মুঠো ফোনের ঘেরাটোপে ৮থেকে ৮০ – মুক্তি পেতে চলেছে বাংলা ছবি ‘যোগাযোগ’

Souris  Dey

Souris Dey

ফোকাস বেঙ্গল ওয়েব ডেস্ক: ইন্সট্রাগ্রাম ছাড়া কদিন থাকতে পারেন? ফেসবুকের অ্যাকাউন্ট যদি ডিলিট হয়ে যায়! পারবেন থাকতে? হোয়াটস্ অ্যাপ ছাড়া কিছুক্ষণের জন্যই মনে হয়না যে মাছকে জলের বাইরে তুলে দেওয়া হয়েছে! আসলে হাতের মুঠোফোন ছাড়া আজ কয়েক মুহূর্ত কাটানো যেন নিজেকে মহাকাশযান থেকে মহাশূন্যে ছুঁড়ে ফেলার মতোই। মোবাইল ফোন আজ সকালে ঘুম থেকে উঠে রাতে শুতে যাওয়ার পর্যন্ত ৮ থেকে ৮০-র একপ্রকার প্রাণভোমরা। সামাজিক মাধ্যম বা সোশ্যাল মিডিয়াতে এতো বেশি আমরা মশগুল হয়ে পড়েছি যে সামাজিকতা, বন্ধুত্ব, আত্মীয় পরিজন সবাই কেমন যেন দূরে সরে যাচ্ছে। মুখে আর কথা বলি না! শুধু আঙুলের ছোঁয়ায় ভাষার ব্যবহার আর ইমোজি দিয়ে মনের অভিব্যক্তি প্রকাশ!

বিজ্ঞাপন

উঠেই গেছে চিঠির আদান প্রদান। নতুন বছরের গ্রিটিংস কার্ডের গন্ধ! মাঠ ভুলতে বসেছে শৈশব থেকে যুব সমাজ। পড়ার ঠেকে চারজন একসঙ্গে বসে থাকলেও সঙ্গী সেই মুঠো ফোন। আবেগ প্রায় বিলুপ্তির পথে। আর ঠিক এই সময়েই বর্তমান সোশ্যাল মিডিয়ার রমরমার যুগে সমসাময়িক নানান প্রেক্ষাপট কে নিয়ে বাস্তবধর্মী এক সাহসী ছবি তৈরি করে আলোচনার কেন্দ্রে পরিচালক সম্মান রায়। খুব শীঘ্রই মুক্তি পেতে চলেছে পূর্ন দৈর্ঘ্যের বাংলা ছবি ‘যোগাযোগ’। এই ছবির পরিবেশনা করছে ভারতবর্ষের শীর্ষ মনস্তত্ত্ববিদদের সংগঠন Indian Psychiatric Society । যে ছবির মধ্যে দিয়ে পরিচালক ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন বর্তমান সমাজের মোবাইল ফোন নির্ভর বিভিন্ন প্রেক্ষাপট কে। এই ছবির মাধ্যমে উঠে আসবে সোশ্যাল সাইট-এর নানা দিক।

সম্মান রায় এর আগে বলিউডে, বিজ্ঞাপনে এবং বাংলার ওটিটি তে একাধিক কাজ করেছেন। এই ছবি নিয়ে তাঁর অভিমত, “সামাজিক মাধ্যমের বিভিন্ন দিক যেমন ধরুন এই সোশ্যাল সাইটের মাধ্যমে জড়িয়ে মানুষের ব্যক্তিগত নানান দিক, যাদের সামনে থেকে না দেখে শুধু ভার্চুয়াল যোগাযোগ করেই মানুষ অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে, যেমন ব্যাঙ্কিং হোক বা সম্পর্ক – অনেক ক্ষেত্রেই মানুষ আজ মোবাইল নির্ভরশীল। করোনা মহামারী আরো বেশি করে আমাদের শিকলবন্দি করে ফেলেছে মোবাইল স্ক্রিনে। আমরা খোলা আকাশ শেষ কবে দেখেছি! এই নেশা কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে, কিংবা আরো নানান দিক উঠে আসবে এই ছবিতে। 

