ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক, গলসি: পূর্ব বর্ধমান জেলার গলসি থানার অন্তর্গত বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে রয়েছে দামোদর নদ। আর এই নদ থেকে কিছু দুষ্কৃতি প্রতিদিন বেআইনিভাবে চুরি করে পাচার করে চলেছে বালি। মূলত গোহগ্রাম পঞ্চায়েতের বোমঘাট, সোজাঘাট, টেনি যাদবের ঢাল, আদর্শ সেন সিন্ডিকেটের ঢাল থেকে প্রতিদিন রাত ৮টা থেকে সকাল ৭ টা পর্যন্ত ট্রাক্টরে করে নদী থেকে বালি চুরি করে গোহগ্রাম–গলসি মেন রাস্তার ওপর একাধিক ওয়েব্রিজে ( কাঁটা) নিয়ে এসে অবৈধভাবে মজুদ করছে। পরে বিনা চালানে সেই বালি মোটা টাকায় বিক্রি করে দিচ্ছে কাঁটা মালিক তথা বালি মাফিয়ারা। রাত থেকে শুরু করে সকাল হতেই কারবার গুটিয়ে নিচ্ছে তারা। ফের পরেরদিন আবার একই কায়দায় চলছে বালি পাচারের ব্যবসা।

এই চক্রের সাথে স্থানীয় শাসক দলের একাংশ যেমন যুক্ত আছে বলে অভিযোগ, তেমনি পুলিশ ও প্রশাসনের একাংশের সেটিং নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেছেন এলাকার বসবাসকারী অনেকেই। শুধু যে গোহগ্রাম–গলসি রাস্তায় এই বেআইনি বালির কারবার চলছে তাই নয়, শিল্যা থেকে পারাজ রোডের ওপর প্রায় ৬/৭ টি কাঁটা থেকেও প্রতিদিন রাতে অবৈধ ভাবে বালি বিক্রি চলছে বলে অভিযোগ।
উল্লেখ্য, বৈধ বালি ঘাট থেকে ই–চালান সহ বালি লোড করে যাবার সময় গাড়িতে যাতে অতিরিক্ত পরিমাণ বালি না থাকে তার জন্য এই ওয়েব্রিজ গুলো তৈরি করা হয়। সেখানে গাড়ি থেকে কেবলমাত্র অতিরিক্ত বালি কেটে সঠিক ওজন করে দেওয়াই কাজ এই কাঁটা গুলোর। কিন্তু গোটা গলসি জুড়ে প্রায় সমস্ত কাঁটা থেকে বেআইনি ভাবে বালি মজুদ করে বালি পাচারের কাজ চলছে বলে অভিযোগ। এই সমস্ত ওয়েব্রীজ গুলোর ব্যবসা করার আদৌ কোনো বৈধ অনুমতি রয়েছে কিনা তা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেছেন এলাকার বহু মানুষ।
রীতিমত নদী থেকে চুরি করে বালি নিয়ে এসে কাঁটায় মজুদ করে সেই বালি বিক্রি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ। প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, যা কিনা কাঁটা কর্তৃপক্ষ করতেই পারে না। আর এই কারবার চালাচ্ছে মূলত স্থানীয় কিছু দুষ্কৃতি। সন্ধ্যার পর থেকেই এই দুটি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা কার্যত বালি মাফিয়াদের দখলে চলে যায় বলে স্থানীয়দের অধিকাংশের অভিযোগ। আরো মারাত্মক অভিযোগ, কেউ যাতে বুঝতে না পারে তার জন্য নদী থেকে আসা বালির ট্রাক্টর গুলো হেডলাইট পর্যন্ত না জ্বালিয়ে রাতে রাস্তা দিয়ে চলাচল করছে। ফলে যেকোনো মুহূর্তে বড়সড় দুর্ঘটনা বা প্রাণহানির আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসীরা।
স্থানীয় একাধিক গ্রামের মানুষের অভিযোগ, কোটি কোটি টাকা খরচ করে সরকার রাস্তা তৈরি করে দিলেও, প্রতিদিন শয়ে শয়ে বালির ট্রাক্টরের দাপটে ইতিমধ্যেই রাস্তার হাল খারাপ হতে শুরু করেছে। একদিকে যেমন বৈধ বালি ঘাট গুলো থেকে প্রতিদিন ১০চাকা, ১২চাকা, ১৬ চাকা কয়েকশো বালির ডাম্পার এই রাস্তাগুলো দিয়ে যাতায়াত করে, এরই পাশাপাশি বেআইনি বালি বোঝাই ট্রাক্টরের দাপটে রাস্তার হাল খারাপ হতে বসেছে বলে স্থানীয়দের দাবি। পাশাপাশি এই দুই রাস্তা দিয়ে নিত্য যাতায়াতকারী স্কুল পড়ুয়া থেকে সাধারণ মানুষ বালির গাড়ির অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে উঠেছে।
অভিযোগ, মূল রাস্তার ধারেই কাঁটা গুলো তৈরি হওয়ায় রাস্তা জুড়ে বালিতে ভর্তি হয়ে থাকছে। ফলে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার আশঙ্কা বাড়ছে। একদিকে যেমন আদ্রাহাটি ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র, অন্যদিকে পুরসা গ্রামীণ হাসপতালে রোগী নিয়ে যাতায়াতের ক্ষেত্রেও ব্যাপক সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে এই বালির গাড়ির বারবারন্তের জন্য বলে অভিযোগ। স্থানীয়দের দাবি, অবিলম্বে গলসি জুড়ে গজিয়ে ওঠা বেআইনি কাঁটা গুলোর (weigh bridge) বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিক পুলিশ ও প্রশাসন।