গলসি জুড়ে ওজনসেতু থেকে রমরমিয়ে চলছে প্রকাশ্যে বালি কাটিংয়ের কারবার

Souris  Dey

Souris Dey

ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,গলসি: জাতীয় সড়কের ধারে দিন-দুপুরে ওজন করার কাঁটা (ওয়ে ব্রীজ) থেকে চলছে বেআইনি বালির কারবার। সেই বালি বেআইনিভাবে বিক্রিও হচ্ছে চড়া দামে। দশচাকা, বারো চাকা ও চোদ্দ চাকা গাড়িতে সেই বালি পাচার হয়ে চলে যাচ্ছে কোলকাতা সহ রাজ্যের বিভিন্ন জেলায়। পূর্ব বর্ধমান জেলার গলসির পারাজ – শিল্লা রোড়ে রমরমিয়ে চলছে এই কারবার। দিনের আলোয় প্রকাশ্যেই পাচার করা হচ্ছে বালি। সূত্রের খবর গাড়িতে ব্যবহার হচ্ছে বীরভূম, মুর্শিদাবাদ ও বাঁকুড়ার চালান। অভিযোগ, এতে সমস্যায় পরছেন বৈধ ঘাট মালিকরা।

বিজ্ঞাপন

স্থানীয় এক গাড়ি চালাক জানান, তারা সোদপুর ও শিল্লা ঘাট থেকে বালি আনেন। সেই বালির ওজন করাতে হয় ঢোলা ও রাইপুর পুলের ওয়ে ব্রীজ গুলোতে। ওভার লোড থাকলে বালি নামিয়ে দিতে হয় কাঁটাতেই। সেই উদ্বৃত্ত বালি কাঁটা মালিক ও স্থানীয় কিছু বালি মাফিয়া কম দামে কিনে নেয় বলে অভিযোগ। সূত্রের খবর টন প্রতি বালির দাম নেওয়া হয় ১৫০ টাকা। তবে ওই বালি যখন কাঁটা থেকে অন্য গাড়িতে বিক্রি হয় তখন তার দাম ৫৮৩ টাকা প্রতি টন। উপরি পয়সা কামাতে গাড়ির চালক ঘাট থেকে বেশি মাল চাপিয়ে এনে কাঁটাতে বিক্রি শুরু করেছে। ফলে সারাদিনে এক একটি কাঁটাতে কুড়ি ত্রিশ গাড়ি বালি পরছে। ফলে লক্ষ লক্ষ টাকা মুনাফা লাভের আশায় একদিকে যেমন কাঁটার (ওয়ে ব্রীজ) সংখ্যা বাড়ছে, তেমনি রাস্তার যেখানে সেখানে বালি কাটিং শুরু হয়ে যাচ্ছে। ক্ষতি হচ্ছে কোটি কোটি টাকার সরকারি রাজস্বের।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ঢোলার মোড় থেকে জাগুলিপাড়া মোড় পর্যন্ত তিন চারটি ওয়েব্রীজ অর্থাৎ কাঁটা রয়েছে। সেখানে মেশিন লাগিয়ে বালি চুরি করছে কাঁটা মালিকরা। রাস্তার ধার জুড়ে দিনদুপুরে স্থানীয় বালি মাফিয়ারা বালি কাটিং শুরু করেছে। নিত্য এই চুরির জন্য বিপর্যস্ত পারাজ – শিল্ল্যা রোডের মানুষের জনজীবন। বালি মাফিয়া ও কাঁটা মালিকদের ভয়ে কেউই মুখ খুলতে চাইছেন না।

স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, স্থানীয় শাসক দলের একাংশ এই বেআইনি কাজে মদত দিচ্ছে। তাই এই কারবার চালিয়ে যেতে পারছে অবৈধ কারবারিরা। উল্লেখ্য, কিছুদিন আগেই খণ্ডঘোষে একটি কাঁটা থেকে উদ্ধার হয় জেসিবি। গ্রেপ্তার করা হয় কাঁটার এক ম্যানেজার, গাড়ির চালক সহ তিনজনকে। অভিযোগ ছিল কাঁটায়  প্রচুর পরিমাণে বালি মজুত করা ছিল। পুলিশ অভিযান চালিয়ে ব্যবসা বন্ধ করার পাশাপাশি গ্রেপ্তার করে অবৈধ কারবারিদের।

এতেও হুঁশ ফেরেনি বালি মাফিয়াদের। স্থানীয়দের অভিযোগ, আগে রাতের অন্ধকারে এই কারবার চললেও এখন দিনের আলোয় প্রকাশ্যে চলছে এই কারবার। সকাল থেকে শ’য়ে শ’য়ে গাড়ি এসে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে কাঁটার পাশে। যার জন্য রাস্তার অধিকাংশ অংশটাই দখল হয়ে থাকছে। এর ফলে এলাকায় যানজট যেমন বাড়ছে তেমনি দুর্ঘটনার আশঙ্কা বাড়ছে। তারপরেও বেপরোয়া এই বালি মাফিয়ারা।

কয়েকদিন আগে বেপরোয়া বালির গাড়ির ধাক্কায় মারা যায় এক খেতমজুর। যার জেরে চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পরেছিল এলাকায়। পুলিশ প্রশাসন ব্যবস্থা নেবার আশ্বাস দিয়েছিল। তবে কাজের কাজ কিছু হয়নি বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। জাগুলিপাড়ার এক বাসিন্দা বলেন, আগে রাতে বালি কাটিং হত, এখান দিনের আলোয় প্রকাশ্যে মেশিন লাগিয়ে কাটিং ও লোড়িং হচ্ছে। তার দাবী শতশত গাড়ি রাস্তায় দাড়িয়ে বালি কাটায় স্কুলের ছাত্র ছাত্রীদের যাতায়াতের সমস্যা হচ্ছে। এমনকি অ্যাম্বুলেন্স আটকে যাচ্ছে। কিছু বলতে গেলেই তারা বলছে কাঁটার লাইসেন্স আছে। তাছাড়াও ওদের সাথে শাসক দলের নেতাকর্মীরা যুক্ত আছে। তাই ভয়ে আমরা চুপচাপ রয়েছি।

শাসক দলের এক নেতা জানান, ওই চুরিতে তৃণমুলের কারও মদত নেই। চোরেরা চুরি করছে আর শুধু শুধু দলের বদনাম হচ্ছে। আমরা বললেও বিপদ না বললেও বিপদ। প্রশাসন, পুলিশ ব্যবস্থা নিক। লোয়া রাম গোপালপুর পঞ্চায়েত প্রধান ফজিলা বেগম এই প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, ‘বেআইনি ভাবে কিছু বালি ব্যবসায়ী এই ধরনের কারবার চালাচ্ছে বলে শুনেছি। নির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

আরো পড়ুন