ফোকাস বেঙ্গলে খবররে জের, ১২টি অবৈধভাবে বালি বোঝাই ট্রাক্টর বাজেয়াপ্ত করলো গলসি থানার পুলিশ

Souris  Dey

Souris Dey

ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক, গলসি: গলসির তিরিঙ্গা মোড় থেকে ১২ টি অবৈধ বালি বোঝাই ট্রাক্টর বাজেয়াপ্ত করেছে গলসি থানার পুলিশ। তবে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছানোর আগেই গাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যায় ট্রাক্টরের চালকরা। স্বাভাবিকভাবেই ঘটনাস্থল থেকে কাউকেই গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ বলে সূত্রের খবর। জানাগেছে, গতকাল সন্ধ্যার পর গোপন সূত্রে খবর পেয়ে গলসির তিরিঙ্গা মাড়ে পৌছায় গলসি থানার পুলিশ। সেখানেই ১২ টি বালি বোঝাই ট্রাক্টর দেখতে পায় পুলিশ। এরপর  ট্রাক্টর গুলিকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসা হয়। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, আটক ট্রাক্টর গুলোর বিরুদ্ধে নিদিষ্ট ধারায় মামলা রুজু করেছে পুলিশ। ট্রাক্টর গুলির মালিক ও চালক দের খোঁজে তল্লাশি শুরু করেছে পুলিশ। আগামী একমাস এই অভিযান চলবে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।

বিজ্ঞাপন

 

বেশ কিছুদিন ধরেই দামোদর নদে বালি চুরির অভিযোগ উঠেছিল। গলসি ২ নং ব্লকের গোহগ্রামের আশাপাশে ও গলসি ১ নং ব্লকের রাইপুর পুলের আশেপাশে বালি চুরি নিয়ে বহু মানুষ গোপনে ফোন করছিলেন ফোকাস বেঙ্গল এর প্রতিনিধিদের। তবে তারা কেউই প্রকাশ্যে আসতে চাননি বালি মাফিয়াদের ভয়ে। এরপরই বিষয়টি নিয়ে সবর হয়েছিলেন খোদ গোহগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান কানন মাঝি। তিনি গলসি থানার ওসি ও বিএলআরও কে ফোন করে অভিযোগ জানান। পাশাপাশি বাঁকুড়া জেলার পাত্রসায়ের থানা ও সেখানকার বিএলআরওকেও ফোনও করেন তিনি। তাতে অবশ্য কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেছিলেন উপপ্রধান। তিনি জানিয়েছিলেন, ‘বেআইনিভাবে বালি চুরি করে পাচার করার খবর পাওয়ার পরেও পুলিশ ও বিএলআরও যদি ব্যবস্থা না নেয় তাহলে সেটা আমাদের দুর্ভাগ্য।’

অবশেষে বিষ্ণুপুর লোকসভার সাংসদ সৌমিত্র খাঁ বিষয়টি নিয়ে সরব হন। তিনি বিষয়টি সংসদ ভবনে উত্থাপনের হুসিয়ারী দেন। পাশাপাশি বিদেশ সফর সেরে এলাকায় আসার পর বালির অবৈধ কারবার নিয়ে সংবাদ মাধ্যমের কাছে মুখ খুলবেন বলেও জানান। সেই সংবাদ তুলে ধরে ফোকাস বেঙ্গল। এরপরই ওইদিন সন্ধ্যায় গোহগ্রাম এলাকায় পৌছায় গলসি থানার পুলিশ। তবে সেইদিন কোন বালির বোঝাই ট্রাক বাজেয়াপ্ত করতে পারেনি পুলিশ প্রশাসন। পাশাপাশি কোন ট্রাক্টরকেও ছুতে পারেনি পুলিশ।

উল্লেখ্য, সেদিন স্থানীয়দের থেকে জানা গিয়েছিল, বেআইনিভাবে নদী থেকে বালি তুলতে এলাকায় কমবেশি ৫০ টি গাড়ি ঢুকেছিল। যার মধ্যে আট দশটি লরি বালি বোঝাই করে দাঁড়িয়েছিল। আর বেশ কয়েকটি গাড়িতে লোডিং চলছিল। তবু অজানা কারনে সেই গাড়ি গুলিকে ধরেনি অভিযানে যাওয়া গলসি থানার পুলিশ, এমনই অভিযোগ তুলেছিলেন স্থানীয়রা। স্থানীয়দের অনেকে আক্ষেপ করে জানান, রক্ষক যদি ভক্ষক হয় তাহলে এক টাকাও সরকারের ঘরে যাবে না। আর একদিন দামোদরের বালি শেষ হয়ে যাবে। তারা জানিয়েছিলেন, পুলিশ আসার খবর আগাম পেয়ে যাওয়ার পরই গাড়িগুলি স্থানীয় আমতলা, বাঁশতলা ও পুরতন গ্রামের কাছে ঘাট গুলির আশপাশে লুকিয়ে রাখা হয়েছিল।

এদিকে কি কারণে সেদিন অবৈধ বালির গাড়ি না ধরে ছেড়ে দিয়েছিল পুলিশ সেই প্রশ্নের উত্তর অবশ্য প্রশাসনের কোন কর্মকর্তার কাছে পাওয়া যায়নি। তবে রবিবার সকালে একটি নির্মান সংস্থার গেটের কাছে ১২ টি অবৈধ বালি বোঝাই ট্রাক্টর বাজেয়াপ্ত করেছে গলসি থানার পুলিশ। স্থানীয়দের প্রশ্ন, গাড়ি গুলি জাতীয় সড়কে উঠছে বেশকিছু গ্রাম পার করে। গ্রামগুলিতে রয়েছে প্রচুর সিভিক ভলেন্টিয়ার। এমনকি নজরদারির দায়িত্বে রয়েছে ভিলেজ পুলিশ। তারা নজরদারী রাখে গোটা পঞ্চায়েত এলাকায়। এখানেই তাদের প্রশ্ন, গলসি ১ নং ও ২ নং ব্লকের ভিতরের গ্রাম দিয়ে ট্রাক্টর গুলি আসার সময় কেন ধরতে পারছে না পুলিশ ও ভুমি দপ্তর?

তাহলে কি বালি কারবারিদের সঙ্গে গোপন কোন সমঝোতা রয়েছে নজরদারিতে থাকা সিভিক দের একাংশের সঙ্গে? নদী থেকে বালি চুরি করে গোহগ্রাম ও রাইপুর মোড়ে বড় বড় ট্রাকে বালি লোড হলেও সেই ট্রাক কেন ছুতে পারছে না পুলিশ? পুলিশ ও প্রশাসনের একাংশ মিলিত হয়ে এই অবৈধ কারবারে মদত দিচ্ছে না তো? যে সময়ে নদী থেকে বালি তোলা বন্ধ রাখার নির্দেশ সেই সময় এতো বালি চুরি হচ্ছে কি করে? গলসি এলাকার অনেকেই এখন এইসব প্রশ্নের জবাব খুঁজছে।

আরো পড়ুন