ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক, পূর্ব বর্ধমান: পূর্ব বর্ধমানের গলসিতে বালি ব্যবসা নিয়ে শাসক দলের এক গোষ্ঠীর নেতাদের সঙ্গে অন্য গোষ্ঠীর নেতাদের বিবাদ বারবার খবরের শিরোনামে উঠে এসেছে। এ নিয়ে শাসক দলের জেলা নেতৃত্বকেও অনেকসময় পড়তে হয়েছে অস্বস্তিতে। গলসি ১ ও ২ নম্বর ব্লকের শিল্ল্যাঘাট, সোদপুর, গোহগ্রাম, শিকারপুর, ডুমুর, দাদপুর, দক্ষিণ ভাসাপুর, গোপালপুর প্রভৃতি এলাকার আশপাশের অঞ্চলই কাঁচা টাকার উৎস হিসেবে পরিচিত। এই এলাকাগুলোর পাশ ঘেঁষেই বয়ে গেছে দামোদর নদ। এখানকার পঞ্চায়েত গুলো তাই খুবই গুরুত্বপূর্ণ। লোয়া রামগোপালপুর, শিড়রাই, গোহগ্রাম, পারাজ, লোয়া কৃষ্ণরামপুর এবং পোতনা পুরসা—এই পাঁচটি পঞ্চায়েত এলাকার দখল যাদের হাতে থাকে, অবৈধ বালি ব্যবসার নিয়ন্ত্রণও তাদের হাতেই থাকে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বালিঘাট খুললেই বৈধ ঘাটের আড়ালে চলে একশ্রেণির বালি মাফিয়াদের অবৈধ বালি কারবারের রমরমা। বৈধ ঘাটের কাগজ ব্যবহার করে রাতের অন্ধকারে অবৈধভাবে চলে বালির লুট। এমনকি সরকার অনুমোদিত নদের বৈধ এলাকা ছেড়ে যত্রতত্র থেকে বালি কেটে পাচার করা হয়ে বলেও অভিযোগ। পুলিশ, প্রশাসনকে ফাঁকি দিতে অন্য জেলার চালানও হামেশাই ব্যবহার করা হয় বালি পাচারে। ফলে প্রশাসনের নাকের ডগা দিয়ে অবৈধ বালির গাড়ি নির্বিঘ্নে বেরিয়ে যায়। স্বাভাবিকভাবেই একটা গোটা মরশুমে কয়েক কোটি টাকা সরকারি রাজস্ব চুরি হয়ে যায় গলসি এলাকা থেকেই বলে ওয়াকিবহাল মহলের অনুমান।
স্থানীয়রা অনেকেই জানিয়েছেন, শিল্ল্যা-পারাজ রোড এবং গোহগ্রাম-গলসির রাস্তা ব্যবহার করেই হাজার হাজার বালির গাড়ি প্রতিদিন নদী থেকে বালি তুলে যাতায়াত করে। স্থানীয়দের দাবি, এলাকার কিছু প্রভাবশালী নেতাকে টাকা না দিলে নাকি এক ছটাক বালিও স্থানান্তর হয় না। সেই টাকা নাকি আবার ভাগ হয়ে পৌঁছায় ব্লকের একাধিক নেতার কাছে। এলাকার মানুষের কাছে জানা গেছে, বর্তমানে রাজনৈতিক পদের কিছু পরিবর্তন হলেও পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। এরইমধ্যে জেলা প্রশাসন ফের বালি ঘাট চালুর নির্দেশ দিয়েছে সোমবার থেকে। এ নিয়ে এলাকায় সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্বেগ বেড়েছে। তাদের আশঙ্কা, বালির গাড়ির বখরা নিয়ে শাসক দলের নেতারা ক্ষমতার অপব্যবহার করবেন, আর তাতেই ফের অশান্তির পরিবেশ সৃষ্টি হতে পারে।
স্থানীয়দের মতে, এলাকার তিন-চারটি গোষ্ঠী আছে, যারা নিজেদের স্বার্থে যেকোনো সময় একে অন্যের সঙ্গে সমঝোতা বা বিবাদে জড়ায়। এই গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে অতীতে বারবার উত্তপ্ত হয়েছে জাগুলিপাড়া, ঢোলা, শিড়রাই, পারাজ, পুরসা, মনোহরসুজাপুর, গোহগ্রাম এবং শিকারপুর। বালির কারবারের সাথে যুক্ত মাফিয়ারা বৈধ কাগজের আড়ালে নানা কৌশলে অবৈধ ব্যবসা চালাচ্ছে যা প্রশাসনের ধরা ছোঁয়ার বাইরে বলে মত অনেকের। অন্যদিকে ওয়েব্রিজ (ধর্ম কাঁটা) গুলোতে বালির গাড়ি থেকে কেটে রাখা অতিরিক্ত বালিও হামেশাই বিনা চালানে পাচার করে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। প্রশাসনের নজরদারি থাকলেও তা কার্যকর করার ক্ষেত্রে অনেক সময়ই ব্যর্থ হতে দেখা গেছে।
স্থানীয় এলাকার অধিকাংশ মানুষ মনে করেন, শাসক দলের নেতারা যদি বালি ব্যবসা থেকে নিজেদের সরিয়ে নেন, তবে অশান্তি অনেকটাই কমে যাবে। তবে তা কার্যকর করবে কে, এই প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। ইতিমধ্যেই তৃণমূলের রাজ্য নেতৃত্ব ব্লক স্তরেও বেশ কিছু পদে পরিবর্তনের সম্ভাবনার বার্তা দিয়েছে। সেই নিয়েও গুঞ্জন শুরু হয়ে এলাকায়। যদিও সেই পরিবর্তনে আদৌ এলাকায় শান্তি ফিরবে কি না, তা নিয়ে সংশয়ও রয়েছে। এদিকে শিকারপুর এলাকার একদল বালি মাফিয়া ইতিমধ্যেই তাদের অবস্থান আরও মজবুত করতে শাসক দলের পাশাপাশি বিরোধী দলের সঙ্গেও সমঝোতা করতে শুরু করেছে বলে সূত্র মারফত জানা গেছে। যদিও গলসি ১ব্লকে দামোদর নদে চলতি মরশুমে কোনো বৈধ বালি ঘাটের অস্তিত্ব নেই। কিন্তু গলসি ২ ব্লকের ভাসাপুর, দাদপুর, জুজুটি, গোপালপুর, ডুমুর ও শিকারপুর এলাকায় প্রশাসন অনুমোদিত বালি ঘাটের একাধিক ইজারাদার রয়েছে। তবে বালি ঘাট খুললে পরিস্থিতি কোন দিকে গড়াবে, তা দেখতে স্থানীয়দের আরও অপেক্ষা করতে হবে।
ছবি – ফাইল