সৌরীশ দে,বর্ধমান: বর্ধমান জেলার নানান প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে বহু ঐতিহাসিক ঐতিহ্য। তাদের মধ্যে কিছুর সংস্কার করে টিকিয়ে রাখা হলেও অনেক হেরিটেজ স্থান বা বস্তু আজও অনাদরে, অবহেলিত অব্যবস্থায় পড়ে রয়েছে। আর সেই সমস্ত হেরিটেজ কে কিভাবে টিকিয়ে রাখা যায় সেই বিষয়ে একটি কর্মশালার আয়োজন করল বর্ধমান হেরিটেজ অ্যাসোসিয়েশন। গত ৪ ডিসেম্বর (রবিবার) বর্ধমান হেরিটেজ অ্যাসোসিয়েশনের বার্ষিক সাধারণ সভা উপলক্ষে গুডস শেড রোডের একটি সভাকক্ষে এই কর্মশালার আয়োজন করা হয়। আলোচনার বিষয় ছিল ‘বর্ধমান জেলার হেরিটেজ।’
উক্ত কর্মশালায় প্রধান বক্তা হিসাবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট হেরিটেজ প্রেমী এবং প্রেমচন্দ্র তর্কবাগীশ -এর উত্তরপুরুষ বিশ্বনাথ চট্টোপাধ্যায়। এছাড়াও কর্মশালায় বক্তব্য রাখেন ড. যুগল মুখোপাধ্যায়, ড. সুদত্তা ব্যানার্জী, ড. প্রসেনজিৎ সরকার, প্রবীণ সাংবাদিক প্রবীর চট্টোপাধ্যায়, মধুসূদন চন্দ্র, সেখ সাজাহান, বিশিষ্ট ইতিহাস গবেষক সর্বজিৎ যশ প্রমুখ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।
আলোচনায় উঠে আসে বর্ধমান জেলার বিভিন্ন হেরিটেজ সমূহের সংস্কারের কথা। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সর্বজিৎ যশ বলেন, ‘ বর্ধমান হেরিটেজ অ্যাসোসিয়েশন বিভিন্ন বিষয়ে সাফল্য লাভ করেছে। যেমন লর্ড কার্জনের যে মূর্তিটি পূর্ত বিভাগের গোডাউনে পড়েছিল, সেটি সেখান থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের মিউজিয়ামে সংরক্ষিত করা হয়েছে, তাছাড়া বর্ধমানের বিশিষ্ট স্বাধীনতা সংগ্রামী বটুকেশ্বর দত্তের পৈতৃক নিবাসটি, যেটি খন্ডঘোষ থানার ওঁয়ারি গ্রামে অবস্থিত সেটি সংরক্ষিত করা গেছে। এছাড়াও মানকর গ্রামের তিনটি প্রাচীন মন্দির সংস্কারের কাজ করা গেছে।
আরো বেশ কিছু হেরিটেজ সংস্কারের প্রয়োজন আছে, যার মধ্যে অবশ্যই বর্ধমান শহরের রাজগঞ্জের মোহান্তঅস্থলটি বিশেষ সংস্কারের দাবি রাখে। এছাড়াও বর্ধমান জেলার বিভিন্ন হেরিটেজ বস্তু সংস্কারের ব্যাপারে তারা উদ্যোগ চালিয়ে যাচ্ছেন।’ আলোচনায় উঠে আসে প্রাচীন জনপদ বর্ধমানের বেশ কিছু হেরিটেজ বস্তু এমনকি ঐতিহাসিক ব্যক্তি সম্পর্কে বর্ধমানের মানুষের একটা অংশ এখনও ঠিকমতো অবগত নন। সাধারণ মানুষের অবগতির জন্য মাঝেমাঝে স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের হেরিটেজ স্থান সমূহে ভ্রমণ করতে নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজনীয়তার প্রসঙ্গেও আলোচনা হয় এদিন।
আলোচনা সভায় একটি বিষয়ে সকলেই একমত হন যে, হেরিটেজ সংস্কারের ব্যাপারে শুধু সরকারি উদ্যোগ নয়, সাধারণ মানুষের চিন্তাভাবনার পরিবর্তন দরকার। এব্যাপারে সাধারণ মানুষকেও সচেতন করার বিষয়ে নানান কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। না হলে একটা সময় ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যাবে বহু ঐতিহাসিক বিষয় ও বস্তু। তাই এ ব্যাপারে বর্ধমান হেরিটেজ অ্যাসোসিয়েশন কে আরও সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে।