটি বালির বস্তা ভর্তি ডাম্পার এদিন বিনা বাধায় এলাকা থেকে বেরিয়ে জাতীয় সড়ক ধরে বেরিয়ে যায়। সেই ছবিও সংবাদ মাধ্যমের কাছে পৌঁছেছে।

এলাকার বাসিন্দাদের একাংশ জানিয়েছেন, বালি খাদ চালানোর থেকেও এখন এই পালিশ বালি পাচারের ব্যবসা নাকি বেশি লাভজনক। সূত্রের খবর এই ব্যবসায় ডাম্পার প্রতি নাকি প্রায় ৫০হাজার টাকা পর্যন্ত মুনাফা থাকে কারবারিদের। জানা গেছে প্রথমে নদী থেকে বালি চুরি করে মজুদ করা হচ্ছে এলাকার বিভিন্ন জায়গায়। পরে সেই বালি কে ছাঁকনি দিয়ে ঝেড়ে নেওয়ার পর শুকিয়ে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ জন লেবার দিনরাত সাদা বস্তায় ভরে থরে থরে সাজিয়ে রাখছে খাদান এলাকায়। সন্ধ্যার পর বা রাতে এই বালির বস্তা গুলোকে ডাম্পারে লোড করে পাচার করে দেওয়া হচ্ছে। একটি ডাম্পারে কমপক্ষে প্রায় ৭০০ থেকে ৭৫০বস্তা বালি পাচার করা হচ্ছে বলে সূত্রের খবর।

সূত্রের খবর ইদিলপুর এলাকায় এই মুহূর্তে কোনো বৈধ বালি খাদ নেই। তবুও প্রতিদিন কয়েকশো ট্রাক এই এলাকা থেকে বালি নিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন জায়গায়। পাশপাশি এই ছাঁকনি বালি ভর্তি বস্তা সহ ডাম্পার গুলো চলে যাচ্ছে দুর্গাপুর, ডানকুনি, শিয়ালদহ সহ আরো অন্যান্য জায়গায়। বর্ধমান ১ব্লক ভূমি আধিকারিক বিশ্বজিৎ ঘোষ জানিয়েছেন, ‘ ইদিলপুরে সরকার অনুমোদিত কোন বালি ঘাট এই মুহূর্তে নেই। বেআইনি ভাবে বালি তোলার খবর পেলেই আমরা অভিযান চালাই। লক্ষাধিক টাকা জরিমানাও করা হয়। তবে বস্তায় ভরে বালি পাচারের অভিযোগ এখনও পাইনি। দু একদিনের মধ্যেই এই ব্যাপারে এলাকায় অভিযানে নামা হবে। প্রয়োজনে আইনানুগ পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

আরো পড়ুন