তিনি বলেন,’যোগাযোগ’-এর কলাকুশলী থেকে সংগীত পরিচালক, একঝাঁক নতুন প্রতিভাকে এই ছবিতে দেখতে পাবেন দর্শক। যোগাযোগে মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন – সোহম গুপ্ত পট্টদার, ঋত্বিক পুরকাইত, আদৃতা দে, অন্বেষা মিত্র, ইন্দ্রাশীষ ঘোষ, হুসনে শাবনাম সহ আরো অনেকে। বাংলাছবির জগতে এই মুখ গুলো নতুন, অনেকেই থিয়েটার থেকে উঠে আসা। কেউ বা সিরিয়ালের পরিচিত মুখ। অভিনেতা ঋত্বিক পুরকাইত এর আগে কিছু বাংলা ছবিতে ছোটো ছোটো চরিত্রে অভিনয় করেছেন। এবার তিনি নামছেন বড়ো পর্দায়। এছাড়া যোগাযোগ-এর চিত্রপরিচালক শুভ সাহা, সঙ্গীত পরিচালক আদর দাস সকলেই নিজের সেরাটা দিয়েছেন এই ছবির জন্য।

এই ছবির কাহিনী, সম্পাদনা ও পরিচালনা করেছেন সম্মান রায়। ছবিটির পাশে দাঁড়িয়েছে ইন্ডিয়ান সাইকিয়াট্রিক সোসাইটি (Indian Psychiatric Society)। পরিচালক সম্মান ‘যোগাযোগ’ নিয়ে খুব আশাবাদী। ছবির কাজ শুরু হয় ২০২০ এর মাঝামাঝি সময়ে। সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে তৈরি এই ছবিটি বানানোর সময় অনেক বাধা বিঘ্নের সম্মুখীন হতে হয় এই ছবির পুরো টিমকে। কারণ মহামারীর সময় লকডাউনের মধ্যে অনেক কষ্টে শুটিংয়ের কাজ হয়েছিলো। বহুবার শুটিং বন্ধ হয়েছিল। বাংলা ছবিতে প্রযোজকরা নতুন পরিচালকদের উপর ভরসা রাখলে অনেক ভালো বাংলা ছবি বানানো যেতে পারে বলে তার মত। যদি ‘যোগাযোগ’ নিজেদের উদ্যোগে বানানো সিনেমা। এই ছবিতে চেনা ছকে নতুন গল্পের স্বাদ পাবেন দর্শকরা। কারণ বর্তমান সময়ে ছোটদের পড়াশোনা থেকে যুবসমাজের খেলার মাঠ, অফিস লাইফ কিংবা দাম্পত্য জীবন কিম্বা বার্ধক্যর একাকিত্বে সবটাতেই কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়া ঢুকে গেছে। সবার জীবনের সঙ্গে জুড়ে থাকা এই গল্পগুলোকেই পর্দায় আনছেন পরিচালক সম্মান রায়।

যোগাযোগ মানুষকে ভাবিয়ে তুলবে, কিছু প্রশ্নের সম্মুখীন করবে, আদৌ কি আমরা সামাজিক! নাকি যন্ত্রের মাধ্যমে ‘সামাজিক মাধ্যমের’ মধ্যে ডুবে আছি! মুখে কথা নেই, আঙুলেই কথাবার্তা! প্রশ্নর উত্তর পেতে দেখতে হবে বাংলা ছবি যোগাযোগ। ছবির চিত্রগ্রহণ করেছেন শুভ সাহা এবং সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন আদর দাস। ছবির প্রথম গান “ব্যাকুলতা” মুক্তি পেতে চলেছে আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি, ভ্যালেন্টাইন্স ডে উপলক্ষে। আদরের সুর করা এই প্রেমের গানটি লিখেছেন দেবস্মিতা এবং কন্ঠ দিয়েছেন অমৃতা ও পরিচালক সম্মান নিজেই। গানটির মিউজিক ভিডিওটি দেখতে গেলে চোখ রাখতে হবে CINEMAANTEL ইউটিউব চ্যানেলে। ভিন্নধারার গল্প নিয়ে তৈরী হওয়া এই সিনেমা দর্শকদের ভালো লাগবে বলেই আশাবাদী কলাকুশলী থেকে পরিচালক সকলেই।

আরো পড়ুন