ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,মন্তেশ্বর: জ্ঞানেশ্বরী কান্ডে ধৃত ‘মৃত’ যাত্রী অমৃতাভ চৌধুরী কে জিজ্ঞাসাবাদের পর জানা গেছে তার বাড়ি পূর্ব বর্ধমান জেলার মন্তেশ্বর থানার বামুনপাড়া এলাকায়। এমনকি মন্তেশ্বর বাজারে ধৃত ব্যক্তি একটি ফ্ল্যাট নির্মাণ করছিলেন বলেও তদন্তকারী অফিসারেরা জানতে পেরেছেন। মূলত বিক্রির উদ্দেশ্যেই এই ফ্ল্যাট তৈরি করা হচ্ছিল বলেই তদন্তে উঠে এসেছে। আর এই খবর চাউর হতেই আলোড়ন পড়েছে এলাকায়। উল্লেখ্য জ্ঞানেশ্বরী কাণ্ডে এই অমৃতাভ চৌধুরীকে ‘মৃত’ যাত্রী সাজিয়ে তার পরিবার ক্ষতিপূরণ-চাকরি বাগিয়ে আইনের জালে জড়িয়েছে। এগারো বছর আগের জ্ঞানেশ্বরী কাণ্ডে মৃত ব্যক্তিদের কথা স্মৃতির অনেকটাই আড়ালে চলে গিয়েছিল। কিন্তু ফের ওই ঘটনা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে।
বিজ্ঞাপন
জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেসের যাত্রী ছিলেন কলকাতার জোড়াবাগান এলাকার বাসিন্দা অমৃতাভ চৌধুরী। ওই দুর্ঘটনায় ডিএনএ রিপোর্টের মাধ্যমে অনেকের দেহ শনাক্ত হয়েছিল। ঠিক তেমনই অমৃতাভর মৃত্যু নিশ্চিত করে তাঁর পরিবারের লোকজনকে ক্ষতিপূরণ বাবদ দক্ষিণ-পূর্ব রেল নগদ ৪ লক্ষ টাকা দেয়। এর পাশাপাশি মৃতের বোন মহুয়া পাঠককেও রেলে চাকরি দেওয়া হয় বলে সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে।
কিন্তু আচমকা এই অর্থপ্রাপ্তি ও চাকরির লোভে অমৃতাভ জীবিত থাকার খবর চেপে যান পরিবারের সদস্যরা। অবশেষে নাটকের যবানিকা ওঠে। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে দক্ষিণ-পূর্ব রেলের ভিজিল্যান্স সিবিআইকে অভিযোগ জানিয়ে তদন্তের আবেদন করে। শনিবার সিবিআই অমৃতাভ চৌধুরী ও তার বাবা মিহির চৌধুরীকে আটক করে দপ্তরে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতেই বিষয়টি স্পষ্ট হয়। জীবিত থেকেও মৃত পরিচয় দিয়ে সরকারি টাকা ও চাকরি ভোগের অভিযোগে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে সিবিআই।
একইসঙ্গে ডিএনএ রিপোর্টের সত্যতা যাচাইয়ের পাশাপাশি সরকারি কেউ এই অপরাধে জড়িত কিনা, ইতিমধ্যেই তারও তদন্ত শুরু হয়েছে। এদিকে রেল দুর্ঘটনায় গ্রামের ছেলে অমৃতাভ মারা গেছে বলেই জানতেন গ্রামবাসীরা। ‘মৃত’ ব্যক্তি যে জীবিত রয়েছেন জানতেনই না তাঁরা। কারণ বেশির ভাগ সময় তিনি কলকাতাতেই থাকতেন। মাঝে মাঝে মন্তেশ্বর আসতেন বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসীরা। ওই এলাকার স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, হঠাৎ মৃত ব্যক্তি অমিতাভকে দেখে প্রথমে তারা হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলেন। পরে এটাও তাঁরা ভেবেছিলেন কোনোভাবে হয়তো বেঁচে গেছেন অমৃতাভ। তাঁর মায়ের কোলে ফিরে গেছে সে। এই ভেবেই আনন্দিত হয়েছিলেন অনেক বাসিন্দারাই। তার পিছনে যে এত বড় প্রতারণা রহস্য লুকিয়ে রয়েছে তা বুঝেই উঠতে পারেননি মন্তেশ্বর এলাকার বাসিন্দারা।